skip to content
Saturday, July 27, 2024

skip to content
HomeআজকেAajke | এগজিট পোল আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার যে সামাজিক ক্ষত তৈরি...
Aajke

Aajke | এগজিট পোল আর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার যে সামাজিক ক্ষত তৈরি করছে তা মারাত্মক

পাবলিক? ভোগে যাক, মারামারিও করে মরুক, ওনাদের কী?

Follow Us :

সেই কবে ১৯৬০-এ রিচার্ড লেগহর্ন বলেছিলেন, আমরা ইনফরমেশন এজ-এ ঢুকে পড়েছি। প্রস্তর যুগ, তাম্র যুগ, লৌহ যুগ থেকে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের যুগ পার করে ইলেক্ট্রিক, ইলেকট্রনিক্স যুগও পেরিয়ে মানব সভ্যতা এখন এক ইনফরমেশন এজ, এক তথ্যভান্ডারের যুগে পৌঁছে গিয়েছে। ভারতে সে যুগ স্বভাবতই দেরি করে এসেছে, এসেছে রাজীব গান্ধীর সময়ে স্যাম পিত্রোদার নেতৃত্বে মোবাইল ফোন আনার সময় থেকে। তারপর হাজারো চ্যানেল, ফোর জি, ফাইভ জি, আপাতত সোশ্যাল মিডিয়া যাকে মানুষ তার বাপের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে। এবং এখানেই সমস্যা। ওই তো দেখ ইউটিউবে দেখাচ্ছে, ওই তো দেখ উইকিপিডিয়াতে লেখা আছে। যাঁরা এই কথা বলছেন তাঁদের অনেকের জানা থাকা সত্ত্বেও খেয়ালই করছেন না যে সেই ইউটিউবে যা বলা আছে তার উল্টোটা বলতে দু’ মিনিটও সময় লাগবে না, উইকিপিডিয়ার লেখা যে কেউ এডিট করতে পারে, নেটে যে কেউ যে কোনও তথ্য পুরে দিতে পারে যা সত্য, সঠিক হবেই এমন কোনও গ্যারান্টি নেই। কাজেই পৃথিবীজুড়ে সেই ইনফরমেশন গার্বেজ, যাকে বাংলাতে বলাই যায় ধাপার মাঠের মতো তথ্য আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে, সামাজিক রাজনৈতিক নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এগজিট পোল বা ইউটিউব নির্বাচন বিশ্লেষণের এক বিরাট অংশ হল সেই তথ্য আবর্জনা। ডেটা সার্ভে রাশি বিজ্ঞান, স্ট্যাটিসটিক্স-এর অঙ্গ, তার ব্যবহার বহু পুরনো ডঃ প্রশান্ত চন্দ্র মহালানাবিশকে নিয়ে জওহরলাল নেহরুর উদ্যোগে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্স ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছিল দেশের প্ল্যানিং কমিশনের বিভিন্ন ডেটা অ্যানালিসিসের জন্য। পরে এই ডেটা অ্যানালিসিস সরকারি উদ্যোগের বাইরে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংস্থা, বিভিন্ন শিল্পপতিরা ব্যবহার করতে শুরু করেন, একটা প্রডাক্ট সেটার চাহিদা কত? সেটা কোন ধরনের মানুষ কিনবেন? কত টাকার হলে কিনবেন, কত পরিমাণ কিনবেন থেকে কী রকম প্যাকেজিং থাকলে কিনবেন তাও এই ডেটা সার্ভেতে পাওয়া যায়। তারই এক চেহারা কিছু মানুষ আমাদের নির্বাচনের সময় এনে হাজির করল, যাকে আমরা এগজিট পোল বলেই জানি। কিন্তু সমস্যা হল ওই প্রডাক্টের ডেটা অ্যানালিসিস করার জন্য একটা কর্পোরেট হাউস বড় পরিমাণ টাকা খরচ করে, তারা সেই রেজাল্টও চায়। এবারে মিলল, সেবারে মিলল না এরকম তো হয় না, হলে সেই সংস্থা আর কাজ পায় না। কিন্তু আমাদের দেশের এই ওপিনিয়ন পোলওয়ালারা, বা এগজিট পোলওয়ালারা ২৫-৩০ শতাংশ, কখনও কখনও ১০০ শতাংশ ভুল করার পরেও আবার নির্বাচন আসলে এসে হাজির হয়। কারণ এঁরা জানেন, চ্যানেল টাকা দিচ্ছে টিআরপি তোলার জন্য, টিআরপি উঠে গেলে ওনারা বিজ্ঞাপন পাবেন, চুকে গেল ল্যাটা। ওনারা টাকা পাবেন যা ইচ্ছে খুশি সার্ভের জন্য, আর চ্যানেল সেই টাকার দশগুণ তুলে নেবে বিজ্ঞাপন থেকে। পাবলিক? ভোগে যাক, মারামারিও করে মরুক, ওনাদের কী? একই কথা ওই ইউটিউবারদের নিয়ে, রোজ যা খুশি বলুন, তাতিয়ে যান, অসংলগ্ন কথা বলুন, অশিক্ষিতের মতো কথা বলুন কেবল তাঁর শ্রোতারা যা শুনতে চায় তাই বলুন ব্যস, ভিউ বাড়বে, টাকা আসবে, ল্যাটা চুকে গেল। আপনার কথা শুনে কে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে গেল আর লাশ হয়ে ফিরে এল তাতে কার কী এসে যায়? সেই ছবি দেশজুড়ে, সেই ছবি আমাদের বাংলাতেও, সেটাই আমাদের বিষয় আজকে।

নির্বাচনের আগে এগজিট পোল এসে গেল, বাংলার এগজিট পোল কী বলছে, ৯৯ শতাংশের দাবি তৃণমূল ১২-১৪-১৬টা পাবে আর বিজেপি ২৪-২৬-৩০-৩২টা পাবে। মানে রাজনৈতিক ছবিটাই বদলে যাবে। ওদিকে রাজ্য বিজেপির নেতা বলে দিয়েছেন, তৃণমূলের চেয়ে একটা বেশি আসন পেলেই সরকার ফেলে দেওয়া হবে, এগজিট পোলওয়ালারা জানাননি যে ওনারা এই হিসেব কীভাবে পেলেন। স্যাম্পল সাইজ, স্যাম্পলিং মেথড, মোড অফ অ্যানালিসিস, মার্জিন অফ এরর, কিচ্ছু জানাননি, আর সুকান্ত মজুমদারও জানাননি যে কোন আইনে লোকসভাতে রাজ্যের দল একটা আসন কম পেলে, সেই দলের নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে ভেঙে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: Aajke | গোদি মিডিয়ার এই এগজিট পোল যাঁরা করেছেন, তাঁদের ঘরে ইডি যাবে না?

কিন্তু এক উদোম সমর্থক এই এগজিট পোল দেখে, সুকান্তবাবুর কথা শোনার পরে ইউটিউবে দেখে নিয়েছেন, সন্ময় বলেছে এ তো দো দিনকা মেহমান হ্যায়, সরকার তো পড়ল বলে। সে হাতে খেঁটো বাঁশ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, অন্যদিকে ওই এগজিট পোল দেখেই আরেকজন নার্ভাস, গেল তাহলে তার সরকার, আসলে সরকার চুলোর দোরে যাক, কিন্তু সরকার গেলে তার অটোলাইনের টাইম কিপারের চাকরিটাও যাবে, সেও ওই খেটো বাঁশ হাতে নেমে পড়ল। ওদিকে দুর্দান্ত অভিনেতা কাম গিরগিটি কাম মমতাকে একদা মা পরে ডাইনি বলা রুদ্রনীল তাঁর ফেসবুকে লিখেই দিয়েছেন, এই তো এগজিট পোল বাকিটা বুঝে নেব ৪ তারিখে। ওদিকে আবার না জেলে যেতে হয় তাই, প্রখ্যাত সাংবাদিক ঘুরিয়ে কলম ধরেছেন, তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর লক্ষ্য আসলে মমতা কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে সমর্থন করছেন বাম-কংগ্রেসকে, সরাসরি বিজেপিকে নয়। ষাঠোর্ধ্ব বুদ্ধিমানের চোখে বাংলার বুকে নাকি বামপন্থার উত্থান, এ যৌবন জলতরঙ্গ রুধিবে কে? ব্যস, এক মাথাগরম বাম ছোকরা বেরিয়ে পড়ল, জান হথেলি মে লেকর। এদের একটা ছেলে বা দুজনেই লাশ হয়ে ফিরল বাড়িতে। তারপরে আসল ফলপ্রকাশ হল, আরামবাগ চিকেন সফিকুল জানাল এটা ছিল কাউন্টিং রিগিং, রুদ্রনীল চলে গেছেন শুটিং ফ্লোরে, ডিরেকটর একদা সিপিএম, তারপর তিনুরাম আপাতত পাঁচিলে বসে থাকা অরিন্দমের সঙ্গে কাজ করছেন। ওদিকে ছেলেটার রক্ত জমাট, হাত-পা ঠান্ডা, মা বাবা দিদি বোন বউ বাচ্চারা কাঁদছে। আক্সিস মাই ইন্ডিয়ার প্রদীপ গুপ্তা কাঁদছেন, কিন্তু ফুল পেমেন্ট পেয়ে গেছেন, সব্বাই বুঝে নিয়েছে তার পাওনা গন্ডা, কেবল ওই ছেলেটা বা দুজনেই লাশ হয়ে পড়ে আছে লাশকাটা ঘরে। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই এগজিট পোল, বা সোশ্যাল মিডিয়ার বেলাগাম প্রচার যে উত্তেজনা তৈরি করছে, যে উত্তেজনা হয়ে উঠছে মারপিট, খুনোখুনি তা কি কোথাও বন্ধ হওয়া উচিত, তার কি কোথাও কিছু বাধানিষেধ থাকা উচিত? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।

ঘর ভাঙা হয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে, পুড়ে ছাই সামান্য যা ছিল, সে পাশে হয় তো ভাইয়ের লাশ, অন্য পাড়ায় হয়তো আরেকজনের মৃতদেহ, তার বউ বাচ্চা কাঁদছে। ওদিকে শুটিং ফ্লোরে চুটিয়ে অভিনয় করছেন রুদ্রনীল ঘোষ, ইউটিউবে এক লক্ষ ভিউ পেয়ে গেছেন সন্ময় বা সফিকুল, চ্যানেল চলছে রমরম করে। ভিউ বাড়িয়ে চলেছেন সেই প্রখ্যাত সাংবাদিক। তথ্য ঝরে পড়ছে লক্ষ কোটি, তার ৬০-৭০ শতাংশ গার্বেজ, তথ্য আবর্জনা। সমাজ পুড়ছে, দেশ পুড়ছে। এখনই কিছু করা দরকার।

RELATED ARTICLES

Most Popular