কলেজ পড়ুয়া সুরঙ্গমা বরাবরই একটু পোশাক সচেতন। ব্র্যান্ড তাকে রীতিমতো আকর্ষণ করে. আর দিদির বিয়ে বলে কথা। আবদার করে বসেছে যে দিদির বিয়েতে অনামিকা খান্না বা সব্যসাচীর শাড়ী পড়বে সে। নাহলে ফেসবুকে ছবি পোস্টানো পুরোটাই বৃথা।অন্যদিকে সদ্য ডাক্তারি পাস্ করেছেন অঙ্কিতা। ছাদনাতলায় বসতে চলেছেন সামনের মাসেই। হবু বরের জন্য ঠিক করেছেন শর্বরী দত্তর পাঞ্জাবি আর নিজের জন্য সব্যসাচী ছাড়া কারোর কথা নাকি ভাবতেই পারছেন না।কিন্তু সুরঙ্গমা, অঙ্কিতার মতো স্বপ্ন দেখা তরুণীদের অনেকেরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। সব্যর শাড়ী যেকোনো মধ্যবিত্তরা প্রভিডেন্ট ফান্ড এর সারাজীবনের সঞ্চয়। হাজার হোক, সব্যসাচী মানেই করিনা, রানী, অনুষ্কার কনের সাজের ছবি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। শুধু তাই নয়, সব্যসাচী আদৌ সময় পাবেন কি না। অর্ডার নেবেন কি না এসব হাজারো ঝামেলা তো আছেই। আর দাম শুরু মোটামুটি ৩ থেকে ৫ লক্ষ থেকে। ওঠেন মধ্যবিত্তরা সাধ আর সাধ্যের মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক যে।অতএব মুশকিল আসান পার্ক স্ট্রিট এর কিছু শাড়ীর দোকান। হরেক রকম শাড়ী বিক্রির সাথেই সাথেই একটা দারুন লাভজনক ব্যবসা শুরু করেছেন তারা। সব্যসাচী থেকে অনামিকা খান্না, শর্বরী দত্ত থেকে অনিতা ডোঙরে – খ্যাতনামা যে কোনো ডিসাইনার এর তৈরী করা শাড়ীর হুবহু নকল পেয়ে যাবেন এখানে। এমনকি সেই সব শাড়ীর ডিসাইন এতটাই নিখুঁত ভাবে নকল করা যে অনেক সময়ে ডিসাইনাররাই চমকে উঠেছেন। দোকানে ঢুকলেই আপনার চোখের সামনে চলে আসবে ক্যাটালগ। যেখানে আপনি পাবেন বলি অভিনেত্রীদের বিয়ের ছবি বা কোনো অনুষ্ঠানে তিনি যে শাড়ীটা পরে রয়েছেন। ক্যাটালগ দেখে আপনি মনস্থির করার পর আপনাকে অনুরোধ করা হবে অন্য একটি ঘরে যাওয়ার জন্য। একের পরে এক ‘ফার্স্ট কপি’। দাম মোটামুটি ২৫ হাজার শুরু। ডিসাইনার আর সেলেব্রিটির যুগলবন্দীতে দামের উর্দ্ধসীমা নির্ধারিত হয়।জনপ্রিয়তার নিরিখে সব্যসাচী – অনুষ্কার ৩ লক্ষ ছুঁয়েছে। এর পরেই রয়েছে সব্যসাচী তৈরী করিনার শাড়ী অথবা রানী মুখার্জীর বিয়ের শাড়ী। শর্বরী দত্তর কাঁথা স্টিচ এর শাড়ী আর পাঞ্জাবির সেট মোটামুটি ৫০ হাজার থেকে শুরু।আর এই নকল বাজারের বাড়বাড়ন্তে ডিসাইনারদের মাথায় হাত। একে তো নোটবদল আর ঠেলায় গনেশ জোগাড়। তার ওপর যদি নকল বাজারে এতো সস্তায় মেলে বহুমূল্য DESIGNERWEAR তবে তো সব্যসাচী, অনামিকা খান্নার ওয়ার্কশপে ঝাঁপ ফেলারও লোক .থাকবে না। অন্যদিকে শাড়ী বিক্রেতাদের যুক্তিও অকাট্য। তাদের কথায়, “যারা ডিসাইনারদের পোশাক কেনেন তারা কখনোই ফার্স্ট কপি কিনবে না। যাদের সাধ আছে, সাধ্য নেই তারাই এই ফার্স্ট কপি কেনেন। ফলে আমাদের জন্য ডিসাইনারদের ব্যবসার ক্ষতি হবার কোনো আশংকাই নেই। বরং আমরা তাদের সৃষ্টিকে অন্যভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।”
সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ।