১ তারিখে একজিট পোল হল, তিন তারিখে বাজার উঠল চড়চড় করে, আর ৪ তারিখে বাজারের অবস্থা কী? সেনসেক্স ৪৩০০ পয়েন্টের বেশি নামল। বাজারের বা বলা ভালো লগ্নীকারীদের ৪৫.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা ভ্যানিশ হয়ে গেল, টাকার দাম পড়ল রেকর্ড হারে, একদিনে ৪৫ পয়সার পতন দেখেনি আমাদের টাকা, তাই হল। কার জন্য? কেন? স্রেফ ওই ভুয়ো এগজিট পোলের জন্য। প্রায় ১৩টা আলাদা আলাদা সমীক্ষা হয়েছে, কিন্তু মজার কথা হল তাদের প্রত্যেকের হিসেবে একটা ব্যাপার কমন, ওই যে মোদিজি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ৩৭০ পার বিজেপি আর এনডিএ ৪০০ পার, প্রত্যেকটা হিসেব কমবেশি ওই সংখ্যা ধরেই করা হয়েছিল। মানুষকে ধারণা দেওয়া হল অবকি বার আবার মোদি সরকার, কাজেই স্টেবল সরকারের নামে বাজার হু হু করে উঠল সোমবারেই, ২০০০ পয়েন্টের মতো উঠল সেনসেক্স। তারপর? মঙ্গলবার বিজেপি? ২৪০, শরিকদের না নিলে সরকারই হবে না, কাজেই বাজার পড়ল। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকা গেল কার পকেটে, তা তো বাজার থেকে বেরিয়ে রামমন্দিরে ঢুকে যায়নি, গেল কার কাছে? লাখ দেড়েক টাকা এক কোম্পানির কাছ থেকে পেয়েছিলেন এই অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের চ্যানেল সম্পাদককে ইডি গ্রেফতার করেছে, তিনি ৩২৫ দিনের বেশি জেলেই আছেন। এদিকে মাত্র একদিনে এক ভুয়ো ভবিষ্যৎবাণীর জন্য বাজারের ৪৫.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা উবে গেল, ইডি দফতর কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে? আর তাই সেটাই বিষয় আজকে।
আহা দৃশ্যটা দেখেছেন, আক্সিস মাই ইন্ডিয়ার মাথা প্রদীপ গুপ্তা ইন্ডিয়া টুডে চ্যানেলে এসে কাঁদছেন, হাপুস নয়নে কাঁদছেন। আর রাহুল কনওয়াল, যিনি মনে মনে সক্কাল থেকেই কেঁদেই চলেছিলেন, তিনি আর রাজদীপ সরদেশাই ওনাকে বলছেন কী হয়েছে, কেঁদো না, এরকম তো কত কী হয়, এটা তো তুমি জেনে বুঝে করোনি, ব্লা ব্লা ব্লা। যার কানচাপাটিতে একটা থাপ্পড় মেরে বলা উচিত আপনার এই কাজের জন্য একদিনে বাজারের ৪৫.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা উবে গিয়েছে, দু’ চারটে মানুষ আত্মহত্যাও করে থাকতে পারে, অস্বাভাবিক কিছু নয়, বাজারের ওঠানামায় নিঃশব্দে মরে যায় মানুষ, সে এসে কাঁদল আর হয়ে গেল?
আরও পড়ুন: Aajke | ভোট শেষ, দাবি আর পাল্টা দাবিতে ভরেছে আকাশ
১ তারিখে দেখছিলাম ওনার অনুষ্ঠান, সবাই বিজেপিকে ২৪-২৫-২৬ দিচ্ছিল, উনি দিয়েছিলেন ২৭-৩১, তো রাজদীপ জিজ্ঞেস করলেন এত? এক্কেবারে ২৭ থেকে ৩১? উনি হাসলেন অবিকল মজন্তালি সরকারের মতো, তারপর বললেন ধস নামছে কি না। মার্জিন অফ এরর কত? ৫ শতাংশ, মানে কমসম করে বিজেপি ২৬টা আসন তো পাচ্ছেই। আর সারাদেশে বিজেপি? ওনার হিসেবে ৪০১, ওই যে কানে বাজছে অবকি বার ৪০০ পার। আমাদের কাছে আসা তথ্যসূত্র বলছে, ভারত সরকারের এক সর্বোচ্চ স্তরের অ্যাডভাইজরি বডির মাথা এবং কিছু টিভি চ্যানেল মাথাদের নিয়ে স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে বসেছিলেন গত ৩০ মে। সেখানে আমাদের অমিত শাহজি নাকি ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন, সেই বৈঠকে ওই এগজিট পোল নিয়ে গভীর এবং দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেদিনই এগজিট পোলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন ৩৭০ বিজেপি, এনডিএ ৪০০ পার, কথা রেখেছে প্রায় সবক’টা পোল। ভিতরে হাজার একটা গাঁজাখুরি তথ্য থাকলেও সেরকম হিসেব দিয়েছে প্রায় প্রতিটা চ্যানেল, এবং তা জানাতে জানাতে তাঁদের গাল এঁটো করা হাসি দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল তাঁরা সর্ব অর্থেই তৃপ্ত ও আহ্লাদিত। ওরকম সরল হাসি পুজোর বাজার থেকে নতুন জুতো কেনার পরে শিশুদের মুখে দেখা যায়। এবং মাথায় রাখুন যখন এগজিট পোলের কথা বলছি, সেই এগজিট পোলগুলো প্রকাশ করার সময়ে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনওরকম স্যাম্পলিং প্রসেস, মেথডোলজি ইত্যাদি কিছুই বলা হয়নি, প্রভুর আদেশে হিসেব দেওয়া হল। এত বড় স্ক্যাম চোখের সামনে হল, ইডির চোখে কি ন্যাবা? দেখতে পাচ্ছেন না ইডি অফিসারেরা, নাকি দেখতে চাইছেন না? সারা দেশের মানুষের কাছে বুথফেরত সমীক্ষার নাম করে আজগুবি তথ্য এনে ৪-৫ ঘণ্টা ধরে অজস্র টাকা কামাল ওই চ্যানেল মালিকেরা, তাদের খবরের জন্য বাজারের লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেল, তাদের কিচ্ছু হবে না? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ন্যশনাল মিডিয়াতে ঘটা করে যে এগজিট পোল করা হয়, তাতে আপনাদের কতটা বিশ্বাস আছে? এই এগজিট পোল কি বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আসলে মানুষ ঠকানোর ব্যবসা এই এগজিট পোল তারই সঙ্গে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার জন্যই এই এগজিট পোলের নাটক করা হয়। আর সবচেয়ে দরকারি কথা হল, এর পিছনে কিছু ফাটকাবাজদের হাত থাকে, তারা এই তালে কিছু টাকা কামিয়ে নিতে চায়। এই যাবতীয় এগজিট পোল আসলে সেই জন্যই করা। এবার সম্মিলিত বিরোধী দলের মানুষজন এই এগজিট পোল বন্ধ করার দাবি তুলুন, বন্ধ হোক এই ৫ ঘণ্টার বজ্জাতি।