কলকাতা: রাজ্যপালকে (CV Ananda Bose) এবার মত্ত হস্তির সঙ্গে তুলনা করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। শুক্রবার রাজ্য সরকারের তরফে রেড রোডে বি আর আম্বেদকরের মূর্তিতে মালা দিতে আসেন ব্রাত্য। সেখানেই তিনি বলেন, রাজ্যপাল মত্ত হস্তির মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। যাকে তাকে অনুদান দিচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যাপালের উদ্দেশে বলেন, এসব না করে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার বিলে সই করুন। ১০ মাস ধরে আপনি ওই বিল আটকে রেখেছেন।
এর আগে উপাচার্যদের প্রতি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের নির্দেশিকা নিয়েও তাঁকে তোপ দেগেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। কিন্তু শুক্রবার রাজ্যপাল সম্পর্কে নাট্যকার শিক্ষামন্ত্রী যে সব ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাতে বিস্মিত শিক্ষা মহলের একটি বড় অংশ। ব্রাত্য বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, বিধানসভায় পাস হওয়া কোনও বিল রাজ্যপাল দু সপ্তাহের বেশি সময় আটকে রাখতে পারেন না। রাজ্যপাল যদি শিক্ষার সার্বিক প্রসার চান, তা হলে প্রধান বিচারপতির কথা মাথায় রেখে আর দেরি না করে বিলগুলি ছেড়ে দিন। সংবিধানের ১৬৩ ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যপালের ক্ষমতা বা এক্তিয়ার খুবই সামান্য। রাজ্যপাল সেই এক্তিয়ারের বাইরে চলে বাইরে চলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: Ambedkar Jayanti 2023 | দলিত ভোটব্যাঙ্ক পকেটে ভরতে আম্বেদকর-রাজনীতি সব দলেরই
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাজ্যপাল আমাদের না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন। শিক্ষা দফতরকে না জানিয়ে উপাচার্য ঠিক করছেন। আমরা গতকালই রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে বলেছি, আপনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমম্বয় রেখে কাজ করুন। কিন্তু উনি একক ভাবে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি রাজ্যপাল এক নির্দেশিকায় জানান, এখন থেকে উপাচার্যদের সাপ্তাহিক রিপোর্ট পাঠাতে হবে রাজভবনে। উপাচার্যরা সরাসরি রাজভবনের অঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকাকালীন রাজ্য সরকার নিয়োম করেছিল, উপাচার্দের উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমে রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সি ভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল হয়েই সেই নিয়ম বদলে উপাচার্যদের সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশিকা জারি করেন। তখন থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনে সংঘাত শুরু হয়ে যায়। এদিন শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পর সেই সংঘাত আরও তুঙ্গে উঠল বলে মনে করছে শিক্ষামহল।
শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা মনে রাখবেন, তাপনাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ এক্তিয়ার রয়েছে। বিধানসভায় বিল পাশ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীই এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য। তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে যদি কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৈরিকীকরণের চেষ্ঠা করেন, সে দিকেও উপাচার্যদের খেয়াল রাখতে হবে।
ব্রাত্য বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকেই আমরা আচার্য হিসেবে চাই। রাজ্যপাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, অনুদান দিচ্ছেন। এটা তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত কি না, তা বলতে পারব না। গত ১০ মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রীর আচার্য হওয়া আটকে রেখেছে রাজভবন। প্রসঙ্গত, জগদীপ ধনখড় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন, এই অভিযোগ তুলেই রাজ্য সরকার রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকেই আচার্য করার জন্য বিধানসভায় বিল পাশ করায়। সেই বিল এখনও রাজভবনেই আটকে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলতেও ছাড়েননি। তাঁর অভিযোগ, বিচারপতি সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির হাত ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্র হননে নেমেছেন। কুণালের হুমকি, রাজনীতি করতে চাইলে বিচারপতির চেয়ার ছেড়ে দিন। এর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই এবার শাসকদলের আক্রমণের মুখে পড়লেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তিনি রাজ্যপাল হয়ে আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা্য বলেছিলেন, এই রাজ্যপাল অত্যন্ত ভালো লোক। আশা করই, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে কোনও অসুবিধে হবে না। রাজভবন-নবান্ন সংঘাতের এই আবহেই আগামিকাল শনিবার রাজভবনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হতে চলেছে। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীদেরও থাকার কথা।