আবার সে এসেছে ফিরিয়া। ভারতীয় ফুটবলের মহার্ঘ্য ম্যাচ।
আজ, শনিবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে আই এস এল-এর ডার্বিতে এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হচ্ছে এস সি ইস্ট বেঙ্গল। এটা লাল হলুদের হোম ম্যাচ। কোভিডের জন্য গত বছরের মতো এ বছরও আই এস এল-এর গ্যালারি দর্শকহীন।
এবারের আই এস এল-এ ইস্ট বেঙ্গলের দ্বিতীয় ম্যাচই পড়ে গেছে মোহনবাগানের সঙ্গে। গত বার পড়েছিল প্রথম ম্যাচ। তবে এবার ইস্ট বেঙ্গল একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। তাতে তারা প্রথমে গোল করে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-১ করেছে জামশেদপুর এফ সি-র সঙ্গে। এটিকে-ও একটা ম্যাচ খেলেছে। তাতে তারা ৪-২ গোলে হারিয়েছে কেরালা ব্লাস্টার্সকে। আই এস এল-এর বিচারে দু দলই একটা করে ম্যাচ খেললেও আদতে ইস্ট বেঙ্গলের এটি দ্বিতীয় ম্যাচ হলেও মরসুমে মোহনবাগানের কিন্তু পঞ্চম ম্যাচ। কারণ ইতিমধ্যেই মোহনবাগান এ এফ সি কাপের চারটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। তাই মরসুমের প্রথম ডার্বিতে মাঠে নামার আগে তারা টিমটাকে অনেকটাই গুছিয়ে নিতে পেরেছে।
The team has to perform well collectively to win. We are not focusing on individuals. We are planning to stop the team as a whole. The boss gave his thoughts ahead of the big Kolkata Derby.
READ: https://t.co/bb8GzICPVF#SCEBATKMB #HeroISL #WeAreSCEB
— SC East Bengal (@sc_eastbengal) November 26, 2021
এমনিতেই তাদের সেট টিম। ডিফেন্সে প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, তিরি, কার্ল ম্যাকহিউ, মাঝ মাঠে প্রবীর দাস, মাইকেল সুসাইরাজ, লেনি রডরিগস এবং সামনের দিকে রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়াস, মনবীর সিং। সব মিলিয়ে প্রথম একাদশের জনা আট-নয় ফুটবলার গত মরসুম বা তার চেয়ে বেশি দিন খেলছেন বাগানের হয়ে। এদের সঙ্গে এবার গোলে অমরিন্দর সিং, মাঝ মাঠে হুগো বুমো এবং জনি কাউকো-র সঙ্গে ফরোয়ার্ড লাইনে লিস্টন কোলাসো যোগ দেওয়ায় মোহনবাগানের শক্তি দৃশ্যত অনেক বেড়ে গেছে। তবে গত বছরের রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী সন্দেশ ঝিঙ্গন দল ছেড়ে বিদেশে চলে যাওয়ায় বাগানের ডিফেন্স কিন্তু গত বারের মতো নিচ্ছিদ্র নয়। এই জায়গাটা কিন্তু প্রবীণ কোচ আন্তোনিও হাবাসকে বেশ চিন্তায় রেখে দিতে বাধ্য।
ইস্ট বেঙ্গল দলটা প্রায় পুরোটাই নতুন। কোচও নতুন। গত বছরের যে সাতজন বিদেশি খেলেছিলেন তাদের একজনও দলে নেই। নতুন বিদেশিরা সবে একটা ম্যাচ খেলেছেন। ভারতীয়দের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে রেখে দিতে পেরেছে ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু তারা খুব একটা দরের নয়। তবে ইস্ট বেঙ্গলের গোলকিপার পজিশনে অরিন্দম ভট্টাচার্য আসায় গত বছরের তুলনায় অনেক স্বস্তিতে লাল হলুদ শিবির। মোহনবাগানের নতুন দুই বিদেশি অর্থাৎ হুগো বুমো এবং জনি কাউকোর মধ্যে প্রথম ম্যাচে বুমোই চোখে পড়েছেন বেশি। দুটো গোল করেছেন, গোলের পাস বাড়িয়েছেন। পেয়েছেন ম্যাচের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতিও। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বুমো আই এস এল-এ নতুন নন। গত কয়েক বছর এই ফরাসি মিডিও মুম্বই সিটি এফ সি-র হয়ে খেলছেন। তাঁকে পেয়ে বাগানের শক্তি অনেকটাই বেড়ে গেছে। অপর বিদেশি ফিনল্যান্ডের হয়ে এ বছরের ইউরো কাপ খেলে আসা বিশালদেহী জনি কাউকোকে প্রথম ম্যাচে খুব একটা চোখে পড়েনি। ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে তিনি কেমন খেলেন তাই এখন দেখার।
হাবাস প্রথম ম্যাচে ৪-৩-৩ ছকে খেলেছেন। বুমো, কাউকোর সঙ্গে পরিশ্রমী ডিফেন্সিভ মিডিও লেনি রডরিগস। সামনে রয় কৃষ্ণ, মনবীর সিং-এর সঙ্গে লিস্টন কোলাসো। এফ সি গোয়া থেকে নিয়ে আসা এই কোলাসো লেফট উইংয়ে খুবই দক্ষ। প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়েছেন। রয় কৃষ্ণ এবং মনবীর সিংকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কৃষ্ণ তো গত বছরের দুটো ডার্বিতেই গোল করেছেন। প্রথম ডার্বিতে মনবীরের গোলটা এখনও চোখে লেগে আছে। সামনের দিকে গোল করার লোক অনেক বেশি মোহনবাগানের। তাদের মাঝ মাঠও বেশ পোক্ত। তুলনায় ইস্ট বেঙ্গলের ফরোয়ার্ড লাইনে ক্রোয়েশিয়ার আন্তোনিও পেরোসেভিচ প্রথম ম্যাচে নজর কেড়েছেন। তাঁর বাঁ পা-টা বেশ ভাল। টানা তিন-চারজনকে ড্রিবল করতে পারেন। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে গোল না পেলেও নজর কেড়েছেন। সেই তুলনায় নাইজিরিয়ার ড্যানিয়েল চিমা প্রথম ম্যাচে নিষ্প্রভ। চিমা নামটা শুনলে লাল হলুদ সমর্থকদের মনে একটা আলাদা অনুভূতি হয়। ডার্বিতে তিনি মোহনবাগানের জালে এত বল জড়িয়েছেন যে চিমা নামটা শোনার পর থেকে লাল হলুদ সমর্থকদের মধ্যে একটা প্রত্যাশার জন্ম হয়েছে। প্রথম ম্যাচে অবশ্য এই নতুন চিমা প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ডার্বিতে কী করেন তাই এখন দেখার।
Antonio Habas wants three points and nothing else ?
#ISL #KolkataDerby #JoyMohunBagan #SCEBATKMB
— GOAL India (@Goal_India) November 26, 2021
তবে মোহনবাগানকে যদি রুখতে হয়, ইস্ট বেঙ্গল মাঝ মাঠকে অনেক ভাল খেলতে হবে। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল মাঝ মাঠে কোনও বিদেশি ছিলেন না। চারজনই স্বদেশি। কিন্তু মোহনবাগান মাঝ মাঠ খুবই ভাল। ইস্ট বেঙ্গলের মাঝ মাঠে সৌরভ দাস, আংসুমানা, হেমন্তে এবং বিকাশ জাইরু খেলেছিলেন প্রথম ম্যাচে। পরের দিকে নেমেছিলেন জ্যাকিচাঁদ সিং এবং অমরজিৎ সিং। মাঝ মাঠ থেকে বুদ্ধি করে একটা লব করে জ্যাক তো গোল পেয়েই যাচ্ছিলেন। রাইট ব্যাক অঙ্কিত মুখার্জি ফিট না থাকায় মহম্মদ রফিককে খেলতে হয় সেই জায়গায়। শনিবার হয়তো অঙ্কিতকে পাওয়া যাবে। তাহলে মহম্মদ রফিক চলে আসবেন মাঝ মাঠে। কিন্তু তাতে কি মোহনবগানের মাঝ মাঠকে রোখা যাবে? যদি চারজন স্বদেশি নিয়ে ম্যানুয়েল দিয়াজ মোহনবাগান মাঝ মাঠকে রুখে দিতে পারেন তাহলে ম্যাচ কিন্তু ঢলে যেতে পারে ইস্ট বেঙ্গলের দিকে। ইস্ট বেঙ্গলের মাঝ মাঠেও বিদেশি প্লেয়ার আছে। নেদারল্যান্ডসের ড্যারেন সিডোয়েল এবং স্লোভেনিয়ার আমির ডেরিভিসেভিচ। এখন মাঝ মাঠে বিদেশি নামালে দিয়াজের টিমের ভারসাম্য বজায় রাখা মুশকিল হবে। কারণ ডিফেন্সে অস্ট্রেলিয়ার টমিস্লাভ মার্সেলা এবং ক্রোয়েশিয়ার ফ্রানিয়ো পর্চেকেই রেখে শুরু করেছিলেন দিয়াজ। এবং ইতালির লাজিও-র হয়ে খেলা ওই পর্চেই ব্যাক ভলিতে গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন টিমকে। শনিবার ওই দুজনকে ডিফেন্সে রেখে শুরু করার কথা ইস্ট বেঙ্গলের। প্রথম ম্যাচ অনুযায়ী এই দুই ডিফেন্ডার খারাপ নন। তবে লেফট ব্যাকে হীরা মণ্ডলকে একেবারেই ভাল লাগেনি। এই জায়গাটা কিন্তু ভাবাতে বাধ্য লাল হলুদ কোচকে। তবে তাঁর চিন্তার সব থেকে বড় জায়গা কিন্তু মাঝ মাঠ। মোহনবাগানের ফরোয়ার্ড লাইন যতই ভাল হোক, তাদের আসল শক্তি কিন্তু মাঝ মাঠে। এই মাঝ মাঠের জন্যই শনিবারের ডার্বিতে ইস্ট বেঙ্গলের চেয়ে একটু এগিয়ে মোহনবাগান।
তার মানে কি তারাই জিতবে? এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই। ডার্বির ইতিহাসে ফেভারিট টিমের পতন আমরা প্রচুর দেখেছি। একটা ভাল মুভমেন্ট, কি একটা ভাল থ্রু পাস কিংবা সেট পিস থেকে একটা ভাল ফ্রি কিক ম্যাচে রং বদলে দিতে পারে। তাছাড়া ম্যাচ উইনার মোহনবাগানে বেশি থাকলেও ইস্ট বেঙ্গলে কম নেই। আন্তোনিও পেরোসেভিচ কিংবা ড্যানিয়েল চিমা যে ম্যাচ উইনার হবেনা না তা কি হলফ করে বলা যায়? কারণ প্রথম ম্যাচে মোহনবাগান ডিফেন্সকে বেশ নড়বড়ে দেখিয়েছে। বিশেষ করে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে দীপক টেংরি এবং কার্ল ম্যাকহিউর মধ্যে কোনও বোঝাপড়া তৈরি হয়নি। ইস্ট বেঙ্গল এই ব্যাপারটাকে কাজে লাগাতে পারলে কিন্তু ম্যাচের ছবিটাই বদলে যাবে।