Tuesday, July 1, 2025
HomeScrollAajke | ধর্ষণ হয়েছে, তাই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই?
Aajke

Aajke | ধর্ষণ হয়েছে, তাই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই?

ক্ষমতাসীন তৃণমূল দল বা প্রশাসন এই জানোয়ারদের আড়াল না করতে পারে

Follow Us :

আরজি করের পরে আবার কসবা ল কলেজের ধর্ষণ নিয়ে তুলকালাম চলছে। আমরা এর আগেও বহুবার বলেছি যে এ এক অদ্ভুত ব্যাপার। রাজ্যের গ্রামীণ এলাকাতে খেতমজুর, শ্রমিক, গরিব ঘরের মেয়েরা, স্কুল কলেজের ছাত্রীরা ধর্ষিতা হলে তা খবরের কাগজে পাঁচ কি সাতের পাতায় জায়গা পায়। কিন্তু তা কলকাতার কোনও হাসপাতালে, কলকাতার কোনও কলেজে হলেই যাবতীয় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের প্রতিবাদ আর মোমবাতি মিছিলই বলে দেয় আমাদের সমাজ এখনও এক রাজনৈতিক ইস্যু খুঁজছে, এক আর্থ সামাজিক রোগের বিরুদ্ধে লড়ছে না। এবং এখানেও দেখুন ধর্ষণের পরেই যাবতীয় দাবির মূল বক্তব্য হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চাই। দেশে প্রতি ১৬-১৭ মিনিটে একটা ধর্ষণ হয়, বাম-শাসিত রাজ্য তার ব্যতিক্রম নয়, বিজেপি-শাসিত রাজ্যে সংখ্যাটা খানিক বেশি, কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যেও কম নয়। তাহলে? তাহলে ধর্ষণ হলে তার প্রতিবাদ করা যাবে না? বরং উল্টোটা, বেশি বেশি করে প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিটা ধর্ষণ নিয়েই প্রতিবাদের বৃত্তটাকে বড় করতে হবে। আর সেই প্রতিবাদ কার বিরুদ্ধে হবে? সেই রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে, সেই রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার প্রথম কাজটা হল ওই ক্ষমতা থেকে ধর্ষণকে আলাদা করে দেওয়া। ক্ষমতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষজন যেন এই অপরাধ করে পার না পেয়ে যায়, সেটা দেখতে হবে। ক্ষমতার বৃত্তের ভেতরে বসে কোনও ক্ষমতাবান যেন ওই ধর্ষকের পাশে না এসে দাঁড়ায়, সেটা দেখতে হবে। কিন্তু আপাতত এ বঙ্গে যা কিছু ঘটে, ঘটছে বা ঘটবে সবক্ষেত্রেই আন্দোলনের একই দিশা, একই স্লোগান, দাবি এক দফা এক মমতার পদত্যাগ। হ্যাঁ, সেটাই আজকের বিষয় আজকে। ধর্ষণ হয়েছে, তাই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই?

ধরুন আরজি কর ধর্ষণ আর খুন, দু’ দিনের মধ্যে যে অপরাধীকে ধরা হয়েছিল। এতদিন ধরে এত তদন্তের পরেও অন্য কোনও প্রমাণ মেলেনি, অন্য কোনও ধর্ষকের অস্তিত্ব জানা যায়নি, গণধর্ষণের তত্ত্বকে খাড়া করা যায়নি। কিন্তু ধর্ষণ হলে এক প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে সেই সার সত্যটা তো বোঝা গেছে। গেছে বলেই আজ এই কসবা ধর্ষণ কাণ্ডে মেয়েটি বা তাঁর পরিবারের তরফে সাফ জানানো হয়েছে যে, আমরা কলকাতা পুলিশের কাজে এখনও পর্যন্ত খুশি, আমরা অন্য কোনও এজেন্সি মানে সিবিআই ইত্যাদি তদন্ত চাই না। দুই, এখনও পর্যন্ত মেডিক্যাল টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে কোনও কথা নেই, কোনও বিতর্ক নেই, মানে তা সঠিক পদ্ধতি মেনেই হয়েছে।

আরও পড়ুন: Aajke | পুরীর খাজা, দিঘার গজা, বাঙালি খুশি?

কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন যাঁরা মণিপুর বা হাথরসে যান না, যাঁরা বিলকিস বানোর সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনীয়তাও আছে বলে মনে করেন না, তাঁরা নামে কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশন হলেও এই বাংলাতেই তাঁদের যাবতীয় অনুসন্ধান চলে, সেই তাঁদের এই সস্তার রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন মেয়েটি, তার বাড়ির লোকজন। সবচেয়ে বড় কথা তাঁদের বিশ্বাস আছে যে কলকাতা পুলিশ অপরাধীদের শাস্তি দেবে, মানে প্রমাণ জড়ো করে আদালতে গিয়ে বিচারককে সাহায্য করবে। তাহলে এই দাবি এক দফা এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ স্লোগানের মানে কী? মানে একটাই বিষয়টাকে লঘু করে দেওয়া, শাসকদলকে পাল্টা বলার সুযোগ করে দেওয়া। মানে আজ যদি এই দাবিই ওঠে তাহলে উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারের তো এক দিনও ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়। গুজরাটে তো নরেন্দ্র মোদির দিকেই আঙুল উঠবে, হাথরস থেকে উন্নাও হয়ে গোধরা তো ধর্ষণের ইতিহাস। এই যে কসবাতে ধর্ষণ হয়েছে আর তার যা খবর আমরা এখনও পর্যন্ত পেয়েছি তাতে পরিষ্কার যে এক তৃণমূল ছত্রপরিষদের মাতব্বর এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সঙ্গে আরও দু’জন ছিল। আচ্ছে কোথাও কি সরকার প্রশাসন, পুলিশ বা তৃণমূল দল এই তিনটে ছেলেকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে? না, এখনও পর্যন্ত তেমন খবর নেই। উল্টে যে দু’জন তৃণমূল বিধায়ক বা সাংসদ এতটুকুও বেচাল কথা বলেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিয়েছে। হ্যাঁ, এটাই জরুরি, ধর্ষণ এক আর্থ-সামাজিক রোগ, এক আর্থ-সামাজিক সমস্যা যা এক্কেবারে শেষ করা এক দীর্ঘ সময়ের কাজ, সবচেয়ে উন্নত দেশেও ধর্ষণ আছে। কিন্তু ধর্ষকদের কেউ আড়াল করে না। হ্যাঁ সেটাই জরুরি। কাজেই দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ বলে বিষয়টাকে গুলিয়ে না দিয়ে বরং সোজাসুজিই বলুন, চোখ রাখুন যেন সরকার, ক্ষমতাসীন তৃণমূল দল বা প্রশাসন এই জানোয়ারদের আড়াল না করতে পারে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে কসবা ধর্ষণ কাণ্ডে আপনাদের কোথাও কি একবারের জন্যও মনে হয়েছে যে সরকার বা তৃণমূল দল ধর্ষণে অভিযুক্তদের আড়াল করছে বা তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন?

তার মানে কি সরকার বা শাসকদল তৃণমূলকে ক্লিনচিট দিতে হবে? একেবারেই নয়। এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে মূল যে অভিযুক্ত তার অপরাধের এক লম্বা ইতিহাস আছে। এরকম নোংরা এক জানোয়ারকে দলের নেতা বানাল কারা? কাদের প্রশ্রয়ে এমন জানোয়ারেরা এক রাজনৈতিক দলে ঠাঁই পায়, সেটার দায় তো তৃণমূলকেই নিতে হবে। হ্যাঁ, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকেই এই দায় নিতে হবে, কেন তাদের দলের নেতা কর্মীদের মধ্যেই এই পাশবিক প্রবৃত্তি জন্ম নেবে? দলের নেতা কর্মীদের দলে নেওয়ার আগে তার পরিবার আর সাধারণ খবরাখবরগুলো রাখলেই এই সমস্যা অনেকটা আটকানো যায়। আর ধর্ষণ হলেই মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ যেমন চাওয়া যায় না তেমনই ধর্ষণ হলেই সেই ধর্ষক যদি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী হন তাহলে সেই দলকে তার দায় নিতে হবে বইকী।

RELATED ARTICLES

Most Popular


Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39