
কলকাতা: বাঙালি জাতিকে প্রকাশ্যেই অপমান করল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS)। ‘বাঙ্গালীর চৈতন্যোদয়’ শীর্ষক তাদের মুখপত্র সম্পাদকীয়তে বাঙালি জাতকে শুধুই ধর্মের মোহে বিচার করা হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদের মতো প্রগতিশীলতার ধ্বজাধারীদের সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। বাম রাজনীতিকে বলা হয়েছে ‘বিজাতীয় বৈদেশিক মতাদর্শ।’
ঠিক কী লেখা হল আরএসএস-এর সম্পাদকীয়তে?
“বাঙ্গালি জাতির দুর্ভাগ্য যে, তাহাদের সম্মুখে শ্রীচৈতনা, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, প্রভু জগদ্বন্ধু সুন্দর, স্বামী প্রণবানন্দ, হরিচাদ ঠাকুর-সহ বহু ঈশ্বরকল্প পুরুষের কর্মময় জীবনের উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ বিজাতীয় বৈদেশিক মতাদর্শ, বিধর্মীদের আস্ফালন এই ভূমির জীবনকে বিঘ্নিত করিতেছে। ইহার কারণ হিসাবে বলা যায়, বাঙ্গালি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ‘সঙ্ঘে শক্তি কলৌ যুগে’ অর্থাৎ সঙ্ঘবদ্ধ হইয়া জাতি, ধর্ম, সমাজ ও দেশ রক্ষা করিবার কথা বিস্মিত হইয়াছে। তাঁহাকে শুধুমাত্র প্রেমের অবতার মনে করিয়া পূজার আসনে বসাইয়া উদ্বাহু হইয়া নৃত্য করিয়াছে। স্বধর্ম, স্বজাতি রক্ষার সাধনাকে উপেক্ষা করিয়াছে। দেশ, জাতি, ধর্ম রক্ষার্থে স্বামী বিবেকানন্দের সিংহগর্জনও বাঙ্গালি ভুলিয়া গিয়াছে।
আরও পড়ুন: রাত দখলে অনুমতি দেয়নি লালবাজার, হাইকোর্টের দ্বারস্থ ঐক্যমঞ্চ
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মুষ্টিমেয় বাঙ্গালির স্বাভিমানশূন্যতার কারণে সমগ্র বাঙ্গালি জাতিই দেশ তথা বিশ্বের নিন্দাভাজনে পরিণত হইয়াছে। বাঙ্গালির চৈতন্য লুপ্ত হয় নাই তাহার কারণ হইল তাহাদের আরাধ্য ঠাকুর শ্রীচৈতন্য, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ-সহ অজস্র মহাপুরুষের আশীর্বাদ তাহাদের মস্তকে বর্ধিত হইয়াছে। তাঁহাদের সেই বাণী অদ্যাবধি পরম্পরাগতভাবে বহন করিয়া চলিয়াছেন কতিপয় সিংহপুরুষ সন্ন্যাসী। তাই বাঙ্গালি মরিতে মরিতেও বাঁচিয়েছে। সম্প্রতি পূর্ববঙ্গের হিন্দু সমাজ শত অত্যাচারেরও সঙ্গবদ্ধভাবে দাঁড়াইয়া স্বধর্ম রক্ষার লড়াই করিতেছে। পশ্চিমবঙ্গের আপাত বিভ্রান্ত হিন্দুদিগেরও সংবিৎ ফিরিতেছে। জাতির বোধোদয় ঘটিতেছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মহাবাক্য ‘তোমাদের চৈতন্য হউক’ ইথারতরঙ্গে তো রহিয়াছে। চৈতন্য লাভে ইহাই বাঙ্গালির পক্ষে যথেষ্ট।”
অর্থাৎ পুরো সম্পাদকীয়তেই রয়েছে ধর্মের কথা। বাংলার প্রাতঃস্মরণীয় মনিষীদের হাত ধরে বাঙালির নবজাগরণের কথা ভুলেই গিয়েছে আরএসএস। বাঙালির আধুনিকতা, বিজ্ঞান চেতনা, বিশ্বজনীন হয়ে ওঠার কথা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে শুধু শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের কথা, কিন্তু তাঁদের বাণীর সারমর্ম বুঝতে অক্ষম আরএসএস। পরমহংসদেবই বলেছিলেন, “যত মত তত পথ।”
দেখুন খবর: