১১ রাউন্ড গণনার পরে কভি ধূপ কভি ছাঁও এর শেষে জানা গ্যালো ৪৩০৯ ভোটে তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়ের পক্ষে রায় গেছে। তিনিই রায়বাহাদুর, বাকি বিজেপির তাপসী রায় বা বাম কংগ্রেসের প্রার্থী ইশ্বর চন্দ্র রায়কে হার মেনে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। অবশ্য সি পিএম ক্যান্ডিডেট বেলা বাড়তেই হার মেনেই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন, তখন বেলা বারোটা বাজে। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী প্রতিটা রাউন্ডেই সামান্য করে এগোতে এগোতে শেষ দুটো রাউন্ডে সামান্য কম ভোট পেলেও মোটের ওপরে জিতেই গেলেন। দুটো বিষয় এখনই কানে আসছে, প্রথমটা হল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধূপগুড়িকে আলাদা মহকুমা করার ঘোষণা কে বেশ কিছু মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন, ওটা নাকি ছিল মাস্টারস্ট্রোক, নাহলে মিউনিসিপালিটি এলাকা থেকেই হেরে যেত তৃণমূল, এবং শেষ মূহুর্তে গতবারের হেরো তৃণমূল প্রার্থী মিতালী রায়ের দলবদল নাকি বিজেপি দলের র্যাঙ্ক অ্যান্ড ফাইল ভালভাবে নেয় নি, মিতালীকে দলে আনা নাকি ব্যুমেরাং হয়েছে। এ নিয়ে কাটা ছেঁড়া চলবে। তবে এই বাজারে বিজেপির কাছ থেকে উত্তরবঙ্গে ধূপগুড়ি ছিনিয়ে নিয়ে তৃণমূল নিজেদের শক্তিকে আরও সুদৃঢ় করল। ১৯৯১ পর্যন্ত এই আসন ছিল কমবেশি কংগ্রেসের কাছে, তারপর থেকে সিপিএম জিতে আসত এই আসন, এমন কি ২০১১ তেও জিতেছিল, ২০১৬তে তৃণমূল এই আসন সিপিএম এর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়, কিন্তু ২০২১ এ বিজেপির কাছে যায় এই আসন, বিজেপির বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যু পরে উপনির্বাচনে আসন আবার ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। কিন্তু এটা যদি কেবল ও তো উপনির্বাচনে শাসক দলই জেতে এমন এক সরল ব্যাখ্যা দিয়ে পার পাওয়া যেত তাহলে আলোচনার কিছুই থাকতো না, কিন্তু আছে, এই নির্বাচনের ফলাফলের অনেক পরতে অনেক কিছু আছে যা নিয়ে আলোচনা দরকার, বিষয় আজকে সেটাই, ধূপগুড়ি আমাদের কী জানালো?
প্যাকেজ।
প্রথম কথা হল নির্বাচন হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিয়ে, যা নিয়ে বিজেপি, সি পিএম, কংগ্রেসকেউ কোনও প্রশ্ন তোলে নি, কাজেই জেতার পরেই ও তো রিগিং, ও তো ভোট লুঠ ইত্যাদির মত কথা বলার জায়গা এখানে নেই। এটাও পরিস্কার হল যে তৃণমূলের উচ্চিংড়ে অতি উৎসাহী কর্মীদের হাতে পাইপগান নিয়ে দৌড়াদৌড়ী না করলেও আসন কিন্তু জিতবে তৃণমূল, জেতার কারণ আছে বলেই জিতবে, ঐ পাইপগানে জয় আসে না। দুনম্বর বিষয় হল ধারাবাহিকভাবেই বিজেপির ভোট কমছে, ৪৫.৬৫ থেকে কমে এবারে বিজেপিপেয়েছে ৪৪.২৩% ভোট। মানে উত্তর বঙ্গেও বিজেপিতে ভাটার টান লেগেছে। তিন নম্বর বিষয় হল অনন্ত মহারাজ আর তার রাজবংশী পরিচয় কোনও কাজে আসলো না, উনি এক শতাংশ ভোটও জূড়ে দিতে পারেন নি, কিন্তু এটা ঠিক যে ওনার জন্য, ওনার বাংলা ভাগ করার দাবীর জন্য দক্ষিণ বঙ্গে বিজেপির ভোট কমবে। মানে অনন্ত মহারাজ উত্তরবঙ্গে তেমনপ্রভাব দেখাতে পারলেন না, দক্ষিণবঙ্গে ওনার বিরোধিতা দক্ষিণ বঙ্গের বিজেপিই করবে। চার নম্বর হল সি পি এম, কত গভীর তাদের ক্ষয় রোগ, সেটাই দেখার, জামানত তো গতবারও গিয়েছিল, এবারও গেছে, এবারে ঘোষিত জোটের পরেও আগের বারের থেকে ১% ভোটও বাড়ে নি। আমরা এই আজকেতেই বলেছিলাম ধূপগুড়িতে ৪৬% এর মত ভোট পেয়ে জিতবে তৃণমূল, পেয়েছে ৪৬.২৮%, কিন্তু আমাদের ধারণা ছিল বাম কংগ্রেস আরও অনেক বেশি ভোট পাবে, অন্তত ১০/১১%, সেটা হয় নি। বামেদের ক্ষয়ের বহরটা দেখুন ২০০৬ এ ৪৯.২৯%, ২০১১ তে ৪২.২৫%, ২০১৬ তে ৩৪.২৬%, ২০২১ এ ৫.৭৩, এবারে কংগ্রেসের সঙ্গে ঘোষিত জোট করার পরে বাম কংগ্রেস প্রার্থীর ভোট ৬.৫২%। হতাশা বাড়বে বৈকি। ফেসবুকে দেখলাম সি পি এম সমর্থক লিখেছেন মানুষ টাকা নিয়ে ভোট দিলে আর কিই বা করার আছে? সেই সি পি এম সমর্থক যদি কেরালার দিকে তাকাতেন, তাহলে দেখতে পেতেন সেখানেও পুথুপল্লি তে প্যাত কংগ্রেস নেতা বিধায়ক ওমেন চন্ডি ২০২১ সালে ৪৮.০৮% ভোট পেয়েছিলেন যা এবারে ১৩.৩% বেড়ে ৬১.৩৮% হয়েছে আর সিপিএম এর ভোট কমেছে ৮.৭৩%। এখানে না সর্বত্র কমছে, ত্রিপুরার দুটো আসনেইজামানত গেছে কিন্তু ঐ আসনে যে ফেয়ার ইলেকশন হয় নি, সেটা অবশ্য একটা ফ্যাক্টর। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম, এই ধূপগুড়ির নির্বাচন এর ফলাফল, তৃণমূলের জেতা, বিজেপির হারা বা সিপিএম এর ভোট মাত্র ৬% এ আটকে যাওয়া রাজ্যের মানুষকে কী বলতে চাইল? শুনুন মানুষ কী বলেছেন।
আরও পড়ুন: মাইনে বাড়ল বিধায়ক মন্ত্রীদের
গোটা দেশের উপনির্বাচনের ছবি কিন্তু মোটের ওপরে বিজেপির বিরুদ্ধেই গেছে, ধুপগুড়ি আসন হারিয়েছে বিজেপি, উত্তর প্রদেশের ঘোষিতে রেকর্ড হার, ইন্ডিয়া জোটের ভোট বেড়েছে বিরাট ভাবে, ইন্ডিয়া জোট ঝাড়খন্ডে ডুমরি আসন ধরে রেখেছে, কেরালায় বিজেপির ভোট ৫%, জামানত জব্দই কেবল নয় ৩% ভোট কমেছে, বাগেশ্বরে আপ এর সমর্থন পেয়ে কংগ্রেস অরার্থী তার ভোট দ্বিগুণ করেছে, সব মিলিয়ে ইন্ডিয়া জোটের দিন ছিল আজ, আগামী রাজনৈতিক আসরে ইন্ডিয়ার দম বাড়ল, শরিক হিসেবে তৃণমূলের গুরুত্বও কি খানিক বাড়লো না?