পুরুলিয়া: ভরা বসন্তে জঙ্গলে ঝরে যাওয়া শুকনো পাতা। আর সেখানেই হেঁটে চলেছে এক চিতাবাঘ। উত্তরবঙ্গের কোনও জঙ্গল নয়। নয় কোনও অভয়ারণ্য। একেবারে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা পুরুলিয়া বনবিভাগের কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটের জঙ্গলে বনদফতরের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে এই চিতাবাঘ। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ওই চিতাবাঘ ধরা দেওয়ার পর পুরুলিয়া বনবিভাগ বাংলা-ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল নিয়ে নানান তথ্য সংগ্রহ করে ওই বন্যপ্রাণের ছবি সহ অরণ্য ভবনে রিপোর্ট পাঠানো হয়। আর তারপরেই ওই জঙ্গল ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্য দিয়ে পুরুলিয়া বন বিভাগকে ‘ট্র্যাকস অ্যান্ড ট্রেল’-র নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য বন দফতর। পুরুলিয়ার ওই জঙ্গল ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে মিশে রয়েছে। পুরুলিয়া বনবিভাগকে বলা হয়েছে ‘ট্র্যাকস অ্যান্ড ট্রেল’ করার জন্য।
ওই বন্যপ্রাণের পায়ের ছাপ, তার শিকার, বিষ্ঠা, গতিবিধি, যাতায়াত, জল পান করার জায়গাকে সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। ফলে কোটশিলা বনাঞ্চল থেকে একেবারে নিয়ম করে রিপোর্ট নিচ্ছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। ফলে দোল-হোলির আগে পর্যটনের মরশুমে চাপ বেড়ে গিয়েছে বনদফতরের কর্মীদের।
বছর দু’য়েক ধরে পুরুলিয়ার এই বনাঞ্চলে একের পর এক গবাদি পশু প্রায় হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। তেমনই ছাগল, গাভী এমনকি মহিষেরও হাড়-কঙ্কাল দেহাবশেষ মিলছে ওই জঙ্গলে এলাকায়। টানা দু’বছর ধরে এরকম ঘটে যাওয়ার পর ক্যামেরায় চিতাবাঘের ছবি পাওয়ায় বনদফতর নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে এই বন্যপ্রাণের স্থায়ী বাসস্থানই হয়ে গিয়েছে সিমনি বিটের ওই জঙ্গল। শুধু একটি চিতাবাঘই নয় থাকতে পারে শাবকসহ একাধিক চিতাবাঘ। সিমনি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাস বেসরা বলেন, আমাদের গ্রামের গবাদি পশু ছাগল জঙ্গলে গিয়ে যখন বাড়ী ফেরে না তখন জঙ্গলে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় তার রক্তাত্ব দেহাবশেষ। হার, কঙ্কাল পড়ে থাকতে দেখা যায়, সেই থেকেই বোঝা যায় এখানে বাঘ রয়েছে।
আরও পড়ুন: Mirik Lake Shikara: কাশ্মীরের আমেজ বঙ্গে, এবার মিরিক লেকে চলবে শিকারা
জেলা বন দফতরের ডিএফও দেবাশিষ শর্মা বলেন, দুসপ্তাহ আগে কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটের জঙ্গলের আসে পাশের গ্রামের বাসিন্দাদের গবাদি পশুর মৃত্যুর খবর আসার পর সেখানে পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। তারপরেই সেখানে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপরই চিতাবাঘের ছবি ধরা পড়ে।
তিনি আরও বলেন, সিমনি বনাঞ্চলে সমৃদ্ধ হচ্ছে ফরেস্ট প্রোটেক্ট কমিটিগুলি। তারা ভালো কাজ করছে। এই এলাকায় একটি নয় আরও চিতাবাঘ থাকতে পারে। আমরা যেখানে নমুনা দেখতে পাব সেখানেই আমরা ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়ে দেখব। এই এলাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে কোটশিলা বনাঞ্চলের টাটুয়ারা গ্রামে ২০১৫ সালের ২০ জুন একটি চিতাবাঘ গ্রামে ঢুকে যায়। সেই চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে মারে গ্রামবাসীরা।