Friday, July 4, 2025
HomeCurrent Newsসিনেমা ও কাব্যময়তা হেঁটেছে পাশাপাশি

সিনেমা ও কাব্যময়তা হেঁটেছে পাশাপাশি

Follow Us :

‘ It was montage that gave the birth of film as an art’- বলেছিলেন বিখ্যাত ফিল্ম ক্রিটিক আন্দ্রে বাঁজো। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সিনেমা দেখতে বসলে এই উক্তির সার্থকতা বোঝা যায়। তাঁর প্রথম ছবি ‘দূরত্ব’ বা কয়েক বছর বাদে তৈরি ‘গৃহযুদ্ধ’ ছিল গত শতকের ৭-এর দশকের উত্তপ্ত রাজনীতি বা নকশাল আন্দোলনের নানা ছোঁয়ায় সম্পৃক্ত। অনেকটাই শহর কলকাতার কঠিন বাস্তবের নিগড়ে বাঁধা। তবে তাঁর মধ্যেই বুদ্ধদেবের কবি মন চেষ্টা করেছে সেলুলয়েডে দু এক কলি কবিতা বলার । মন্তাজের নিবিড় আলিঙ্গনে তা মাঝেমধ্যে এই লেখার শুরুতেই যে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, তাঁর কথাই বলে যেন বা। যত দিন এগিয়েছে বুদ্ধদেবের ক্যামেরা অনেক বেশি কবিতা বলতে চেয়েছে, চেয়েছে মানবিক সম্পর্কের গল্পে এক অন্য ধরণের দ্যোতনা তৈরি করতে। তবে প্রথম দিকের ছবিতেও ছিল তাঁর আভাস। ‘দূরত্ব’র এক দৃশ্যের কথা নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে আছে। ভি আই পি রোডের সাজসজ্জা বৃদ্ধির দৃশ্যে জড়িয়ে ছিল ভয়েস ওভারে নাগরিক উন্নয়নের শিকার সেই সব গরীব মানুষের কথাও। কে ভুলতে পারে এই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে?

যদি আসে ‘গৃহযুদ্ধ’ ছবিটির কথা, মনে থাকবে প্রয়াত অভিনেতা সুনীল মুখোপাধ্যায়কে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের এক অদেখা চালচিত্র আঁকতে গিয়ে এক শক্তিশালী অভিনেতার জন্ম দিয়েছিলেন পরিচালক বুদ্ধদেব। একেবারে পাশের পাড়ার ছেলে, যে বড় গোলকিপার হতে চায়, সে কিভাবে হয়ে ওঠে দলীয় রাজনীতির বোড়ে, কিভাবে হয়ে ওঠে ভাড়টে খুনি, এই ছবি সে কথা বলেছিল একেবারে নিজের মত করে। কিন্তু তাঁর মধ্যেই পরিচালক বুদ্ধদেব ইঙ্গিত ধর্মীতার ছাপ রেখেছিলেন। গোলকিপার সুনীল মুখোপাধ্যায়ের বাড়ানো হাতের মধ্যে ফুটবল যেন তাঁর পাপের অনিবার্য শাস্তির প্রতীক হয়ে উঠেছিল এক ফ্রিজড শটে। বিপ্লবী রাজনীতি থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়া ‘সফল’ অঞ্জন দত্ত ছবির দ্বিতীয় অংশে দেওয়ালে হেলান না দিয়ে যেন দাঁড়াতেই পারত না। চরিত্রের অন্তরে বাসা বাঁধা কোনও এক ঘূণপোকা যেন ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল তাঁকে। কে ভুলতে পারে এই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে?

সেরা ছবির জাতীয় পুরস্কার পাওয়া ‘বাঘ বাহাদুর’ তুলে এনেছিল গ্রাম বাংলার এক প্রান্তিক শিল্পের কথা । বাঘ সেজে নাচ দেখানোর যে আর্ট ফর্ম, তাঁর বিপন্নতা, শিল্পীর ক্রমশ নির্জনতায় হারিয়ে যাওয়ার অনিবার্যতা দর্শককে বিষন্ন করেছিল। এই ছবিতেই পবন মালহোত্রা বোধহয় তাঁর জীবনের সেরা অভিনয় করেছিলেন। ছবি জুড়ে নানা দৃশ্যকল্পের নির্মাণে, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ হয়েছে চলচ্চিত্র বোদ্ধা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের ছাত্র। কে ভুলতে পারে এই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে? ১৯৯২ সালের ছবি ‘তাহাদের কথা’। মিঠুন চক্রবর্তী এই ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হন। স্বাধীনতা সংগ্রামী শিবনাথের চরিত্রে অভিনয় করেন মিঠুন। ১১ বছর জেল খেটে মুক্ত হন শিবনাথ, কিন্তু খণ্ডিত দেশ, পাল্টে যাওয়া রাজনীতি, খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসা দুর্নীতির জগৎ শিবনাথ মেনে নেয় না। সপাটে চড় মারার মত মিঠুনের বাতকর্মের দৃশ্য ঠিক বুদ্ধদেব সুলভ না হলেও প্রতীকী তো বটেই । যেভাবে মিঠুনের মত এক সুপারস্টারকে বিনির্মাণ করেছিলেন পরিচালক, তা মনে রাখার মতই।  কে ভুলতে পারে এই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে?

 

চার দশকের পরিচালক জীবনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নিজেকে পাল্টেছেন। ইঙ্গিতময়তা, দৃশ্য নির্মাণে কাব্যময়তা তাঁর ছবিকে সমৃদ্ধ করেছে পরবর্তীকালে আরও বেশি করে। ‘চরাচর’ ছবিটিতে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ককে তিনি প্রতিভাত করেছেন বৃহত্তর ক্যানভাসে। শেষ দৃশ্যে সমুদ্রের দিকে রজিত কাপুরের সেই দৌড়, চরাচর শব্দটিকে অনেক বেশি মুখর করে তোলে। মন্তাজের অপূর্ব প্রয়োগ মনে থেকে যায়, ভোলা যায় না এই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে ।

চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার এই বাংলায় নতুন কিছু নয় । সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল তো বটেই, তার পরের প্রজন্মের পরিচালকরা প্রায় প্রতি বছরই এ বাংলায় সেই পুরস্কার এনেছেন। কিন্তু সত্যজিৎ-মৃণালের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসাবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অনেক বেশি সফল। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গৃহযুদ্ধ পুরস্কার পেয়েছে। উত্তরা জিতে নিয়েছে পরিচালনায় সিলভার লায়ন, এই দুটি ছবিই গোল্ডেন লায়নের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল। চরাচর ও ফেরা বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন লায়নের জন্য মনোনয়ন পায়। নিম অন্নপূর্ণা কার্লোভি ভ্যারিতে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হয়। এছাড়া আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

এ লেখা শুরু হয়েছিল সিনেমা নির্মাণে মন্তাজের ভূমিকা নিয়ে। তারকোভস্কির ‘ইভান’স চাইল্ডহুড’ ছবির এক দৃশ্যে আমরা ইভানকে দেখেছি কুঁয়োয় উঁকি দিয়ে নিজের ছেলেবেলাকে ফিরে পেতে। এ যেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার সেই ‘কুঁয়া’- বানানের সামান্য পরিবর্তন বাড়িয়ে দেয় বিস্তৃতি। ‘লাল দরজা’ ছবিতে একটা বল সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে টাইম অ্যান্ড স্পেসের এক অপরূপ খেলা খেলে দেয়। সিনেমায় কাব্যময়তায় বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত অমর। ভোলা যাবে না তাঁকে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | আদৌ যু/দ্ধ থেমেছে মধ্যপ্রাচ্যে? এ কী করল ইরান? মাথায় হাত নেতানিয়াহুর
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | নেতানিয়াহুর ঘুমেও খামেনি? ইরানের মা/রে কোমর ভাঙা ইজরায়েল কী কী শিক্ষা পেল?
00:00
Video thumbnail
TMC | Election Result | ২৬-এর আগে ফের বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
00:00
Video thumbnail
India-America | ভারত-মার্কিন সম্পর্কে U টার্ন, শক্তি বাড়াচ্ছে ভারত, ভয় পাবে কোন কোন দেশ?
00:00
Video thumbnail
বাংলা বলছে (Bangla Bolche) | শমীক বরণ, ব্রাত্য দিলীপ
11:37:45
Video thumbnail
Dear Ma | মা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর নতুন ছবি 'ডিয়ার মা', দেখুন এই ভিডিও
03:12
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | Dilip Ghosh | শমীকের সংবর্ধনা মঞ্চেও নেই দিলীপ ঘোষ, কারণ কী? দেখুন বড় খবর
11:55:01
Video thumbnail
TMC | Election Result | ২৬-এর আগে ফের বিরাট জয় তৃণমূলের, বিরোধীরা কোথায়?
11:55:01
Video thumbnail
Iran-Israel | নেতানিয়াহুর ঘুমেও খামেনি? ইরানের মা/রে কোমর ভাঙা ইজরায়েল কী কী শিক্ষা পেল?
11:55:01
Video thumbnail
Samik Bhattacharya | Dilip Ghosh | শমীক রাজ‍্য সভাপতি, ডুগডুগি হাতে নিয়ে কী বললেন দিলীপ?
11:52:31

Deprecated: Automatic conversion of false to array is deprecated in /var/www/ktv/wp-content/themes/techinfer-child/functions.php on line 39