যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। একই অঙ্গে এত রূপ দেখিনি তো আগে, এই গান সুধীন দাশগুপ্ত কি কংগ্রেস দলকে দেখে লিখেছিলেন? জানি না, কিন্তু আজ এই গান এক্কেবারে খাপে খাপ পঞ্চুর বাপ, ওই কংগ্রেস সম্বন্ধে। আজ তিনটে রূপের খবর দেব, স্থানিক রূপ। অর্থাৎ স্থান পরিবর্তনে কংগ্রেসের তিন অবস্থান। ধরুন জাতীয় কংগ্রেসের যার মাথায় বসে আছেন দুধুভাতু সভাপতি খাড়্গে সাহেব, তিনিও জানেন, সব্বাই জানে যে তিনি ডামি ক্যান্ডিডেট, কিন্তু ওই যে, বংশানুক্রমিক শাসন, মোদিজির কথা মেনে নিয়েই কংগ্রেসের কৌশল করি লড়াই করিবেরি লগে এই ব্যবস্থা করিচ্ছন্তি। তো সেই কংগ্রেস ভারতবর্ষে সিপিএম সমেত বাম দলগুলোকে তাদের জোটের অন্যতম দল মনে করে। সারা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জোটসঙ্গী। সীতারাম ইয়েচুরিকে তো রাহুল গান্ধীর মেন্টর গাইড ফিলোজফার বলা হত। যে কোনও মঞ্চে এসেই দুজনের কানে কানে কথা বলার প্রবণতাকে অনেকে বামপন্থী অভ্যুত্থানের ইঙ্গিত বলেও মনে করতেন। এবং বলে রাখা ভালো কলেজের অধিকাংশ প্রেমের মতো এই সম্পর্ক মোটেও একতরফা ছিল না, জাতীয় স্তরে বহুবার কংগ্রেস এবং রাহুল গান্ধীর ভূমিকা নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছে সিপিএমেরর বিপ্লবী মুখপত্রগুলো। রাজস্থানে কংগ্রেসের দৌলতে একটা আসন জুটেছে সিপিএমের, আপকে আসন না দিলেও এমনকী হরিয়ানাতেও কংগ্রেস একটা আসন ছেড়েছিল সিপিএমকে। অন্যদের সঙ্গে তো সেই সম্পর্ক ছিল না, ধরুন উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদব তৃণমূলকে একটা আসন দিয়েছিল বটে, কিন্তু সিপিআই বা সিপিএমকে? না দেয়নি। বা ধরুন হেমন্ত সোরেন, সিপিআইএমএল লিবারেশনকে খানচারেক আসন ছেড়েছিল, কিন্তু সিপিআই সিপিএমকে দেয়নি। সব মিলিয়ে সারা দেশে জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম-এর বা বামেদের বোঝাপড়া ভালো।
এবারে বাংলায় আসুন, এখানে কংগ্রেসের ডাকনাম ভ্যাবাচাকা কংগ্রেস হতেই পারে। ২০০৯-এ বামেদের সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে জোট হয়, রেজাল্টও ভালো হয়, সেই জোট ২০১১-তে ক্ষমতায়। কিন্তু পাগলের সাঁকো দেখলেই নাড়াতে ইচ্ছে করে, তো তেনারা সাঁকো নাড়ালেন এবং প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথা মতো খাদে পড়লেন। সেই খাদে পড়তে পড়তে পড়তে তাঁরা আপাতত বিধানসভায় শূন্য, আর লোকসভাতে এক। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা আমি যে পথ চিনি না, ওনারা চোখ বন্ধ করে ডিডি জাঙিয়া নয়, সিপিএম-এর উপরে ভরসা করেছিলেন। চোখ কি খুলেছে? নাকি আবার কৌশল জানি না, কিন্তু আবার স্টান্স বদলেছে, অবস্থান পরিবর্তন, সিপিএম-এর হাত ছেড়ে একলা চলো রে। কিন্তু কেন সিপিএম-এর হাত ধরেছিলেন, কেন ছেড়ে দিলেন, তা নিয়ে একটাও কথা? জানলে তো বলবেন, নিজেরাও জানেন না, অতএব বলেনওনি। আবার সিপিএম-এর হাত ধরবেন? আবার তৃণমূলের হাত ধরবেন? দেবা না জানন্তি কুতো মনুষ্য?
আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | কুণালের প্রতিবাদ, অভিষেকের আপত্তি
তবে দু’ ক্ষেত্রেই ক্ষতি বই লাভ তো নেই। সিপিএম-এর হাত ধরলে ভোট আরও কমবে, শূন্য থেকে এক হবে না, দলে বিদ্রোহ হবেই। তৃণমূলের হাত ধরলে দল চালাবেন মমতা, এই বাংলাতে কংগ্রেস দল বলে কিছুই থাকবে না। কাজেই ভ্যাবাচাকা বাংলা কংগ্রেসের নেতারা এখন বেঁচে নাও দু’দিন বই তো নয়, এই থিওরি মেনে বিধানসভাতে ঢোকার ছাড়পত্র নিতে ব্যস্ত। এবারে চলুন কেরালাতে, সে আর একঘর রগড়। সেখানে মূল লড়াই বিজেপি নয়, সিপিএম-এর সঙ্গে। কাজেই সেখানে কংগ্রেস নেতাদের স্থির ধারণা সিপিএম বিজেপির বি টিম, আর সিপিএম নেতাদের বিশ্বাস, কংগ্রেস বিজেপির বি টিম। মধ্যিখান থেকে বিজেপি বাড়ছে। অনেকটা বেড়ে গেলে সম্ভবত দুই দলের হুঁশ ফিরবে তখন সাম্প্রদায়িকতা রুখতে দুই দল হাত মেলাবে।
প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত যেখানে সিপিএম-এর সঙ্গে প্রবল লড়াই করেই কংগ্রেসকে টিকে থাকতে শুধু নয়, জান বাঁচানোর লড়াই চালাতে হয়, সে রাজ্যে সিপিএম যে বিজেপির চেয়েও খারাপ সেকথা বলতেও কংগ্রেস নেতাদের মুখে আটকাচ্ছে না। আগামী বিধানসভার নির্বাচন ২০২৬-এ এই বাংলার সঙ্গে, দুষ্টু লোকজন বলছে সেই নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবেই, বিভ্রান্তি কাটাতেই এই বাংলায় কংগ্রেস সিপিএম-এর হাত ছেড়েছে। বাংলায় দোস্তি আর কেরালাতে কুস্তি বোধহয় কেরালার মানুষ মেনে নেবে না, তাই তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গে জোট করবেন কি না জানি না, কিন্তু সিপিএম-এর সঙ্গে জোট করবেন না, এটা নিশ্চিত। তাঁরা কেরালাতে কামব্যাক চান। এবং মানুষকে ছাগলের তৃতীয় সন্তান মনে করেন, করেন বলেই একই দল, বাংলায় একরকম, কেরালাতে আর এক রকমের আর সর্বোপরি সারা দেশে অন্য আর এক রকম স্ট্যান্ড নিয়ে চলেছেন। একটি হল তৃণমূল, বাম ইত্যাদিদের নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের কংগ্রেস, একটা হল এই বাংলার ভ্যাবাচাকা কংগ্রেস আরেকটা হল বাম বিজেপির বিরোধী কংগ্রেস, তিন কংগ্রেসের কোনটাকে আপনি সমর্থন করেন লিখে জানান।