এবার থেকে ভার্চুয়াল ডিজিট্যাল অ্যাসেট যেমন বিটকয়েন বা ইথিরিয়ামের মতো ক্রিপ্টোকারেনসির লেনদেনের ওপর আয়কর ধার্য করার কথা জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। পাশাপাশি, খুব শীঘ্রই রেজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ডিজিটাল কারেন্সি লঞ্চের কথাও তাঁর বাজেট বক্তৃতায় জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ডিজিটাল কারেন্সি নিয়ে কোন পথে হাটতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার এই নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে নানা মুনির নানা মত ছিল। তৈরি হয়েছিল জল্পনা। ইতিমধ্যেই ক্রিপ্টোকারেনসিতে বিনিয়োগ করে ফেলেছেন অনেক ভারতীয়। তাই ছিল উদ্বেগও। মঙ্গলবারের বাজেট অধিবেশনে সেই সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই দু’টি ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
এবার থেকে ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেটের লেনদেনের ওপর ৩০% আয়কর ধার্য হবে জানান নির্মলা সীতারমণ। তবে ডিজিটাল অ্যাসেট বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও ক্ষতি হলে তা অন্য কোনও লেনদেন বা আয়ের ক্ষেত্রে দেখিয়ে বাড়তি কোনও সুবিধে পাওয়া যাবে না।
ভারতের ক্রিপ্টো মার্কেট সূত্রে খবর বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেনসিতে প্রায় দেড় থেকে দু কোটি ভারতীয় বিনিয়োগকারী রয়েছেন। সব মিলিয়ে এদের আনুমানিক ক্রিপ্টো হোল্ডিং রয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। তবে ভারতের ক্রিপ্টো মার্কেট নিয়ে সরকারী ভাবে কোনও তথ্যই নেই। চেনালিসিস নামের একটি ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২১-র জুন মাসে প্রায় উল্কাগতিতে উত্থান হয় দেশের ক্রিপ্টো মার্কেটের। এক ধাক্কায় প্রায় ৬৪১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায় এই ক্রিপ্টো মার্কেট।
এই ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট কি?
ফিন্যান্স বিল অনুযায়ী, এই ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেট হল এমন কোনও তথ্য বা কোড বা সংখ্যা কিংবা টোকেন(তবে কোনও ভারতীয় কিংবা বিদেশি মুদ্রা নয়) যা ক্রিপ্টোগ্র্যাফির মাধ্যমে জেনারেট করা হয়। পছন্দ মতো নাম দিয়ে, যে পরিমানের লেনদেন চলছে তার একটা ডিজিটাল রেপ্রেজেনটেশন রাখা, এমন মূল্য নির্ধারণ করা যা এক জনের থেকে অন্যের কাছে গেলে তা আর্থিক লেনদেনে কিংবা আবার বিনিয়োগে ব্যবহারযোগ্য। তবে শুধুমাত্র বিনিয়োগ করার কাজেই নয় বরং ইলেকট্রনিক ভাবে আর্থিক লেনদেন, বা অ্যাসেট হিসেবে কাছে রাখা কিংবা ব্যবসায় ব্যবহারযোগ্য।
ডিজিটাল কারেনসি আর ক্রিপ্টোকারেনসির মধ্যে পার্থক্য কোথায়
ডিজিটাল কারেনসি হল কেন্দ্রীভূত, অর্থাত এর লেনদেন সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় কোনও একটি সেন্ট্রালাইজড লোকেশন থেকে, যেমন ব্যাঙ্ক। অন্যদিকে এই ক্রিপ্টোকারেনসি হল বিকেন্দ্রীকৃত এবং এটা আলাদা আলাদা নেটওয়ার্কের মধ্যে কাজ করে। একটি বিশেষ নেটওয়ার্কের ক্রিপ্টোকারেনসি নিয়ন্ত্রিত হয় সেই নেটওয়ার্কের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর। আবার অনেক ক্ষেত্রে ইদানীং দেখা যাচ্ছে এমন অনেক ক্রিপ্টোকারেনসি আছে যা বিশেষ কোনও সংস্থায় কেন্দ্রীভূত এবং ওই প্রতিষ্ঠাতা সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডিজিটাল কারেনসির লেনদেন ক্ষেত্রে আপনি ওয়ালেটের ঠিকানা জানতে পারবেন না। শুরু থেকে ওই ওয়ালেটে কি লেনদেন হয়েছে তা জানা যাবে। ওয়ালেটের সঙ্গে যুক্ত বাদবাকি তথ্য কনফিডেনশিয়াল ও প্রাইভেট থাকবে। এদিকে যে নেটওয়ার্কে ক্রিপ্টোকারেনসির লেনদেন চলছে সেখানে প্রত্যেকেই সব রকম লেনদেন দেখতে পারবেন। নেটওয়ার্কে থাকা একটি অ্যাকাউন্টে থেকে কোন অ্যাকাউন্টে লেন দেন চলছে যারা ওই লেনদেনে অংশ নিচ্ছেন না তারাও জানতে পারবেন। পুরো রেভিনিউ স্ট্রিম একটি পাবলিক চেনের মধ্যে দিয়ে হয়- একে ব্লক চেন বলা হয়।
সহজ ভাষায়া ক্রিপ্টোকারেনসি চালনা হয় কম্পিউটার অ্যালগোরিদামের মাধ্যমে অন্যদিকে ডিজিটাল কারেনসি চালনা করা হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা।
ভার্চুয়াল ডিজিট্যাল অ্যাসেট ও আয়কর
১. ক্রিপ্টো কারেনসির লেনদেনের ক্ষেত্রে যে ৩০ শতাংশ আয়কর ধার্য করা হয়েছে তাতে আমানত অল্প না দীর্ঘ সময়ের তাতে আয়করে কোনও হের ফের হবে না । যেমন ইকুইটির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সময়ের হিসেবে আয়করও আলাদা আলাদা ধার্য করা হয় সেটা ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে হবে না।
২. বিশ্লেষকদের মতে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে আয়কর ধার্য অনেকটা লটারি, বা কোনও গেম শোয়ে পুরস্কার অর্থ ওপর যেভাবে আয়কর ধার্য হয় অনেকটা সেরকম।
৩. ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে যেমন ৩০ শতাংশ আয়কর বসবে তেমনই যদি উপহাক হিসেবেও ক্রিপ্টোকারেনসির ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রেও আয়কর ধার্য হবে। ক্রিপ্টোর সব রকম ট্রান্সফারে আয়কর ধার্য হবে। এমনকি এক ওয়ালেট থেকে অপর ওয়ালেটে ক্রিপ্টো রাখলেও আয়কর দিতে হবে। উপহারের ক্ষেত্রে প্রাপককে আয়কর দিতে হবে।
৪. ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনও লেনদেনে যদি কোন রকম লোকসান হয় সেক্ষেত্রে সেই লেনদেন বাবদ আয়করে কোনও সুবিধে পাওয়া হবে না। ৩০ শতাংশ হারে আয়কর বজায় থাকবে।
(ছবি সৌজন্য: Unsplash)