Tuesday, June 10, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | দেশের কাজে ব্যস্ত মোদিজি ছুটি নেন না

Fourth Pillar | দেশের কাজে ব্যস্ত মোদিজি ছুটি নেন না

Follow Us :

কিছুদিন আগে এক উৎসাহী ফিচেল মানুষ রাইট টু ইনফর্মেশনের সাহায্য নিয়ে সরকারের দফতরের কাছে প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ভাই দামোদরদাস মোদিজি কি ছুটি নেন? মানে উনিও তো সেই অর্থে জনগণের টাকায় মাইনে পাওয়া এক রাজ কর্মচারী, তো তিনি কি ছুটি নেন? তো ওঁর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, না উনি একদিনের জন্যও ছুটি নেননি। পাগলের গো-বধে আনন্দ, কিন্তু ভক্তকুলের যে কীসে আনন্দ তা বোঝা ভারি কঠিন, ভক্তের দল আহা আহা, মরহব্বা মরহব্বা করে উঠল। দেখেছ, দেখো দেখো, দেশ অন্ত প্রাণ আমাদের চায়ওলা কাম চওকিদার কাম পরধানসেভক একদিনের জন্যও ছুটি নেননি। মোদিজির মাথায় নতুন পালক, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি কোনও ছুটিই নেন না। ওদিকে সেই ছোট্টবেলা থেকে পড়ে আসছি অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে মেকস জ্যাক অ্যা ডাল বয়। তো এতদিনে দেশবাসীর বড় অংশই তো বুঝে ফেলেছে উনি ডাল না চাল, সেকথা থাক। আমরা বরং দেশের প্রধানমন্ত্রীদের ইতিহাস খুঁজে দেখি, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে আর কেউ কি এমন আছেন যিনি ছুটি নেননি। তো খোঁজপত্তর নিলেই জানা যাবে, টেকনিক্যালি ওই এক রাজীব গান্ধী ছাড়া আর কোনও প্রধানমন্ত্রী এক দিনের জন্যও অফিসিয়াল লিভ নেননি, মানে যাকে বলে আনুষ্ঠানিক ছুটি নেননি। কিন্তু তাতে কী এসে যায়, আপাতত খবর তো একটাই, দেশ অন্ত প্রাণ মোদিজি গত ৯ বছর কোনও ছুটি নেননি। আচ্ছা, উনি কি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও ছুটি নিয়েছেন? না, খোঁজ করলে দেখা যাবে উনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও কোনও ছুটি নেননি। 

ধরুন আপনি কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন, আপনার মা থাকেন বরাহনগরে, আপনি ছুটি নিয়েই তো আপনার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মোদিজির মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য, তাও আবার আসার আগে বেশ কিছু টিভি ক্যামেরাম্যান ইত্যাদিকে সঙ্গে আনা, জাতীয় কর্তব্য পালন হচ্ছে, তার ছবি তুলে রাখা। আপনাকে ছুটি নিতে হবে, ওঁকে নয়। ধরুন এই পুজোর ছুটিতে একটু উত্তরাখণ্ডে জিম করবেট পার্ক দেখতে যাবেন, যদি এক আধটা মানুষখেকো বাঘ দেখা যায়, যা আপনি সেই কবে ম্যান ইটার অফ কুমায়ুনে পড়েছেন। এর জন্য ছুটি নিতে হবে, গ্যাঁটের পয়সা খরচ করে ট্রেন প্লেনের টিকিট কাটতে হবে, হোটেল ভাড়া করতে হবে। কিন্তু মোদিজির? বাঘ দেখা হল ন্যাশনাল ডিউটি, উনি সেই বাঘ দেখার জন্য আলাদা ড্রেস বানাবেন, পয়সা জোগাব আমরা, উনি নতুন গগলস কিনে, জুতো কিনে যাবেন কুনোর জঙ্গলে চিতা দেখতে। এটার জন্য ওঁকে ছুটি তো নিতেই হবে না কারণ এটা তো ওঁর রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। উনি ডিসকভারি চ্যানেলের শুটিং করবেন, সেটাও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। ওই করোনার সময় বাদ দিলে মাঝেমধ্যেই এরকম খবরও হয়েছে যে আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন। বিশ্বের হেন দেশ নেই যেখানে উনি যাননি, সেখানেও সেই চকচকে রংমিলান্তি জামাকাপড়, আমেরিকায় একরকম, নামিবিয়ায় এক রকম, মঙ্গোলিয়ার জামাকাপড় আবার আলাদা। ফ্রান্সের কাপড় তো আলাদা হতেই হবে। উনি সেসব দেশে যাবেন, ওঁর বন্ধু-বান্ধবদের ব্যবসা নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে, তাঁরা বরাত পাবেন, রাতে নৈশভোজ, এবং সবটাই ওই রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। 

আরও পড়ুন: সনাতন ধর্ম আর ভারতবর্ষ 

যদি বা দেশে থাকেন, তাহলে ওঁর মনপ্রাণ পড়ে থাকে নির্বাচনের ঘুঁটি সাজানোর দিকে। উনি নিজের দলের হয়ে মিউনিসিপালিটি থেকে বিধানসভা, লোকসভার নির্বাচনে প্রচারে আসবেন, সেটাও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। সক্কালে উঠে ময়ূর খাওয়ানো থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত প্লেনে ভ্রমণ, দিনে তিন বার পোশাক পাল্টানো, পকেটে ম ব্লাঁ পেন, চোখে কার্টিয়ের গগলস, গায়ে পোশাকের দাম শুনলে মাথা খারাপ হবে, কেন? কারণ উনি রাষ্ট্রীয় কর্তব্য করছেন, উনি ছুটি নেন না। ওঁর কথাতেই বলা যায়, হিপোক্রেসি কি ভি কোই সীমা হোতি হ্যায়। দেশ স্বাধীন হওয়া ইস্তক এরকম এক মেগালোম্যানিয়াক, নার্সিসাস মানুষ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হননি। না, প্রত্যেকেরই যে খুব সাধারণ জীবনযাপন ছিল, এমনও নয়। জওহরলাল নেহরুর বাবা মোতিলাল নেহরু ছিলেন সেই সময়ে ভারতবর্ষে অন্যতম নামকরা আইনজীবী, সাত টাকা সের দাদখানি চালের বাজারে একবার আদালতে গিয়ে সওয়াল করার জন্য তিনি ২১ হাজার টাকা নিতেন। সেই নেহরু জামাকাপড়ে ধোপদুরস্ত ছিলেন, তাঁর কিছু জামাকাপড় একবার, হ্যাঁ, মাত্র একবারই প্যারিস থেকে বানিয়ে, কাচিয়ে, ইস্তিরি করে আনা হয়েছিল, তা মিথ হয়ে গিয়েছে। উনি দামি সিগার খেতেন, চে গ্যেভারা এসে বেশ কয়েক বাক্স হাভানা সিগার দিয়েছিলেন, নেহরু তা পেয়ে খুব খুশিও হয়েছিলেন। কিন্তু এই জওহরলাল নেহরু ৯ বার প্রায় ৯ বছর ব্রিটিশ কারাগারে ছিলেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য, এটাও মাথায় রাখতে হবে। লালবাহাদুর শাস্ত্রী, শোনা যায় গোটা তিনেক জামাকাপড়েই কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটা জীবন। ইন্দিরা গান্ধীর শাড়ির বহর দেখে যে কোনও মহিলার হিংসে হওয়ার কথা কিন্তু খুব উগ্র সাজগোজ বা চোখে পড়ার মতো তা ছিল না, বরং শেষের দিকে অসম্ভব ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বলেই মনে হত। মোরারজি ভাই খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন, চরণ সিংয়ের টাকা খরচ হত বই কিনতে, অসম্ভব বই পড়ার নেশা ছিল এই জাঠ নেতার। আই কে গুজরাল কেতাদুরস্ত সাহেবি ছিলেন, ভি পি সিং তো মান্দার রাজা, কিন্তু তাঁর জীবনযাত্রাও খুব সাধারণ ছিল। চন্দ্রশেখর আগাগোড়া সমাজতন্ত্রী, সেরকমই ছিল তাঁর জীবনযাপন, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়িই ছিল ওঁর আইকন, দেবেগৌড়া সাদা ধুতি পাঞ্জাবি আর একটা তোয়ালে। বাজপেয়ী অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন কিন্তু খানপানে রুচি ছিল, খেতে খুব ভালোবাসতেন এবং সেটা নন ভেজ। লালকৃষ্ণ আদবানি আর উনি মাঝে মধ্যেই নাইট শোতে হিন্দি সিনেমা দেখতে যেতেন। নরসিমহা রাও প্রাজ্ঞ পণ্ডিত মানুষ, খুব সাধারণ জীবনযাত্রা, কিন্তু রাজনীতির কোনও ঘুঁটিই তিনি ফেলতে বাকি রাখেননি, সেই অর্থে প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে চাণক্য। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর পরে তেমন সাদাসিধে জীবনযাত্রা ছিল মনমোহন সিংহের এবং সেইরকম পান্ডিত্য। 

এর মধ্যে রাজীব গান্ধী, না ছিল রাজনীতির পাঠ, না ছিল রাজনৈতিক কলাকৌশলের বালাই। মুখ দেখলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করত, উনিই সেই বিরল প্রধানমন্ত্রী যিনি ছুটি নিয়েছিলেন, স্ত্রী পুত্র কন্যা সমেত বন্ধুদের নিয়ে লাক্ষাদ্বীপ বেড়াতে গিয়েছিলেন একবারই। তারপরে ধীরে ধীরে যখন এক রাজনৈতিক মানুষ হয়ে উঠলেন, সেই সময়েই তাঁকে হত্যা করা হল। এঁদের সঙ্গে বেমানান এক স্ট্রিট স্মার্ট অসম্ভব ইল ইনফর্মড, কম মেধার মানুষ হলেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, যার পরিচয় তিনি প্রতিদিনই দেন, এখন নতুন পালক, উনি ছুটি নেন না। মনে আছে সেই গান,  
দুঃখ যাবে কি?
দুঃখ যাবে কি?
বিরস বদনে রাজা ভাবে কি?
বলি যারে তারে
দিয়ে শাস্তি
রাজা কখনও সোয়াস্তি পাবে কি?
দুঃখ যাবে কি?
দুঃখ কীসে যায়?
দুঃখ কীসে যায়?
প্রাসাদেতে বন্দি রওয়া
বড় দায়।
একবার ত্যাজিয়ে সোনার গদি
রাজা মাঠে নেমে যদি
হাওয়া খায়!
তবে রাজা শান্তি পায়।
রাজা শান্তি পায়
শান্তি পায়।  

মোদিজিকে দেখলেই আমার এই কথাটাই মনে হয়। নিজের তৈরি করা এক অন্ধকূপে বন্ধ মানুষ, যিনি প্রতিটা মুহূর্তে দেশকে, দেশের মানুষকে, এমনকী নিজেকেও ফাঁকি দিচ্ছেন। একটা উদাহরণ তো সব্বার জানা, মোদিজির হিমালয়ের গুহার মধ্যে এক ধ্যানমগ্ন চেহারা তো সব্বার দেখা, এবং প্রত্যেকেই জানেন, ওনার সামনে নয় নয় করে গোটা ৭০-৮০ ক্যামেরা, ক্যামেরা পারসন দাঁড়িয়ে আছে, ফ্ল্যাস জ্বলছে মুহুর্মুহু। উনি নাকি ধ্যান করছেন, এরকম আত্মপ্রবঞ্চণা খুব কম দেখা যায়। আমাদের মনপ্রাণ দিয়ে এই ডিস্ট্রেসড সোল, এই দুঃখে থাকা আত্মাকে তার বন্ধন থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত। ওঁর ছুটি দরকার, হাল্লার রাজার মতো দু’ হাত তুলে ছুটি ছুটি বলে উনি খোলা মাঠের দিকে দৌড়বেন, সেটাই আমরা দেখতে চাই, দেশ দেখতে চায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Vladimir Putin | ইউক্রেন বাফার রাষ্ট্র জানিয়ে দিলেন পুতিন
00:00
Video thumbnail
Umar Khalid | তিহার জেল থেকে চিঠি লিখলেন উমর খালিদ, কী জানালেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
BJP | দ্বিধাবিভক্ত বিজেপি ২৬-র ভোটে কীরকম ফল করবে? জয়ন্ত ঘোষালের বিশ্লেষণ শুনুন
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | Kajal Sheikh | শুভেন্দুর মন্তব্যে চরম হুঁ/শিয়ারি কাজলের, কী বললেন?
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | TMC | কাজল আমার পা ধরে বসে থাকত, শুভেন্দুর মন্তব্যে প্রবল হইচই বীরভূম তৃণমূলে
00:00
Video thumbnail
Volodymyr Zelenskyy | দেশ ছেড়ে পালাতে চলেছেন জেলেনস্কি? কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Rekha Patra | BJP | সোমবার কী বললেন রেখা পাত্র? দেখুন কলকাতা টিভি EXCLUSIVE
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | দ্বিধাবিভক্ত বাংলায় ত্রিধাবিভক্ত বিজেপি
00:00
Video thumbnail
Politics | এইবার বিধানসভায় মমতা সেনার প্রশংসায়
04:02
Video thumbnail
Aajke | এক মুখ, চারখানা দল বিজেপি করছে টলমল
00:43