Friday, June 13, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | কখনও মৌনিবাবা কখনও কেবল বকওয়াস    

Fourth Pillar | কখনও মৌনিবাবা কখনও কেবল বকওয়াস    

Follow Us :

যে বাচাল হয়, সে বাচালই হয়, প্রতিটা বিষয়ে অবান্তর কথা বলে, মদন মিত্র, দিগ্বিজয় সিং থেকে সম্বিত পাত্র, অমিত মালব্যদের আমরা জানি। আবার কম কথা বলার মানুষজনকে আমরা দেখেছি, মনমোহন সিং থেকে জ্যোতি বসু, ইন্দ্রজিৎ গুপ্তদের নাম এই তালিকায় রাখাই যায়। কিন্তু এঁরা হলেন সাধারণ মানুষ, যাঁদের একটাই মেজাজ, একটাই চেহারা। কিন্তু সমাজে ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিঃ হাইডদেরও পাওয়া যায়, দিনে এক রাতে এক, মনোবিজ্ঞানে একে বলা হয় স্প্লিট পারসোনালিটি, দ্বিখমণ্ডিত সত্তা। দেখা হওয়ার পরে বুঝলেন মানুষটি অত্যন্ত মার্জিত, কম কথা বলেন, ভদ্র মানুষ। জানা গেল তিনি ঘরে ফিরেই রোজ স্ত্রী সন্তানদের অকথ্য গালিগালাজ করেন, পেটান। ওই স্প্লিট পারসোনালিটি, দ্বিখণ্ডিত সত্তা। এক সত্তা অন্য সত্তার খবরই রাখে না। দিনের বেলায় যিনি মার্জিত ভদ্র ডাক্তার, রাতে তিনিই নৃশংস খুনি। এরকম হয়। আর এরকম যে হয় তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী। কখনও মৌনিবাবা, কোনও কথাই বলছেন না, তিনি কোনও এক নির্দিষ্ট বিষয়ে কী ভাবছেন, কী বলছেন জানাই যাবে না কারণ তিনি তখন মৌনি বাবা। অন্তত ওই নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে মৌনিবাবা। আর কখনও তিনি বলেই চলেছেন, বলেই চলেছেন, প্রত্যেক বিষয়ে, যা তিনি জানেন, যা তিনি জানেন না, তিনি বলে চলেছেন রাডার সায়েন্স নিয়ে, তিনি বলে চলেছেন অর্থনীতি নিয়ে, তিনি বলে চলেছেন ভাইরোলজি নিয়ে, তিনি বলে চলেছেন প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে। সেসব আজগুবি কথাবার্তা বলে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর কোনও ক্লান্তি নেই। প্রয়োজনীয় বিষয়, দেশের প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত, তিনি বললে দেশের মানুষের কাছে একটা মেসেজ যায়, মানুষ বুঝতে পারে কোন পথে চলতে হবে, অন্তত কোন পথে তিনি চলতে বলছেন। কিন্তু না, তিনি তখন মৌনিবাবা, কোনও প্রশ্ন নয়, কোনও উত্তর নয়, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না। 

এটা এক সাধারণ মানুষ হলে পাত্তাও দিতাম না, বড়জোর হাসতাম বা বলতাম কেউ ওনাকে সাইক্রিয়াটিস্ট-এর কাছে নিয়ে যাও। কিন্তু নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি তো কোনও আম আদমি নন, হরিদাস পাল বা সুকান্ত জানাও নন, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, কাজেই আমাদের অন্তত বোঝার চেষ্টা তো করা উচিত যে কেসটা একটা ক্লাসিকাল স্প্লিট পারসোনালিটির বিষয় কি না? আর সেটা বুঝতেই আমি কিছু ঘটনা, তথ্য হাজির করব, যা নিয়ে পরবর্তীতে নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ গবেষণা হওয়া উচিত। ধরুন উনি ওনার জন্ম তারিখ কেন দুটো, ওনার এডুকেশন সার্টিফিকেট নিয়ে, পুকুর থেকে মগরমচ্ছ ধরা নিয়ে, স্টেশনবিহীন প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি নিয়ে চুপ করে থাকেন। তাহলে তাঁর সেসব ব্যাপারে চুপ করে থাকাটা এখানে আলোচনার বিষয় নয়, ব্যক্তিগত বিষয়ে কেউ যদি নিজের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে বিব্রত হন, সে বিষয়ে কথা না বলতে চান, তাহলে সেটাকেই তো স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া উচিত। আপনি মিথ্যে বলেছেন, সে মিথ্যে ধরা পড়ে গেছে, এবার চেপে যাবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ধরুন নোটবন্দি নিয়ে, রাত ৮টায় তালি বাজিয়ে বলে গেলেন কালাধনকে উপর ‘বার’ করনা হ্যায়, কালা ধন ওয়াপস লানা হ্যায়। আপনার কথায় দেশসুদ্ধ আমজনতা ব্যাঙ্কে এটিএম-এ লাইন দিল, দেশের অর্থনীতি ভোগে গেল, মোদিজি সময় চাইলেন ৫০ দিন, তারপর? হীরন্ময় নীরবতা। অত্ত বকওয়াস শোনার পরে দেশের মানুষ তো জানতে চাইছিলেন কী হল সেই কালা ধনের, কতটা ওয়াপস এল। ততদিনে উনি ওনার আরেক সত্তায় ফিরে গেছেন, যেখানে উনি কোনও প্রশ্নের জবাবই দেবেন না। উনি তখন মৌনিবাবা। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মোদি সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়     

এরপর আবার অন্যান্য বহু বিষয় নিয়ে তাঁর মন কি বাত শুনেছি বা শুনতে বাধ্য হয়েছি। অসংখ্য বিষয়ে উনি বলেছেন, আবার কিছু বিষয়ে মৌন থেকেছেন। এরপর তিনি দেশের নাগরিক কারা তাই নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মানে ওনাকে, ওনার দলকে ভোট দিয়ে যারা ক্ষমতায় আনল, তারা সবাই নাগরিক তো? রাতের ঘুম চলে গেল হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রীর, দেশের নাগরিকরা যে নাগরিকই, সেটা খুঁজে বার করতে হবে তো। তাই নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হল, অর্ডিনান্স থেকে বিল হল। আসমুদ্রহিমাচল মানুষ রাস্তায় নামলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই প্রথম মানুষ এত জায়গায় পথে নামলেন হাতে সংবিধান নিয়ে, অর্থাৎ মানুষ এবার সংবিধানকেই হাতিয়ার করলেন, কাগজ নহি দিখায়েঙ্গে স্লোগান উঠল। তারপর থেকে এখনও মাঝেমধ্যে অমিত শাহ ক্রোনোলজি বোঝানোর চেষ্টা করছেন বটে কিন্তু না, সেই বিলকে কার্যকরী করার কোনও অপচেষ্টা তাঁরা করেননি। এবং এ নিয়ে আবার মোদিজি ফিরে গেছেন তাঁর মৌনিবাবার সত্তাতে, কোনও কথা নয়, কোনও প্রশ্নের জবাব নয়, সর্বক্ষণ কথা বলতে থাকা, সব্বাইকে থামিয়ে কথা বলতে থাকা মোদিজী এখন মৌন। করোনা কাল এল, আবার ছড়ালেন, দিয়া জ্বালাও, থালি বাজাও, কোনও প্রশ্ন না করেই ১০০ শতাংশ আনুগত্য দেখাতে এমনকী একদা অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান অমিতাভ বচ্চনও তালি বাজালেন। এসব নিয়ে প্রশ্ন করে লাভ নেই, কুসংস্কার নিয়ে দেশের প্রধানকে প্রশ্ন করতেও তো লজ্জা হয়। 
কিন্তু ওই মহামারির সময়েই তিনি তিনটে কৃষি বিল আনলেন এবং প্রায় কোনও আলোচনা না করেই পাশ করিয়ে নিলেন সংসদে। কৃষি বিল আইন হয়ে গেল। এরপর সারা দেশের সম্মিলিত প্রতিবাদ, কৃষকরা রাজপথে, ট্রাক্টর মিছিল, দিল্লি ঘিরে কৃষকদের বসে থাকা, প্রধানমন্ত্রী একটা কথাও বলেছেন? প্রধানমন্ত্রী কৃষক নেতাদের সঙ্গে বসেছেন? না, এই বিষয়ে তিনি আবার মৌনিবাবা বনে গিয়েছেন। সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছে এক কৃষিপ্রধান দেশের অন্নদাতারা রাস্তায়, তাঁদের গতিরোধ করতে সাঁজোয়া বাহিনী, কাঁটাতার, রাজপথে গজাল ঠোকা হচ্ছে। আন্দোলন চলল, মারা গেলেন সাতশোর বেশি কৃষক, তারপর এক সকালে দেশের প্রধানমন্ত্রী জানালেন, কৃষি আইন বাতিল করা হচ্ছে। তিনি জানিয়ে দিলেন ব্যস। কেন আনা হল? কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা হল না কেন? কেনই বা এখন বাতিল করা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রী কি দেশের মানুষকে জানালেন? না, কারণ সেই বাতিলের ঘোষণার পরে তিনি ঢুকে গেছেন নিজের মৌনিবাবা জগতে। যেখানে তিনি কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না, কোনও কথা বলবেন না। 

কথা বোলো না, কেউ শব্দ কোরো না, 
ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না।
একদা ঊষাকালে মজিয়া লীলাছলে, ভগবান বিশ্ব গড়িলেন
কালে কালে জীর্ণ হল, বাগানখানা শুকিয়ে এল
আর জমিদারি দেখতে পারেন না।
কথা বোলো না, কেউ শব্দ কোরো না, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন
গোলযোগ সইতে পারেন না। 

এ গান তো আমরা কবেই নরক গুলজার নাটকে শুনেছিলাম, এখব স্বচক্ষে দেখছি মাত্র। তিনি মৌন থাকেন, তখন কারও প্রশ্নের কোনও জবাব দেওয়ার দায় তাঁর নেই। কিছুদিন পরে আবার কথা বলা শুরু করেন, কী বলছেন, কেন বলছেন? কাকে বলছেন? সে সব খেয়াল করতেও তাঁর বয়েই গেছে। সেই নোটবন্দি হয়েছিল, তিহাড়ি সুসুধীর বা নবিকা কুমারেরা ২০০০ টাকায় চিপ আবিষ্কার করেছিলেন, স্যাটেলাইট লিঙ্কড চিপ, নোট জমা করে রাখলে খবর পেয়ে যাবে ইডি, ইনকাম ট্যাক্স। এবার সেই নোট ফিরিয়ে নেওয়া হল, কেন নেওয়া হল? তা নিয়ে আবার মোদিজি মৌন। দেশের বিরোধী দল জানতে চাইছে, পুলওয়ামায় হয়েছিলটা কী? কার গাফিলতিতে সেদিন ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল? ওই সময়ে কাশ্মীরের রাজ্যপাল ছিলেন সতপাল মালিক, তিনি যে সব তথ্য দিচ্ছেন তা কি ঠিক? উনি মৌন, একটা কথাও বলছেন না। দেশের সংসদে বিরোধীরা প্রশ্ন করছেন আদানি-মোদি সম্পর্ক নিয়ে, আদানি হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে, প্রধানমন্ত্রী ঝাড়া একঘণ্টা বললেন কিন্তু আদানির নামও নিলেন না, ও বিষয়ে তিনি মৌন। 
দেশ স্বাধীনতার পরে এই প্রথম একজন প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েছে যিনি আক্ষরিক অর্থেই সাংবাদিকদের ভয় করেন, একটু ট্যাঁরা, আউট অফ সিলেবাস প্রশ্ন এলেই উনি জল খেয়ে উঠে যান। ক্ষমতায় আসার পর থেকে, ২০১৪ থেকে একটা সংবাদ সম্মেলনের মুখোমুখিও তিনি হননি, তিনি প্রশ্নকে ভয় পান, নিজের ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে প্রসঙ্গ উঠে আসবে জেনেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না। আচ্ছা এসব যে বললাম, তা কি নতুন কিছু? না পৃথিবীসুদ্ধ লোক জানে। এবং এখানেই সমস্যা। ওনার আগামী আমেরিকা যাত্রা নিয়ে মানে মাদার অফ ডেমোক্র্যাসির ফাদার অফ পাওয়ারের আমেরিকা যাত্রা নিয়ে বিশাল কলরব উঠেছে, উনি কী কী খাবেন তাও আমাদের জানা হয়ে গেছে। ওখানের ভক্তকুল তৈরি হয়ে বসে আছেন, যাঁরা এদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে বসে আছেন, সেই তাঁরা মাদার অফ ডেমোক্র্যাসির ফাদার অফ পাওয়ারকে দেখার জন্য বসে আছেন। কিন্তু একটা খবর এসেছে আমাদের কাছে যে কেবল ওই ভক্তজনেরাই নয়, কিছু সাংবাদিকও নাকি বসে আছেন কিছু প্রশ্ন নিয়ে। খোদ আমেরিকার মাটিতে সাংবাদিক সম্মেলন এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, এবং এই নিয়ে চিন্তিত দু’ দেশের আধিকারিকরা, একটা মন্দের ভালো ফর্মুলা নাকি বের করা হয়েছে, মাত্র একটাই সংবাদ সম্মেলন হবে যেখানে কেবল বিদেশি সাংবাদিকদেরই প্রশ্ন করতে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সুবিধে হল, সেসব প্রশ্নের উত্তরে মোদিজি যা বলবেন, সেটাই মেনে নিতে হবে ওই বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের। কিন্তু সেখানেও কি যথেষ্ট দুষ্টু লোক নেই? তাঁরাও কি দু’ চারটে আউট অফ সিলেবাস প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন না? দিতেই পারেন। মোদিজি তখন তাঁর দ্বিতীয় সত্তাতেই ফিরে যাবেন, মৌনিবাবা বনে যাবেন। যাই হোক আসন্ন আমেরিকা সফরে মোদিজির ওই সাংবাদিক সম্মেলন দেখার জন্য আমরাও অধীর আগ্রহে বসে আছি। 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran | ইরানে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি অ্যাডভাইজরি ভারতীয় দূতাবাসের, কী কী বিষয় সতর্ক থাকতে হবে?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইসরায়েল যু/দ্ধ শুরু, এবার কী হবে? শুনুন জয়ন্ত ঘোষালের বিশ্লেষণ
00:00
Video thumbnail
Amit Shah | Air India | আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘ/টনা নিয়ে বড় মন্তব‍্য অমিত শাহর, কী বললেন শুনে নিন
00:00
Video thumbnail
Bangladesh | বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভা/ঙা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতের, কী পদক্ষেপ দিল্লির?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | বিগ ব্রেকিং, ইরানের বিরুদ্ধে যু/দ্ধ ঘোষণা ইজরায়েলের,কী জানালেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের হা/ম/লায় নি/হ/ত ইরানের সেনাপ্রধান
00:00
Video thumbnail
Air India | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘ/টনায় একমাত্র জীবিত ব্যক্তি প্রথম মুখ খুললেন ক‍্যমেরার সামনে
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের হা/ম/লার পর ইরানে কী অবস্থা? দেখুন ইরানি রিপোর্টারের কভারেজ
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | কলকাতা টিভির আভাসই সত‍্যি হল, শুরু ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, এবার কী করবে আমেরিকা?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানকে শে/ষ করতে ইজরায়েলের অপারেশন রাইজিং লায়ন, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00