কলকাতা: নতুন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের (CV AnandaBose) উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার তিনি রাজভবনে যান। রাজ্যপালের সঙ্গে মমতার দীর্ঘ বৈঠক (Meeting) হয়। বৈঠক শেষে মমতা বলেন, রাজ্যপাল অত্যন্ত সজ্জন (Honest) ব্যক্তি। ভালো মানুষ। আশা করি, আর কোনও সমস্যা হবে না। প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) রাজ্য সরকারের অনেক বিল আটকে রেখেছিলেন। সেই বিলগুলির কী হবে, জানতে চাওয়া হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সেই বিলগুলি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। মনে হয়, সমস্যা হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যপাল সরকারকে সবরকমের সহযোগিতা করছেন। তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কোনও সমস্যা হলে আমরা আলোচনা করে মিটিয়ে নেব।
২০১৯ সালে ধনখড় রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের (State Government) সংঘাত শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তাঁর সঙ্গে রাজ্যের দূরত্ব তৈরি হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়কে (Babul Supriyo) ঘিরে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ ঘিরে। বাবুল তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী (Central Minister)। রাজ্যপাল রাজভবন থেকে বারবার রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেন পুলিশ (Police) পাঠিয়ে বাবুলকে উদ্ধার করার। কিন্তু রাজ্য সরকার পুলিশ (Police) পাঠাতে চায়নি। পরে রাজ্যপাল নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ে (UNIVERSITY) চলে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধার করতে। পরবর্তীকালে সমাবর্তন (Convocation) অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ হয়। তিনি ফিরে আসেন।
আরও পড়ুন: Partha Chatterjee: সত্যের জয় একদিন হবেই! আদালত থেকে বেরিয়ে বললেন পার্থ
তখন থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধ চলে রাজ্যপালের। তাঁকে শাসকদল বিজেপির দালাল বলতেও কুণ্ঠা করেনি। মমতা থেকে শুরু করে শাসকদলের তাবড় নেতারা তীব্র ভাষায় ধনখড়ের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। রাজ্যপালও মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার স্পিকার-সহ নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। রাজ্য সরকারের অভিযোগ ছিল, রাজ্যপাল শিক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করছেন। বিরোধ এমন পর্যায়ে চলে যায় য়ে, রাজ্যপালকে রাজ্যের সমস্ত সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে সরানোর জন্য বিধানসভায় বিল পাশ করায় সরকার। সেই বিল অবশ্য আটকে আছে। ধনখড়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল, তিনি উপাচার্যদের যখন তখন ডেকে পাঠাতেন সরকারের অনুমতি ছাডা়ই। যদিও কোনও উপাচার্যই তাঁর ডাকে সাড়া দেননি। ধনখড়কে সরানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী অন্তত সাতবার চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রীকে। অবশেষে ধনখড়কে বিজেপি উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করেন। তিনি ভোটে জিতে উপরাষ্ট্রপতি হন। সেই নির্বাচনে অবশ্য তৃণমূল ভোটদানে বিরত থাকে।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই কেন্দ্র ধনখড়কে এ রাজ্যের রাজ্যপাল করে পাঠান। তাঁকে রাজ্যপাল করে পাঠানো হল বলে মমতাকে ফোনে জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অনুযোগও করেন অমিতের কাছে। ধনখড় চলে যাওয়ার পর অস্থায়ী রাজ্যপাল হয়ে আসেন লা গণেশন। অল্পদিনের জন্য থাকলেও তাঁর সঙ্গে শাসকদলের ভালোই সম্পর্ক হয়ে যায়। চেন্নাইতে গণেশনের একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানেও মমতা গিয়েছিলেন। তারপরেই স্থায়ী রাজ্যপাল হয়ে আসেন সি ভি আনন্দ বোস। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতাকে ফোন করে বলেন, সি ভি আসছেন। ভালোই হবে। বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দীর্ঘ বৈঠক হল। মমতা বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হয়েছে।