Friday, June 13, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | ছলে বলে কৌশলে এক বিরোধী মুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখছে...

Fourth Pillar | ছলে বলে কৌশলে এক বিরোধী মুক্ত ভারতের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি

Follow Us :

গণতন্ত্রের মূল ধারণা তো বিরোধিতা থেকেই শুরু। মানে আপনি যা বলছেন, যা করছেন তা যদি আমায় মেনেই নিতে হয়, তাহলে তো আর যাই হোক সেটাকে গণতন্ত্র বলা হবে না। আপনার মতের বিরুদ্ধে যদি আমার কিছু বলার থাকে, তা আমি বলব। আপনাকে বলব, বাকি মানুষকেও বলব, এটি গণতন্ত্র। কিন্তু স্বৈরতন্ত্রে বিষয়টা আলাদা, রাজতন্ত্রে বিষয়ট আলাদা, সেখানে রাজা হয়ে ওঠেন সর্বশক্তিমান ভগবান, তাঁর কথা অমান্য মানে কেবল রাজদ্রোহ নয়, দেশদ্রোহ, ধর্মের বিরুদ্ধতা। কাজেই স্বৈরতন্ত্রে বিরোধী থাকে না, দু’ একজন থাকলে বা গজিয়ে উঠলে তাদের দমন করা হয়, জেলে পাঠানো হয়, খুন করা হয়, নিদেনপক্ষে তার কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। হ্যাঁ, আজও কথা রাহুল গান্ধীর সাংসদ সদস্যপদ খারিজ নিয়েই। আমরা খবরের লোকজন, নিউজরুমে একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর এলেই আলোচনা শুরু হয়ে যায়, এটার মানে কী? তাহলে এবার কী হবে? ইত্যাদি আলোচনা। তো বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ খবর এল যে গুজরাতে এক লোয়ার কোর্ট রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় রায় দিয়েছে, রাহুল গান্ধীকে দোষী ঘোষণা করা হয়েছে, ২ বছরের শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। তবে আদালত সঙ্গে সঙ্গেই রায়টি কার্যকর করার কথা বলেনি, ৩০ দিন সময় দিয়েছে, এরমধ্যে রাহুল গান্ধী উচ্চতর আদালতে অ্যাপিল করে এই রায়ের বিরুদ্ধে স্টে নিতে পারেন, তারপরেও মামলা চলবে। 

তো অনেকে অনেক কিছু বললেও আমার মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তে খবরটা গুরুত্বপূর্ণ বটে কিন্তু উনি অ্যাপিল করবেন এবং উচ্চ আদালত স্টে দেবে এটাও খুব স্বাভাবিক। অনেকেই বললেন দু’ বছরের বেশি শাস্তি, সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া যায়, ওনার ক্ষেত্রেও এটা হতেই পারে। আমার জবাব ছিল, হ্যাঁ, টেকনিক্যালি হতেই পারে, কিন্তু এটা কেউ করে নাকি? ইউপির সমাজবাদী নেতা আজম খানের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ ছিল, জোর করে সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ ছিল, শাস্তি হওয়ার পরে তাঁর সাংসদ পদ গেছে, জানি। কিন্তু রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নির্বাচনী জনসভায় কটু কথা বলার। যা উনি বলেছিলেন, তা না বললে ভালো হত, কিন্তু উনি যা বলেছেন তার শতগুণ কটু কথা বলেছেন অনেকেই, ঘৃণা ছড়িয়েছেন অনেকেই। কেবল নির্বাচন কেন, তারপরেও গডসেকে দেশপ্রেমিক বলা থেকে দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র করার ঘোষণা তো আমরা শুনেছি। মামলাই হয়নি শাস্তি তো দূরস্থান। যদি বা মামলা হয়েছে, তাতে সাত তাড়াতাড়ি জামিন পাওয়াটাই দস্তুর। বিনা বিচারে জেল, মিথ্যে অভিযোগে জেল এসব তো আমরা জানি। তাই রাহুল গান্ধীর রায় আর শাস্তির খবর গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তা একদিনের হই চই, এরকমই ভেবেছিলাম। একবারের জন্য ভাবিনি যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয় তড়িঘড়ি সার্কুলার দিয়ে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে দেবে। কেন ভাবিনি? ভাবিনি কারণ এ ধরনের অনৈতিক কাজ এক শক্তপোক্ত শাসকদল করবে কেন? বরং রাহুলের শাস্তি নিয়ে তারা প্রচার চালাবে, বিরোধী দলের অন্যতম নেতাকে দু’ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত, বিজেপি তো নয়, কাজেই সেই প্রচার নিয়ে মানুষের কাছে যাবে বিজেপি। কংগ্রেস আরেকটু বিপদে পড়বে এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু আরএসএস–বিজেপি এতটা অনৈতিক ভাবে বিরোধী দলের অন্যতম নেতার সাংসদ পদ খারিজ করে দেবে, এটা কল্পনাতেও আসেনি। পরে বুঝেছি এনারা সব পারেন, আরএসএস–বিজেপির কাছে নীতি নৈতিকতার সামান্য ধারণাও নেই। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিরোধী ঐক্য বাক্য মাণিক্য নিয়ে আরও কিছু কথা 

সারা দেশ বলছে গুজরাতে গণহত্যা হয়েছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, সরকারের নেতৃত্বে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, সেদিন কেন্দ্রে সরকার বিজেপির, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন রাজধর্ম পালন করতে হবে। দু’ বছরের মাথায় অটলবিহারীর সরকার নির্বাচনে হারে, ক্ষমতায় আসে ইউপিএ। সেদিন এনআইএ দিয়ে, ভিজিলেন্স এজেন্সি দিয়ে গ্রেফতার তো করেনি নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপির কোনও বিশিষ্ট নেতাকে? একমাত্র জেলে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। ১০ বছর ধরে দুটো টার্ম চলেছে ইউপিএ-র সরকার। কেলেঙ্কারি ছিল না? ছিল বইকী। আসুন না তালিকাটা দেখা যাক। ২০০৮-এ মানে মনমোহন সিংহের চার বছরের মাথায় সামনে এল টুজি স্ক্যাম, তদন্তের আদেশ দেওয়া হল সিবিআইকে, গ্রেফতার করা হল এ রাজা, আর কানিমোঝি করুণানিধিকে। দুজনেই ইউপিএ-র শরিক দল ডিএমকে-র নেতা, এ রাজা ক্যাবিনেট মন্ত্রী, দুজনেই জেলে গেলেন। এরপরের কেলেঙ্কারি কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি, অভিযুক্ত কংগ্রেসের সুরেশ কালমাদি। আবার সিবিআই তদন্ত এবং কালমাদির জেলযাত্রা। ২০১০-এ হাউসিং স্ক্যাম, কাকে পদত্যাগ করতে হল? অশোক চহ্বন, সেই সময়ের মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, ক্ষমতায় কে? কংগ্রেস সরকার। সিবিআই কার? টেকনিক্যালি কংগ্রেস সরকারের। এর পরে কোল ব্লক অ্যালোকেশন স্ক্যাম, কার বিরুদ্ধে মামলা হল? সোনিয়া গান্ধীর প্রিয়পাত্র দশারি নারায়ণ রাও, কংগ্রেসের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। মানে সবকটা বড় কেলেঙ্কারি তে সিবিআই বা ভিজিলেন্স-এর মামলা, প্রত্যেকটাতে মূল অভিযুক্ত হয় কংগ্রেসের নেতা বা ইউপিএ-র শরিক দলের নেতা। 

এবারে আসুন পালাবদলের পরের ছবিটা দেখা যাক। রাফাল ডিল, একজনও অভিযুক্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সে গেলেন, সঙ্গে গেলেন অনিল আম্বানি, কোনও এক্সপিরিয়েন্স নেই, দেশের হিন্দুস্থান এরোনইক্স-কে পেছনে ফেলে সেই ডিল পেলেন অনিল আম্বানি, পরে অনিল আম্বানি অবশ্য এই ডিলের প্রয়োজনীয় শর্ত পালন না করায় বাদ পড়েছেন, বদলে ডিল চলে গেছে আদানিদের কাছে। সেখানেও ধোঁয়াশা, আদানিদের ডিফেন্স কোম্পানিতে টাকা কার? এখনও জানা নেই। সিবিআই যায়নি, ইডি যায়নি, মামলা হয়নি। পেগাসাস স্পাইওয়্যার, ফোনের মধ্যে সফটওয়ার পাঠিয়ে হাইটেক নজরদারি। সাংবাদিক, আমলা, বিরোধী দলের নেতা এমনকী নিজের দলের নেতাদের ফোনেও নজরদারি। অভিযোগ, মামলা অনেক কিছুর পরেও না সিবিআই না অন্য কোনও ভিজিলেন্স। লখিমপুর খেরি, পাঁচজন কৃষককে সবার চোখের সামনে গাড়ির চাকার তলায় পিষে মেরে ফেলার পরে অভিযুক্তরা এবং এই হত্যার মূল অভিযুক্ত আশিস মিশ্র জামিনে। এই হত্যার ষড়যন্ত্রে সামিল থাকার অভিযোগ ওই আশিস মিশ্রের পিতাশ্রী, অজয় মিশ্রা টেনি সেদিন এবং এখনও স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রী। যে পুলিশ অফিসারেরা এই হত্যার মামলা নিয়ে আদালতে হাজির হবেন, আঁরা মন্ত্রীকে দেখলে স্যালুট দেবেন, স্বাভাবিক। কর্নাটকে এক কনট্রাক্টর সন্তোষ পাটিল আত্মহত্যা করলেন, এক হোটেলে তাঁর মৃতদেহ এবং সুইসাইড নোট পাওয়া গেল, যেখানে তিনি রাজ্যের এক বিজেপি মন্ত্রীকে, এস ইশ্বরেয়াপ্পাকে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে লিখে গেলেন। তিনি সেই নোটে জানালেন যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে বিরাট দুর্নীতি চলছে। সিবিআই? ইডি? না, কেউ যায়নি, খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত শেষ করে রাজ্যের পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে এই ঘটনায় মন্ত্রী কে এস ইশ্বরেয়াপ্পার কোনও ভূমিকা নেই। 

ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে বিরোধীদের সম্মিলিত চিৎকার সরকারের কানে এখনও যায়নি, হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট বা তারপরে ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে এখনও কোনও হেলদোল দেখা গেছে ওই সিবিআই, বা ইডি বা কোনও ভিজিলেন্স এজেন্সির? তার মানে কী দাঁড়াল? এটা পরিষ্কার যে এই সরকার, আরএসএস–বিজেপির সরকার, মোদি–শাহের সরকার আর যাই হোক কোনও নীতি নৈতিকতার ধার ধারে না। প্রচলিত রীতি নীতি, সাধারণ সৌজন্য বাদ দিয়েই এক মধ্যযুগীয় শাসন কায়েম করার পথেই তাঁরা হাঁটছেন, যে পথ ধরেই পৃথিবীর সব স্বৈরতান্ত্রিকরা হেঁটেছে। কিন্তু ওই যে, একথা জানিতে তুমি ভারত ঈশ্বর শাহজাহান, কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধনমান। সময় কত কিছুই তো ভাসিয়ে দেয়, অত্যাচারী অনেক শাসকের কবরেরও হদিশ পাওয়া যায় না আজ। কেন? কোন ভুলে? আসলে এই স্বৈরশাসকেরা তাদের চলার পথেই নিজেদের কবর খুঁড়তে খুঁড়তে চলে। ধরুন এই কদিন আগে যে ছবি আমরা দেখছিলাম, সে ছবি এক ঝটকায় অনেকটাই কি বদলে গেল না? এই কদিন আগে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের ডাকা বৈঠকে যাচ্ছিল না তৃণমূল দল। কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই কথা বলছিলেন আপাতত টিআরএস থেকে নাম বদলে বিআরএস দলের নেতা কে চন্দ্রশেখর, উলটো সুরে কথা বলছিলেন সমাজবাদী নেতা অখিলেশ প্রসাদ যাদব। এ রাজ্যে তৃণমূল নেত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার সব সম্ভাবনাই বোধহয় শেষ। তো আপাতত ছবিটা কীরকম? আজকে সকালে কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে হাজির তৃণমূলের দুই সাংসদ, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পরেই তীব্র প্রতিক্রিয়া মমতা, অভিষেক, ডেরেক ও’ব্রায়েনের। এমনই হয়, নিজেদের অজান্তেই কবরের দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ বাড়িয়ে ফেলেন স্বৈরাচারীরা, তাদের হঠাৎ ভুলের পথেই চাকার ঘর্ঘর শব্দ শোনা যায়, তাদের অত্যাচারের পথেই হঠাৎ শোনা যায় মানুষের কলরব। তারপর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের একলা মৃত্যু, সিজার ছুরিকাহত, মুসোলিনী বান্ধবী সমেত উল্টো হয়ে ঝুলছে শহরের মাঝখানে, হিটলারের আধপোড়া দেহ, বাতিস্তার প্রাণ বাঁচিয়ে কাপুরুষের মতো পলায়ন, ভুট্টো বা সাদ্দামের শেষ ফাঁসির দড়িতে, ইদি আমিনের দেশে ফেরা হয়নি।      

স্বৈরতন্ত্র শেষমেশ ধ্বংস হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের সমস্ত ঐতিহ্যকে ফেলে দিয়ে যে অন্যায় এই আরএসএস–বিজেপি সরকার করল, তার মূল্য তাকে দিতেই হবে এবং সেটা এই মুহূর্তের দেওয়াল লিখন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Madhya Pradesh | এবার ধর্ম নয় জাতি দেখে হিন্দু খু/ন করল হিন্দুকে, বিভাজনের বি/ষ কতটা?
00:00
Video thumbnail
Mamata Banerjee | জগন্নাথ মন্দির আর দিঘা নিয়ে রেগে আ/গুন মুখ্যমন্ত্রী
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | সব রহস্যের সমাধান ব্ল্যাক বক্সে, ব্ল্যাক বক্স কী? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Vijay Rupani | Air India | বিজয় রূপানি যখন এয়ারপোর্টে ঢুকছিলেন, দেখুন কলকাতা টিভি EXCLUSIVE
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | মৃ/ত্যুকে হারিয়ে বাঁচলেন ১ যাত্রী কী বললেন? শুনুন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা
00:00
Video thumbnail
Air India | Ahmedabad | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘটনা, জীবিত অবস্থায় উদ্ধার ১ যাত্রী, কেমন আছেন?
00:00
Video thumbnail
Politics | বিহারের ভোটে ফাট ধরল ইন্ডিয়া জোটে?
03:39
Video thumbnail
Politics | মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার সমীক্ষায় পিছিয়ে নীতীশকুমার
04:24
Video thumbnail
Politics | শুভেন্দু দিলেন হুং/কার বিধানসভা অচল করার
04:33
Video thumbnail
Politics | বিমান দু/র্ঘটনায় এবার নড়ে বসল মোদি সরকার
03:23