ইসলামাবাদ: চরম অর্থ সঙ্কটে পাকিস্তান (Pakistan)। দেশে আমদানি (Import) নেই, রফতানি (Export) নেই, বিদেশি বিনিয়োগ (Foreign Investment) নেই, অর্থনীতি পুনুরুদ্ধারের (Recovery of the Economy) জন্য দেশের সরকারের কাছে কোনও সঠিক পরিকল্পনা (Planning) নেই, দেশে হাহাকার চলছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানে ৩০ মোবাইল নির্মাণকারী কেন্দ্র (Mobile Manufacturing Unit) বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি আবার বিদেশি ব্র্যান্ড (Foreign Brand)। মোবাইল নির্মাণ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার কারণ হলো, কাঁচামালের অভাব (Shortage of Raw Materials)। বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার (Foreign Currency Exchange) একেবারে তলানিতে চলে আসায়, বিদেশ থেকে যাবতীয় আমদানি সীমিত (Limiting Import) করে দিয়েছে পাক সরকার (Pak Government)। ফলে মোবাইল তৈরির জন্য যেসব কাঁচামাল ও উপকরণ (Raw Materials and Components) দরকার, তা না মেলায় অভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে মোবাইল অ্যাসেম্বলি ইউনিট বন্ধ (Mobile Assembly Unit Shut Down) করে দিতে বাধ্য হয়েছে সংস্থার মালিক পক্ষ। এর আগে শয়ে শয়ে বস্ত্র কারখানা (Textile Factories) বন্ধ হয়েছে। দেশের অগণিত মানুষ কর্মহারা (Jobless) এর ফলে। দেশে মুদ্রাস্ফীতি (Inflation)। লাফিয়ে লাফিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে খাবার জন্য অর্থ নেই। অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: India & US | Combat Exercise | এমাসেই ভারত-মার্কিন বিমান যুদ্ধাভ্যাস, তালিকায় কলাইকুন্ডার বিমানঘাঁটি
পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন (Dawn)-এর রিপোর্ট অনুসারে, কার্যত দেউলিয়া (Bankrupt) দেশ পাকিস্তানে বেশিরভাগ ফোন অ্যাসেম্বলি ইউনিট কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এপ্রিল মাসের অর্ধেক বেতন দিয়ে কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা নেই, কবে থেকে আবার কাজ শুরু হবে। শুধু আশ্বাসবাণী দেওয়া হয়েছে, উৎপাদনের কাজ আবার শুরু হলেই, তাঁদেরকে কাজে ফেরত আনা হবে।
নদগ অর্থ সঙ্কটে ভোগা পাকিস্তানে এই মুহূর্তে জ্বালানি (Fuel), বিদ্যুৎ (Electricity) বাঁচানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাবতীয় কাজ দিনের বেলায় করা হচ্ছে, গাড়ি চালানোর জন্য পেট্রোল-ডিজেল (Petrol-Diesel) মহার্ঘ। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। এরই মাঝে রমজান (Ramadan) মাস শুরু হয়েছে। দেশের মানুষ অভুক্ত। এই অবস্থায় যাঁদের চাকরি ছিল, তাঁরাও আসতে আসতে কর্মহারা হচ্ছেন। মালিকপক্ষ পবিত্র রমজান মাসে কর্মীদের কার্যত খালি হাতে বাড়ি পাঠাচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে একন মোবাইল ফোন উৎপাদক সংস্থার মালিক হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমার পরিবারের তিনটি মোবাইল প্রোডাকশন ইউনিট রয়েছে, সবকটিই বন্ধ করে দিতে হয়েছে।” এরজন্য তিনি দেশের অর্থমন্ত্রককে (Finance Ministry of Pakistan) দোষারোপ করেছেন। কারণ পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রকের কাছে চলতি অর্থসঙ্কট (Economic Crisis) কাটিয়ে ওঠার জন্য কোনও দাওয়াই নেই। তাছাড়া, সরকারি নীতির কারণে কোনও আমদানিকারীরা লেটার অব ক্রেডিট (letter of credit (LC)) পাচ্ছে না ব্যাঙ্ক থেকে। ফলে মোবাইল উৎপাদন ইউনিট চালু রাখার জন্য যে সমস্ত সরঞ্জাম এবং উপাদন দরকার, তা আমদানি করতে পারছে না মালিক পক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে মোবাইল প্রোডাকশন ইউনিট বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। একের পর এক মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট (Mobile Manufacturing Unit) বন্ধ হওয়ায়, দেশের বাজারে মোবাইল ফোন সরবরাহেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
যে ৩০ মোবাইল প্রোডাকশন ইউনিট বন্ধ হয়েছে, তার মধ্যে তিনটি বিদেশি সংস্থা হলো চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের। স্থানীয় মোবাইল ব্র্যান্ড আছে ঠিকই, কিন্তু ওই তিনটি দেশ থেকেই যাবতীয় কাঁচামাল ও উপাদান আসে মোবাইল তৈরি এবং অ্যাসেম্বল (Mobile Making and Assemble) করার জন্য। কিন্তু পাক সরকার আমদানি কার্যত বন্ধ করে দেওয়ায় কিছুই আসছে না। যে সমস্ত ইউনিটগুলি এখনও বন্ধ হয়নি, সেগুলিও খুব তাড়াতাড়ি বন্ধ হবে বলে খবর। মোবাইল নির্মাতা সংস্থাদের বক্তব্য, পূর্ণ সক্ষমতায় পাকিস্তানের সমস্ত মোবাইল ইউনিট চালু রাখতে হলে প্রতি মাসে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (USD) মূল্যের পার্টস এবং কম্পোনেন্টস (Parts and Components) প্রয়োজন। কিন্তু সরকার যেহেতু ক্রেডিট লেটার খোলার অনুমতি দিচ্ছে না এনং মার্কিন ডলারে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই মালিকপক্ষের কাছে। দেশের সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কগুলিকে বলে দেওয়া হয়েছে, কোনও মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারারের কথা শুনে আমদানির জন্য ব্যাঙ্ক যেন কোনও রকম লেটার অব ক্রেডিট না জারি করে। গত ডিসেম্বর থেকে এই লেটার অব ক্রেডিট (Letter of Credit – LoC) বন্ধ রয়েছে। খবরে প্রকাশ, স্থানীয় মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে এবং ৯০ শতাংশ চীনা বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তান ছেড়ে নিজ দেশে পাড়ি দিয়েছেন। পাক সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, সরকারের নীতির ফলে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে মোবাইল প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে পাকিস্তানের সুনাম বড় ধাক্কা খেয়েছে।
গত মার্চের সরকার পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তানে বছর প্রতি মুদ্রাস্ফীতির হার ৩৫.৩৭ শতাংশে পৌঁছছে। গত পাঁচ দশকে এটা সর্বোচ্চ। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ (Shehbaz Sharif, Prime Minister of Pakistan) আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (International Monetary Fund – IMF) কাছে থেকে ১১০০ কোটি (১.১ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ঋণের প্রচেষ্টা চালালেও, তা দিতে রাজি নয় আইএমএফ। শর্ত একটাই, দেশের মানুষের আরও কর আরোপ (Imposing of More Taxes) করতে হবে, বিভিন্ন পণ্যের উপর আরও শুল্ক চাপাতে হবে।