skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollমধুবন্তীর সঙ্গে সাদা কালো | তিলোত্তমার বাবা-মা এবং দোষীর সাজা
Aditir Songe Sada Kalo

মধুবন্তীর সঙ্গে সাদা কালো | তিলোত্তমার বাবা-মা এবং দোষীর সাজা

এক তরুণী প্রাণ দিয়ে দেখাল মেয়েদের সুরক্ষা, সমাজে রাষ্ট্রে এমনি এমনি আসবে না, তার জন্য রাস্তায় নামতে হবে

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। এক মানুষের কাছে শুনেছিলাম, যিনি জ্ঞানত মিথ্যে কথা বলেন না, কাজেই মনে রেখেছি। ভরা গ্রীষ্মে খবর এসেছিল তৃপ্তি মিত্র মারা গেছেন। শোক নাট্য মহলের সর্বত্র। শম্ভু মিত্র অন্যত্র থাকতেন। তৃপ্তি মিত্রকে শেষযাত্রার জন্য সাজানো হচ্ছে। শোনা গেল শম্ভু মিত্র এসেছেন। তিনি মৌন, ঘরে ঢুকলেন, মুখ দেখেই বোঝা গেল তিনি ক’টা মুহূর্ত তাঁর প্রিয় মানুষের সঙ্গে একলা থাকতে চান। সবাই সরে গেল, দরজা বন্ধ হল। খানিক পরে তিনি বেরিয়ে গেলেন, আমাকে যিনি ঘটনার কথা বলছেন, তিনি বললেন ওনাকে দেখে মনে হচ্ছিল রক্তকরবীর সেই রাজা। হ্যাঁ এটাও শোকের এক বহিঃপ্রকাশ। আবার সেই কবে মালোপাড়ায় সিপিএম সমর্থক কর্মীদের খুন করা হয়েছিল, সারিবদ্ধ লাশের সামনে মহিলাদের সুর করে সেই বিলাপের মধ্যে একটা কথা আজও কানে বাজে, উনি কলাইয়ের ডাল খেতে ভালোবাসিতেন রে, সে আর এক উচ্চকিত শোক, কিন্তু তা ছিল নিখাদ প্রিয়জন হারানোর বেদনা। সবাই তো রবি ঠাকুর নজরুল হয়ে উঠতে পারেন না, সন্তানের শেষকৃত্য সেরেই কলম হাতে বসতে পারেন না, শোকে মুহ্যমান কথাটা তো সেই জন্যই আছে।

তাঁদের আত্মজাকে খুইয়ে তিলোত্তমার মা-বাবা কতটা অসহায়? একমাত্র সন্তানের এই নৃশংস মৃত্যু তাঁদের কতটা কষ্ট দিয়েছে, সেই হিমালয় প্রমাণ কষ্ট,সেই অতলান্তিক শূন্যতাকে পরিমাপ করা কি সম্ভব? সম্ভব নয়, কিন্তু সেই শোকের আবহে মানুষের এই নানান দোলাচল, নানান ভুল ধারণার জন্ম বা নানান অতিশয়োক্তি তো থাকে, সেটা সামলানোর দায় কাদের? যাঁরা পাশাপাশি রয়েছেন তাঁদের। তাঁদের বোঝাতে হয়, তাঁদের বলতে হয়, কেবল সান্ত্বনাই যথেষ্ট নয়, তাঁদেরকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করাও আদতে পরিবারের মানুষের কাজ। কিন্তু কোথাও যদি সেই পরিবারের সদস্যরা, সেই প্রতিবেশীরাই সেই মানুষগুলোকে কাজে লাগায় তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, তাহলে তাঁদের এই অসলগ্ন আচরণ আরও অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে, এ এক চরম নিষ্ঠুরতা।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | মমতা দিদি ব্যান্ড বজা দিয়া  

এবারে আসুন অন্যদিক থেকেও ভাবা যাক, বিচার করা যাক। আপনার মানসিক অবস্থার জন্য যেই দায়ী হোক, যত মানুষই সহানুভূতিশীল হোক, শেষমেশ এই দায়ভার তো আপনাকেই নিতে হবে। এবং সেই শোকের আবহে এক পিতামাতার অসংলগ্ন আচরণের বোঝা বাস্তবে কতদিন বইবে সমাজ। মানুষ তো মৃত্যুকে নিয়ে বসে থাকে না। যিনি আপনার শোকের সময়ে আপনার অনুভূতি ভাগ করে নিতে এসেছেন তাঁর ঘরেও তো জন্মদিন আছে, বিবাহবার্ষিকী আছে, বেড়ানোর প্ল্যান আছে, আছে তো আনন্দের নানান উপকরণ। কাজেই যে শোক আপনার একান্ত ব্যক্তিগত, তাকে ধারণ করতে না জানলে তা একটা সময়ে বোঝা হয়ে উঠতে বাধ্য। আপনার আত্মজা মারা গেছে, আপনার সন্তান মারা গেছে, সেই শোকই পৃথিবীর শেষ অনুভূতি হতে পারে না। কাজেই কোথাও সেই শোককে কাটিয়ে স্বাভাবিক হওয়াটা খুব জরুরি।

আরজি করের ঘটনা আমাদের কত কিছুই তো শেখাল, এক তরুণী প্রাণ দিয়ে দেখাল মেয়েদের সুরক্ষা, সমাজে রাষ্ট্রে এমনি এমনি আসবে না, তার জন্য রাস্তায় নামতে হবে। শেখাল এক বিকৃত রুচির মানুষ কত সহজেই এক ধর্ষক আর খুনি হয়ে উঠতে পারে। কাজেই আপনার আশেপাশে অনায়াসে বিকৃত রুচির পরিচয় দেয় যারা, যারা কথায় কথায় নারী অবমাননার পরিচয় দিতেই থাকে তাদের থামান, সেই মুহূর্তে থামান, সে আপনার প্রতিবেশী হতে পারে, আপনার সহকর্মী বা বসও হতেই পারে, কিন্তু তার এই আচরণের আজ বিরোধিতা না করলে আগামী দিনে আর এক পাপ, আর এক অন্যায়, আর এক ধর্ষণ খুন হতে পারে। এই ঘটনাই শেখাল মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যতই সুভদ্র হোক না কেন, সংগঠন হিসেবে তার হাজারগুণ অসভ্য, মিথ্যেবাদী আর ধান্দাবাজ হয়ে ওঠে, তারা মৃত্যুকে কাজে লাগায় চিতার আগুনে তাদের রাজনৈতিক রুটি সেঁকে নেওয়ার জন্য। এই ঘটনাই শেখাল যা দেখছেন তাই সত্যি, যা শুনছেন তাই সত্যি বলার আগে দশবার ভাবতে হবে, সত্যির গায়ে এই ঘোর কলিতে এত কাদা, এত আবরণ যে তার নাগাল পাওয়া এক সত্যিই কঠিন ব্যাপার। সেই সত্যিগুলোই শেখানোর জন্যে আমাদের সহনাগরিক ধর্ষিতা হয়েছেন, তাঁকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরে আমরা নিজেদেরকে কি একবারও প্রশ্ন করব যে যে সত্যিগুলো আমাদের সামনে এসে হাজির হল তার একটাও কি আমরা কাজে লাগাব? যাদি সত্যিই চান তাহলে নারী সুরক্ষার প্রতিটা ব্যাপারে আওয়াজ তুলুন, দল মত নির্বিশেষে, যদি সত্যিই চান তাহলে মিসোজিনির, নারী বিদ্বেষের প্রতিটা ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, মিথ্যে কথার আড়ালে প্রতিবাদী হয়ে ওঠার নাটককে থামান। না হলে এই সমাজে সব খোয়ানো অবসন্ন ক্লান্ত বাবা-মায়ের অসংলগ্ন আচরণ আরও বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular