তিলোত্তমা ভেবো না, সেটিং হতে দেবো না— সিপিএম রাস্তায় স্লোগান দিচ্ছে। হ্যাঁ, খুব হিসেব করেই সিপিএম বললাম কারণ ওঁরা ছাড়া আর বিশেষ কেউ এই ইস্যুতে রাস্তায় নেই, একমাত্র ওনারাই বুঝেছেন ঘটি হারিয়েছে, কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। বাকি সংগঠন আর তাদের লোকজন এখন এটাকে প্রতীকী হিসেবে ধরে নিয়ে ১৪ অগাস্টের ১০০ দিন, ২৫০ দিন ইত্যাদি পালন করবেন। ওঁরাও জানেন যে মানুষ বুঝে ফেলেছে, অতএব আর বেশিদিন টানা যাবে না, সেদিন রানুছায়া মঞ্চতে দেখা গেল, ভিড় এখন ১০০-১৫০তে নেমে এসেছে। আর ওনারা যে খুব লাগাতার একটা ইস্যু নিয়েই থাকবেন তাও নয়। এরপরে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করবেন, এ রাজ্যের কৃষকদের নিয়ে একটা স্ট্রিট কর্নার মিছিল যাঁরা করেননি, করার মুরোদ নেই সেই তাঁরাই দিল্লির কৃষকদের নিয়ে মৌলালিতে জমায়েত করে ডোরিনা ক্রসিংয়ে আসবেন, সেই ১৪৬ বা ১৭৬ জনের মিছিল। তাও ভালো, ওনারা তো বিজেপি করছেন না, ভোটের রাজনীতিতেও সরাসরি যাচ্ছেন না, বেনামে তৃণমূলকে সমর্থন করার প্রোগ্রামটা অবশ্য আলাদা। আর এরকম একটা গ্যাপ পেলে ওনাদের সর্বহারা নেতা নিজের ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের কাজকর্মও একটু আধটু দেখাশোনা করে নিতে পারেন। কিন্তু সিপিএমকে তো পথেই থাকতে হবে, তো সেই তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন তিলোত্তমা ভেবো না, সেটিং হতে দেবো না। কিন্তু প্রশ্ন তো সেখানেই। কিসের সেটিং? কার সেটিং, কার কার মধ্যের সেটিং? সেটাই আজ আমাদের বিষয় আজকে, সিবিআই-এর সঙ্গে সেটিং সিপিএম-এর।
সিপিএম দীর্ঘদিন ধরেই এই সেটিংয়ের কথা বলে, দিদিভাই, মোদিভাই, বিজেমূল ইত্যাদি কথা তো আজ নয়, বহু পুরনো। অথচ মানুষ মানে জনতা জনার্দন তাঁদের এই সেটিংয়ের তত্ত্ব মেনে নেয়নি, মেনে নিচ্ছে না, বারবার এই তত্ত্ব মানুষ রিজেক্ট করছে। কিন্তু ধন্যি ছেলের অধ্যাবসায়, সেই একই কথাই বলেই চলেছে। একটা কথা ওনারা ভাবেন না যে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ওনারা রাস্তায় যা বলে চলেছেন তা মানুষ শুনছে না কেন? বা শুনলেও পাত্তা দিচ্ছে না কেন? এই বামপন্থীরা তেভাগার ডাক দিয়েছিল, মানুষ শুনেছিল, এই বামপন্থীরা ট্রাম বাস ভাড়াবৃদ্ধির আন্দোলনে ডাক দিয়েছিল, খাদ্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল, মানুষ দলে দলে রাস্তায় নেমে সমর্থন করেছে, লাঠি খেয়েছে, গুলি খেয়েছে। এই বামপন্থীরাই স্বৈরাচারী ইন্দিরা সরকার সিদ্ধার্থ সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে ভোট দিতে বলেছেন, মানুষ তাদের উৎখাত করে ছেড়েছে।
আরও পড়ুন: Aajke | ঘর ভেঙেছে, মুখ পুড়েছে, কাঁথির খোকাবাবুর
সব্বাই জানেন যে রক্ত দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হয় না, তবুও শুনেছেন সেই কথা, প্রতীকী লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন বক্রেশ্বরের জন্য। অর্থাৎ মানুষ সার যুক্তি বুঝেছেন, সমর্থন করেছেন। আর এবারে ওনাদের কথায় পাত্তাও দিচ্ছেন না, কারণ ওনারা বুঝেছেন যে এটা ফালতু বকওয়াস, এই সেটিংয়ের কথার কোনও ভিত্তিই নেই। মানুষ কী করে বুঝলেন? আচ্ছা ওনারা বলছেন যে সিবিআই আর তৃণমূলে সেটিং আছে, মানুষ শুনলেন, ওদিকে সেই মানুষই দেখলেন এ রাজ্যের আপাতত সংসদে একমাত্র সবেধন নীলমণি সিপিএম রাজ্যসভা সদস্য বিকাশ ভট্টাচার্য কলকাতা পুলিশের হাত থেকে আরজি কর হত্যা ধর্ষণ মামলা সিবিআই-এর হাতে দেওয়ার আবেদন করার পরেই বিচারপতির আদেশে মামলা কলকাতা পুলিশের হাত থেকে চলে যায় সিবিআই-এর হাতে। সিপিএম মামলা কলকাতা পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিবিআই-এর হাতে তুলে দিল, এটা জেনেও যে সিবিআই-এর সঙ্গে দিদিমণির সেটিং আছে, লোকে এই আষাঢ়ে গল্প বিশ্বাস করেনি। ধরুন নিউজ ক্লিক-এর মালিক সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে ইউএপিএ-তে ধরা হয়েছিল, যে আইনে ধরা হয়েছে উমর খালিদকে। এখন প্রবীর পুরকায়স্থ যিনি সিপিএম ঘনিষ্ঠ, তাঁকে মাস তিনেকের মধ্যে জামিন দেওয়া হল, উমর খালিদ কিন্তু এখনও জেলেই। পাঁচ বছরে পা দিল তাঁর জেল-জীবন। প্রবীর পুরকায়স্থ ছাড়া পাওয়ার পরে গণশক্তিতে বিরাট খবর এবং ছবি— গ্রেফতার বেআইনি, মুক্তি পেলেন প্রবীর পুরকায়স্থ। আচ্ছা এটা সেটিং নয়? এই সিবিআই নন্দীগ্রাম মামলাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারকে ক্লিনচিট দিয়েছিল, সেটা সিবিআই-এর সঙ্গে সেটিং নয়? সিঙ্গুরে সুহৃদ দত্ত, ধর্ষণ খুনের মামলা আসামি, সিবিআই শেষ পর্যন্ত চার্জশিটও দিতে পারেনি, তিনিও জামিন পেয়েছেন, সেটা সেটিং নয়? দিল্লিতে সঞ্জয় ঝাঁ থেকে মণীশ সিসোদিয়া বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেল থেকে ছাড়া পেলে গণশক্তিতে সেই বিজয় সংবাদ ছাপা হয়, সেটা সেটিং নয়? লালুপ্রসাদ যাদব জেল থেকে ছাড়া পান, সেটা সেটিং নয়? সেটিং কেবল এই সন্দীপ ঘোষ আর টালা থানার ওসির জামিনেই দেখতে পেলেন? হ্যাঁ, ওনারা সেই চোখ দিয়েই দেখছেন, কিন্তু পাবলিকের চোখে তো ন্যাবা হয়নি, তাঁরা বোঝেন, তাঁরা জানেন, কাজেই তাঁরা ওই সেটিং তত্ত্ব মানছেন না, মিছিলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও পাবলিক পাত্তাও দিচ্ছে না। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এই যে গত ১৫ বছর ধরে সিপিএম দিদি-মোদি সেটিং, তৃণমূল-বিজেপির সেটিং বলে চিৎকার করেই যাচ্ছে, মানুষ তাতে কান দিচ্ছে না কেন? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
মানুষ বোকা নয়, আপনার প্রয়োজন মতো জামিন হলে সেটা আইনের নির্দেশেই জামিন হল, আর সেটাই এই বাংলায় তৃণমূলের কেউ বা আপনাদের অপছন্দের কেউ জামিন পেলেই সেটাই সেটিং বলার মধ্যে যে কেবল এক চালাকি আছে, তা মানুষ বুঝে ফেলেছে। বরং আপনারা যতবার আপনাদের বিকাশবাবুকে দিয়ে বিভিন্ন মামলাতে সিবিআইকে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রেই আপনাদের কথামতোই সেই মামলা চলে গেছে সিবিআই-এর হাতে, তাতে মানুষের এটাও মনে হতেই পারে যে সিবিআই-এর সঙ্গে সিপিএম-এর এক ঘনিষ্ঠ সেটিং আছে, ওনাদের কথায় কান দিয়েই ওনারা মামলা শুরু করেন, জেলেও ঢুকিয়ে দেন কিন্তু ধরে রাখার মতো শক্তপোক্ত প্রমাণ না থাকায় ছেড়েও দিতে বাধ্য হন। পাবলিক যদি সেই সূত্র ধরে সিপিএম-সিবিআই সেটিংয়ের কথা বলেন, তাহলে কি ভুল করবেন?