বাঁকুড়া : প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই গাড়ি ওভারলোড করে কয়লা পরিবহন। দেখেও কি দেখা না প্রশাসন? বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীরা। এই ওভারলোড রুখতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা।
আরও পড়ুন : ১০০ দিনের কাজে বাংলার সেরা জেলা বাঁকুড়া
বেশ কয়েকদিন ধরেই বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কখনও রাতে, কখনও ভোর রাতে আবার দিনে দুপুরেও ওভারলোডিং ঠেকাতে অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। স্বয়ং জেলাশাসককেও দেখা গিয়েছে অভিয়ানের নেতৃত্ব দিতে। অভিযানে একাধিক ওভারলোড গাড়ি ও গাড়ির বৈধ কাগজ না থাকায় তাদের আটক করে গাড়িগুলির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। শুধু জেলাশাসক নয়, মহকুমা শাসক থেকে বিডিও, ভূমি সংস্কার থেকে পরিবহন সব দফতরের আধিকারিকরা এগিয়ে এসেছেন এই অভিযানে যোগ দিতে। কিন্তু তারপরেও জেলা প্রশাসনের একেবারেই নাকের ডগায় শয়ে শয়ে ওভারলোডিং কয়লা পরিবহন থেমে নেই। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ওভারলোডিং কয়লা পরিবহন কিভাবে হচ্ছে তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। যেখানে জেলার অনান্য প্রান্তে ওভারলোডিং আটকাতে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের অতি সক্রিয়তার ছবি নজরে আসে, সেখানে বাঁকুড়া শহরের মধ্যেই ওভারলোডিং কয়লা পরিবহন আটকাতে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনকে, এমনটাই অভিযোগ এলাকার মানুষের। এদিকে নিয়মিত ওভারলোডিং নিয়ে শয়ে শয়ে কয়লার গাড়ির অবিরাম যাতায়াতের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সড়ক পথ। যার জেরে সাধারন মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই এবার রাস্তা সংস্কার ও ওভারলোডিং বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে সামিল হলেন এলাকার মানুষ।
আরও পড়ুন : পুজোর মুখে বাঁকুড়ার বাজার মাতাচ্ছে জঙ্গলি ছাতু
বাঁকুড়া স্টেশন লাগোয়া বেলগড়িয়া এলাকার রেকে কয়লা বোঝাইয়ের জন্য রয়েছে বিশেষ শেড। এই শেড থেকে প্রতিদিন কয়লা বোঝাই করে এক বা একাধিক রেক যায় বিভিন্ন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এই শেডে মূলত কয়লা আসে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের বাগুলি খোলামুখ কয়লা খনি থেকে। স্থানীয়দের দাবি, ক্ষমতার অতিরিক্ত কয়লা বোঝাই করে শতাধিক ডাম্পার দিনভর যাতায়াত করে ওই শেডে। অভিযোগ উঠেছে যে, কয়লা বোঝাই করে পরিবহনের সময় প্রায়শই ঘটে দুর্ঘটনা। ওভারলোডিং কয়লা পরিবহনের ফলে কার্যত ভেঙেচুরে গেছে বাঁকুড়া শহরের শেড সংলগ্ন সাধারণের ব্যবহার্য রাস্তাও। রাস্তার মাঝে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে এলাকার মানুষকে। দিনের পর দিন কয়লা সরবরাহকারীদের এই দাদাগিরির প্রতিবাদেই এবার বাঁকুড়া শহরের কেরানি বাঁধ সংলগ্ন এলাকার মানুষ নামলেন আন্দোলনে। মঙ্গলবার রাতে বেশ কিছু ওভারলোডেড কয়লা বোঝাই ডাম্পার আটকে চলে তুমুল বিক্ষোভ। স্থানীয়দের দাবি, বাঁকুড়ার জেলা প্রশাসন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বালি পরিবহনের ক্ষেত্রে ওভারলোডিং ঠেকাতে তৎপর হলেও কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে ওভারলোডিং ঠেকানোর বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। ওভারলোডিং কয়লা পরিবহনের ফলে এলাকার মানুষের ব্যবহার করা রাস্তা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যার ফল ভুগতে হচ্ছে এলাকার মানুষকে। ওভারলোডিং কয়লা পরিবহন বন্ধ না হলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন এলাকাবাসী। যে ডাম্পারে করে ওভারলোডিং হয়, সেই সব ডাম্পারের চালকরা ওভারলোডিংয়ের অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে। তাঁদের দাবি, পরিবহনকারী সংস্থার নির্দেশেই তাঁরা অতিরিক্ত পরিমাণ কয়লা পরিবহন করে। কিন্তু এই অতিরিক্ত পরিবহনের জন্য রাস্তাও খারাপ হয়ে পড়ছে। যার জেরে তাঁদের গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান চালকরা। ওভারলোডের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কয়লা পরিবহনকারী সংস্থা। তাদের যুক্তি, তাদের জন্য রাস্তা খারাপ হয়েছে, তাই তারাই এই রাস্তা সরিয়ে দেবে।