এটিকে মোহনবাগান–২ বেঙ্গালুরু এফ সি–০
(লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং)
যে ম্যাচে দুর্দান্ত একটা গোল করলেন লিস্টন কোলাসো, সেই ম্যাচের সেরা হলেন সন্দেশ ঝিঙ্গন। ব্যাপারটা একটু গোলমেলে লাগছে কী? শুধু তো লিস্টন কোলাসোই নন, গোল তো করেছেন মনবীর সিং-ও। তাহলে ম্যাচের সেরা সন্দেশ কী করে হলেন? আসলে ম্যাচের ফলের সঙ্গে ম্যাচের গোটা নব্বই মিনিটের কোনও মিল নেই। সেই নব্বই মিনিট বলছে দু গোলে হারলেও বেঙ্গালুরু কিন্তু বিরতির পর মিনিট পনেরো বাদে সারাক্ষণই দাপিয়ে খেলেছে। তারা মোহনবাগানকে দারুণ চাপে রেখেছিল। কিন্তু মোহনবাগান ডিফেন্সের দুর্দান্ত কভারিংয়ের জন্য গোল করতে পারেনি। বাগানের চার ডিফেন্ডারই খুব ভাল খেলেছে। না হলে একেবারে শেষ দিকে অমরিন্দরের একটা চমৎকার সেভ-এর কথা বাদ দিলে বেঙ্গালুরু গোলের মুখ খুলতেই পারেনি। এবং এর পিছনে ছিল সন্দেশ ঝিঙ্গনের অসম্ভব ভাল খেলা। শূণ্যে অথবা জমিতে তাঁর কভারিং, ট্যাকলিং, হেডিং কিংবা ক্লিয়ারিং এত সুন্দর এবং নিখুঁত ছিল যে বেঙ্গালুরুর মারাত্মক ফরোয়ার্ড ক্লেটন ডিসিলভা গোল করা তো দূরের কথা, গোলের সুযোগও তৈরি করতে পারেনি। এবং এ সব নিয়েই মোহনবাগান আঠেরো ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে পৌছে গেল প্লে অফ-এ। তাদের সামনে এখন হায়দরাবাদ এবং জামশেদপুর। শেষ দুটো ম্যাচে বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে মোহনবাগানের প্লে অফ খেলা কেউ আটকাতে পারবে না।
রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় গোয়ার ফাতোরদায় নেহরু স্টেডিয়ামে মোহনবাগান-বেঙ্গালুরু ম্যাচটাকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট দাপটে খেলেছে বেঙ্গালুরু। মাঝ মাঠে তারা ধুলো উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সন্দেশদের ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন এত দুর্ভেদ্য ছিল যে গোলের মুখ খুলতে পারেনি। এর পর ছিল দু মিনিটের সংযুক্ত সময়। বক্সের ঠিক বাইরে লিস্টন কোলাসোকে ফাউল করলেন অ্যালান কোস্তা। লিস্টন নিজেই ফ্রি কিক নিলেন। এবং তাঁর ডান পায়ের শট দেওয়ালের উপর দিয়ে এক দম সরাসরি জালে। বেঙ্গালুরুর গোলে এদিন খেললেন লারা শর্মা। নিয়মিত গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর পরিবর্তে মাঠে নামেন তিনি। একটু নড়বড়ে ছিলেন। তবে লিস্টনের গোলটার জন্য তাঁকে দায়ী করা যাবে না। এ রকম গোল সচরাচর হয় না। লিস্টন এবারের লিগে দুর্দান্ত খেলছেন। আটখানা গোল হয়ে গেল তাঁর।
প্রথম ৪৭ মিনিটের এই ম্যাচ বিরতির পর প্রথম পনেরো মিনিটে একদম বদলে গেল। তখন মাঠে শুধু মোহনবাগান। সুনীল ছেত্রীরা তখন ম্যাচ থেকে উধাও। এই পনেরো মিনিটে মোহনবাগান অন্তত তিনটি গোল করতে পারত। ফাঁকা গোল পেয়েও লিস্টনের শট গোলে ঢুকল না। পোস্টে লেগে ফিরে এল। মনবীরও সামনে গোলকিপারকে পেয়েও বাইরে মারলেন। আর জনি কাউকো বলটা গোলে রাখতে পারলেন না। এই সময়েই বাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো হুগো বুমোকে তুলে নিয়ে নামালেন দীপক ট্যাংরিকে। আসলে বাগানের তিন মিডিফিল্ডার হুগো বুমো, কার্ল ম্যাকহিউ এবং জনি কাউকো–তিনজনই খুব বাজে খেললেন। না হলে বেঙ্গালুরু মাঝ মাঠ নিয়ন্ত্রণ করল কী করে।
ওই পনেরো মিনিটের পর আবার ম্যাচটা ধরল বেঙ্গালুরু। কিন্তু তারা গোলের মুখ দেখল না। উল্টে ৮৪ মিনিটে বেঙ্গালুরুর ডিফেন্সের লুজ ক্লিয়ারিং থেকে বল পেয়ে মনবীর বক্সের বাইরে থেকে গড়ানে শটে গোল করে ফেললেন। ম্যাচ ওখানেই শেষ। আসলে মোহনবাগান এবার ডিফেন্স এবং অ্যাটাক মিলিয়ে এত ভাল টিম এবং এত ভাল খেলছে যে মাঝ মাঠ ব্যর্থ ্লেও ডিফেন্স সামলে দিচ্ছে। আবার সারাক্ষণ চাপের মধ্যে কাটিয়ে একটা হাফ চান্স থেকে আ্যাটাক গোল করে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে টানা চোদ্দ ম্যাচ অপরাজিত থেকে গেল মোহনবাগান। তাও দলের প্রধান দুই স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসের সার্ভিস সেভাবে না পেয়েও। মোট ৩৬টা গোল হল মোহনবাগানের। এর মধ্যে চোদ্দ গোল করেছেন লিস্টন আর মনবীর। লিস্টনের আট গোলের পাশে মনবীরের ছটা গোলের কথাও বলতে হবে। তাই আশুতোষ মেহেতার মতো ডিফেন্ডারকে রাইট আউট খেলিয়েও হাসতে হাসতে ম্যাচ জিতে গেল মোহনবাগান। টিমের পারফরম্যান্সে ভেসে গেল কোচের ফাটকা খেলার ঝুঁকি।
প্লে অফ-এ মোহনবাগানের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হতে পারে হায়দরাবাদ, জামশেদপুর এবং মুম্বই। তিনটে টিমই ভাল খেলছে। কিন্তু এ বছর মোহনবাগানের সঙ্গে রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লাক। না হলে যে সব জায়গা থেকে মোহনবাগান গোল করে ম্যাচ ড্র করেছে বা জিতেছে তা সচরাচর হয় না। এখন দেখার এই ভাগ্যদেবী তাদের শেষ পর্যন্ত সহায় হয় কি না।