এটিকে মোহনবাগান–৩ আবাহনী লিমিটেড–১
(ডেভিড উইলিয়ামস-৩) (ড্যানিয়েল)
ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, দ্বিতীয়ার্দ্ধের কিছুটা সময় বাদ দিলে এটিকে মোহনবাগানের যা দাপট ছিল তাতে তারা আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত। আসলে আই এস এল-এ বাইশটা ম্যাচ খেলার পর জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা এখন যে জায়গায় আছে তাতে শ্রী লঙ্কার ব্লু স্টার কিংবা ঢাকার আবাহনীর পক্ষে তাদের দুরন্ত গতি থামানো সম্ভব নয়। তবে এ কথা বলতেই হবে শ্রী লঙ্কার টিমটার চেয়ে আবাহনী অনেক ভাল টিম। তার কারণ তাদের বিদেশিগুলো অনেক ভাল। বিশেষ করে কোস্তা রিকার বিশ্ব কাপার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস কিংবা ব্রাজিলের রাফায়েল অগুস্তো। কিন্তু মোহনবাগানের চার বিদেশির সম্মিলিত শক্তির সঙ্গে স্বদেশী ব্রিগেডের ম্যাচ জেতার মানসিকতা মিলে এখন সবুজ মেরুনের যা অবস্থা তাতে তাদেরকে হারানো বেশ কঠিন ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত তা হয়ওনি। হাসতে হাসতেই আবাহনী বধ করেছে জুয়ানের ছেলেরা। অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড উইলিয়ামসকে হ্যাটট্রিক করার জন্য ৮৫ মিনিট অবধি অপেক্ষা করতে হত না। বিরতির আগেই তিনি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে যেতে পারতেন যদি আবাহনীর গোলকিপার সোহেলকে একা পেয়েও গোল করতে পারতেন। হ্যাটট্রিক যখন করলেন উইলিয়ামস তখনও একই সিচুয়েশন। তবে এবার কিন্তু তিনি ভুল করেননি। এ ভাবেই মঙ্গলসন্ধ্যায় সল্ট লেক স্টেডিয়ামে এ এফ সি কাপের প্লে অফ ম্যাচে আবাহনী বিসর্জন সম্পূর্ণ করল এটিকে মোহনবাগান।
ঢাকার টিমটা একটু বেশিই নির্ভর করেছিল তাদের অধিনায়ক জীবনের উপর। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকেই চোট পেয়ে তিনি বসে যান কুড়ি মিনিটের মাথায়। তাঁর বদলি সোহেল রানা বিরতির পর গোল করার একটা সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করলেন। কিন্তু মাঝ মাঠে জীবন যে ফুটবলটা খেলেন তা তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। আসলে আবাহনী শুরু করেছিল মন্দাক্রান্তা ছন্দে। বিদেশের মাঠে থিতু হওয়ার আগেই তারা গোল খেয়ে যায়। লিস্টন কোলাসোর ফরোয়ার্ড পাস ধরে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে জনি কাউকো যে সেন্টারটা করলেন তা থেকে হালকা পুশে গোল করে ফেললেন উইলিয়ামস। ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ছয় মিনিট। এর পর থেকে মোহনবাগানই খেলাটা ধরে নেয়। মাঝ মাঠে আবাহনী নিজেদের মধ্যে কিছু পাস খেললেও বল পজেশনে মোহনবাগান অনেক এগিয়ে ছিল। ৬১-৩৯। জনি কাউকো, হুগো বুমোর পাশে দুই উইংয়ে মনবীর আর লিস্টন কোলাসো জান কয়লা করে দিয়েছিল আবাহনীর। মোহন ডিফেন্সে বল প্রায় আসেইনি। অমরিন্দর তখন শুধু দর্শক, গ্যালারির হাজার চল্লিশের মতো। এবং এ সবের মধ্যেই ৩০ মিনিটের মাথায় ডেভিড উইলিয়ামসের দ্বিতীয় গোল। এবার ডান দিক থেকে সেন্টার করেছিলেন রাইট ব্যাক প্রবীর দাস। আশ্চর্য হয়ে দেখতে হল, ইরানের ডিফেন্ডার সেন্টার ব্যাক মিলাদ শেখ সোলেইমানির নেতৃত্বে আবাহনীর ডিফেন্ডারদের মার্কিং এত খারাপ যে উইলিয়ামস যখন প্রবীরের পাস ধরে গোল করছেন তখন তাঁকে ট্যাকল করার জন্য ধারে কাছে কেউ নেই। এর একটু পরেই হ্যাটট্রিকটা হয়ে যায় উইলিয়ামসের। বক্সের মধ্যে গোলকিপার সোহেল কিন্তু ঠিক সময় ব্লক করেছিলেন অজি স্ট্রাইকারকে।
ডিফেন্সে সন্দেশ ঝিঙ্গন কিংবা অ্যাটাকে রয় কৃষ্ণকে ছাড়াই যখন বিরতির আগে ম্যাচ প্রায় পকেটে পুড়ে ফেলেছিল মোহনবাগান তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয়ার্দ্ধের দশ মিনিটের পর থেকে ম্যাচের রাশ নিজেদের পায়ে নিয়ে নেয় পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমসের ছেলেরা। মাঝ মাঠে রাফায়েল এবং ড্যানিয়েলের উজ্জীবিত ভূমিকায় তখন ম্লান হুগো বুমো-জনি কাউকোরা। একা লড়ছেন দীপক ট্যাংরি। কিন্তু হঠাৎই রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতো গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠল আবাহনী। দূর থেকে কয়েকটা শটে অমরিন্দরকে পরীক্ষা করার পর তারা বক্সের মধ্যে আবাধে বিচরণ করতে শুরু করল। তিরি কিংবা প্রীতম কোটালকে তখন লাগছিল শিক্ষানবিশের মতো। এবং এই স্পেলেই গোলটা করে ফেলল আবাহনী। মাঝ মাঠে জুয়েল রানা এবং রাফায়েলের সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করতে করতে ড্যানিয়েল ঢুকে পড়লেন বক্সের মধ্যে। তার পর ডান দিকে দুর্দান্ত ভলিতে অমরিন্দর কাৎ হয়ে গেলেন। বেশ ভাল গোল।
৬১ মিনিটের এই গোলটাই আবার সম্বিৎ ফিরিয়ে আনল বাগানিদের। যেন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে তারা আবার ম্যাচের রাশ নিজেদের পায়ে নিয়ে নিলেন। এবং এই সময়ে একটার পর একটা আক্রমণে বিধ্বস্ত হতে শুরু করল আবাহনী। মনবীর, লিস্টনরা ভাল জায়গায় বল পেয়েও তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারলেন না। এমন কি শেষ দিকে নেমে কিয়ান নাসিরিও গোল পেতে পারতেন বলটা গোলে রাখতে পারলে। একটা ইনসাইড ড্রিবলে ছিটকে দিয়েছিলেন আবাহনী ডিফেন্সকে। অবশেষে ৮৫ মিনিটে হুগো বুমোর থ্রু পাস ধরে উইলিয়ামসের গোল। এবং গত বারের মতো এ বারও এ এফ সি কাপের গ্রুপ লিগে মোহনবাগান। এবার তাদের অপেক্ষা গোকুলম, বসুন্ধরা কিংস এবং মেজিয়াকে টপকে পরের রাউন্ডে যাওয়ার। এই পর্বের খেলা শুরু ১৮ মে। এবার মোহনবাগানের যা টিম তাতে তারা অনেক দূর গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।