skip to content
Monday, July 1, 2024

skip to content
HomeআজকেAajke | র‍্যাগিং মেল চালু করুন

Aajke | র‍্যাগিং মেল চালু করুন

Follow Us :

প্রত্যেকে প্রত্যেকের দিকে আঙুল তুলছে, প্রত্যেকে নিজের ঘাড় থেকে মৃত্যুর দায় ফেলে দিয়ে অন্যের ঘাড়ে সে দায় চাপানোর চেষ্টা করেই চলেছেন। একদা দেশের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলে খ্যাত লালবাজারের বাঘা বাঘা গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে পড়েছেন। সব মিলিয়ে ৮ জন ছাত্র গ্রেফতার, এদের মধ্যে ডক্টরেট করছে এমন ছাত্রও আছে, এদের মধ্যে সংখ্যালঘু আছে, দলিত আছে, ব্রাহ্মণও আছে। না, এদের দেখরেখের দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের একজনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। যে ছেলেটি ক্লাস ওয়ান থেকে পড়াশুনো করে আজ মাস্টার্স করার পরে ডক্টরেট করছে তার শিক্ষাজীবনের একজন শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়নি, হবেও না, প্রশ্ন করা হবে না তাঁদেরকে যে কোন শিক্ষা দেওয়ার পরে তাঁদের এই মেধাবী ছাত্রটির মনে এক অপরাধী বাসা বেঁধেছে, পাকাপোক্ত বাসা। রাজ্যের প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করা হবে না যে কেন মৃত্যুর পরে এত তামাশা, এত সক্রিয়তা, যে সক্রিয়তার ১০ শতাংশ ঘটনা ঘটার আগে থাকলে, ঘটনাটাই ঘটত না, কেন ছিল না সেই সক্রিয়তা? প্রশ্ন করা হবে না ঘটনার পরেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান কেন হঠাৎ সমস্ত দায় চাপাবেন মার্কসবাদীদের উপরে? আবার ওই যাদবপুরেই মার্কসবাদ লেনিনবাদের কথা বলা অধ্যাপক, ছাত্র নেতা, সমর্থকদের প্রশ্ন কেন করা হবে না যে আপনাদের এই উন্নত জীবনবোধের চর্যায় কীভাবে, কোথায়, কতবড় ফাঁক ছিল, যে ফাঁক গলে মৃত্যু এসে পড়ে অনায়াসে? না, এসব প্রশ্নের উত্তর নেই। কীভাবে বন্ধ হবে র‍্যাগিং? তারই এক পদ্ধতি নিয়ে বিষয় আজকে, র‍্যাগিং মেল চালু করুন।

রাজ্যের সর্বত্র মানুষ এই মৃত্যুর কারণও কি বুঝতে পারবে? ছেলেরা কলেজে মারামারি করে মরেছে, এমন ঘটনা রাজ্যের কোথাও কোথাও ঘটেছে বইকী, কিন্তু র‍্যাগিং? তা কি ঘটে বহরমপুর কে এন কলেজে? বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে? ঘটেছে কখনও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমের কলেজে? ডায়মন্ড হারবার ফকিরচাঁদ কলেজে হয়েছে র‍্যাগিং? না, হয়নি। দুর্গাপুর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে হয়েছে, বোলপুরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে, শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজে অনেক জায়গাতেই হয়েছে, হয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও হয়েছে। হ্যাঁ, এটাই দস্তুর, সবচেয়ে মেধাবী যে ছাত্ররা পড়তে এল ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং তাদের প্রতিষ্ঠানে তারাই র‍্যাগিং করে, কম বা বেশি। কখনও কখনও তা মাত্রা ছাড়ায়, মৃত্যু হয়, রাজ্যজুড়ে তোলপাড় হয়, তারপর আরও বেশি রোমহর্ষক মৃত্যু খুন, দুর্ঘটনার আড়ালে তা হারিয়ে যায়। এই র‍্যাগিং প্রক্রিয়াতে জড়িত থাকে অসংখ্য ছাত্র, যারা অতীতে নিজেরাও র‍্যাগড হয়েছে, কম বা বেশি, তারাই নেতৃত্ব দেয়। বহু ছাত্র সেই একঘর মজায় মাতে, ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ওই তো, সব ব্যাটাকে ছেড়ে দিয়ে বেঁড়ে ব্যাটাকে ধর, আলু, বেগুন, উচ্ছে, পটলদের দিকে আঙুল তোলা হয়, তাদের ধরা হয়, তাদের কেউ কেউ কবিতা লিখেছে, লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছে, কেউ সামাজিক, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনে থেকেছে। সেসব সামনে আসে। মৃত ছাত্রের বাবা-মা দায়ী ছাত্রদের মৃত্যু কামনা করে। 

আরও পড়ুন: Aajke | নদী-পুকুর, অধীর, সেলিম ও মমতার গল্প 

র‍্যাগিংয়ে ফাঁসি তো ছেড়েই দিন, কেউ আজ পর্যন্ত হাজতবাসের সাজা পেয়েছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। কারণ র‍্যাগিং এক সামূহিক কাজ, তদন্তের পর খোলস ছাড়াতে গেলেই সেই সামূহিক চেহারাটা বেরিয়ে আসে। ভিড়ের বিচার হয় না, ভিড়কে শাস্তি দেওয়াও যায় না। মেধা এক বিচিত্র বস্তু, মেধার সঙ্গে জুড়ে থাকে খ্যাপামি, বদমাইসি, স্যাডিজম। মেধাবী এক নাট্যকার রাত দুটোয় ফোন করেন মহিলা নাট্যকর্মীদের, অসভ্য, নোংরা প্রস্তাব দেন, অশ্লীল কথা বলেন, তাঁর নাটকের জীবন বোধ নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। মেধাবী এক শিল্পী ছাত্রদের কাজ নিজের নামেই বিক্রি করে গিয়েছেন, এই চৌর্যবৃত্তিতে তাঁর কোনও আপত্তি ছিল না কোনওদিন। অত্যন্ত মেধাবী দিকদ্রষ্টা এক মানুষ তাঁর স্ত্রীকে অত্যাচার করেছেন দিনের পর দিন, বছরে দু’বার গর্ভধারণ করতে বাধ্য হয়েছেন সেই মহিলা, গর্ভপাতের পরে সামান্য সময়ও দেওয়া হয়নি তাঁকে। এক বিখ্যাত অত্যন্ত মেধাবী চলচ্চিত্রকার ধার নিয়ে ধার মেটানো তো দূরের কথা, অপমান করতেন যাঁরা তাঁর দুঃসময়ে টাকা ধার দিয়েছেন, তাঁদেরকে। না না, নাম খুঁজতে যাবেন না, এরকম বহু বহু আছে, আমি কেবল বিষয়ের উল্লেখ করলাম মাত্র। মেধার সঙ্গে অমানবিকতার এক ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে, তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ এই র‍্যাগিং, যত বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তত বেশি র‍্যাগিং, যত বেশি মেধাবী ছাত্রের জমায়েত, তত বেশি র‍্যাগিং। আমরা এই প্রশ্নই নিয়ে গিয়েছিলাম আমাদের দর্শকদের কাছে, কিছু মাস্টারমশাইদের কাছে, কেন কেবল তুলনামূলকভাবে মেধাবী ছাত্রদের প্রতিষ্ঠানেই র‍্যাগিংয়ের ঘটনা দেখা যায়? তাঁরা কী বলেছেন শুনে নিন।  

ফিরে আসি যাদবপুরেই, ছেলেটি মারা গিয়েছে, দেখা হোক, তদন্ত হোক, দোষীদের চিহ্নিত করা হোক। কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি জরুরি ঘটনা ঘটার আগেই কিছু ব্যবস্থা চালু করা। বিদেশের কিছু ইউনিভার্সিটিতে চালু আছে, র‍্যাগিং মেল পাঠানোর। তাতে একটা ই-মেল দেওয়া আছে, তার পাসওয়ার্ড জানানো আছে, ছাত্রদের ভর্তির সময়েই তা জানিয়ে দেওয়া হয়। আপনি সেই ই মেল থেকে নির্দিষ্ট একটি ই-মেইলে আপনার পরিচয় গোপন রেখেই আপনার উপরে র‍্যাগিং বা অন্য কারও উপরে র‍্যাগিংয়ের ঘটনার বিবরণ, কারা করছে ইত্যাদি জানাতে পারেন। সেই মেল দেখার জন্য ৩০ জনের এক কমিটি আছে, যাঁরা সেই মেল চেক করেন। হ্যাঁ ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোতে র‍্যাগিং মেল চালু হওয়ার পরে র‍্যাগিং কমেছে বা বন্ধও হয়েছে। সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি এরকম র‍্যাগিং মেল চালু করার কথা ভাববেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular