কলকাতা: মঙ্গলবার ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচন। রবিবার প্রচার শেষ। সকাল থেকে প্রচারের ঝড় উঠেছে। শনিবার তৃণমূল প্রার্থী নির্মল রায়ের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্থানীয় মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, ধুপগুড়িকে মহকুমা করতে হবে। তা নিয়ে আন্দোলনও চলছিল। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে এসে শিগগিরই ধুপগুড়ি মহকুমা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপর দুবছর কেটে গিয়েছে। কিছুই হয়নি।
এবারের উপনির্বাচনেও এটা একটা বড় ইস্যু ছিল। অভিষেক শনিবার ঘোষণা করেছেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ধুপগুড়ি মহকুমা হবেই। তিনি বলেন, আমি দেখছি, দেখব, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব, এসব বলতে পারতাম। কিন্তু আমি এক কথার মানুষ। বলে গেলাম যা, তা করে ছাড়ব।
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার ব্যাঙ্কে ডাকাতির চেষ্টা, অ্যালার্ম বেজে ওঠায় চম্পট দুষ্কৃতীদের
শনিবার প্রচারে এসেছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, অভিষেক সরকারের কে। তিনি কোন এক্তিয়ারে এই ঘোষণা করেন? মুখ্যমন্ত্রী বললে তবু একরকম বোঝা যেত। মন্ত্রিসভা কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে? এটা তো নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে।
সুজন ছাড়া দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম প্রচারে এসেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ওই মঞ্চ থেকেই সেলিমের সুরে রাজ্য থেকে বিজেপি, তৃণমূল হঠানোর ডাক দিয়েছেন। কংগ্রেস সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায়কে এখানে সমর্থন করছে। তৃণমূলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী মাটি আগলে পড়ে আছেন। বিজেপি প্রার্থী করেছে কাশ্মীরে নিহত সেনা জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায়কে। দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন ধুপগুড়িতে। এই আসন বিজেপি ধরে রাখতে পারবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। এখানকার বিজেপি বিধায়কের অকাল মৃত্যুতে উপনির্বাচন হচ্ছে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিজেপির লিড ছিল ১৭,৭৬৬ ভোট। দুবছর পর বিধানসভা ভোটে সেই ব্যবধান কমে দাঁড়ায় সাড়ে ৪ হাজারে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটে এখানে তৃণমূল ভালো ফল করেছে। লোকসভা ভোটে বিজেপির ভোট ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। তৃণমূল পেয়েছিল ৪১ শতাংশ। বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভোট কমে হয় ৪৫.৬৫% এবং তৃণমূলের ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩.৭৫%। তাই বিজেপির কাছে এই আসন ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের সংগঠন নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে।
বাম, কংগ্রেস ধূপগুড়িতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। প্রচারেও দুই দলকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। সিপিএম, কংগ্রেস নেতাদের দাবি, এখানেও সাগরদিঘি মডেলে ভোট হচ্ছে। জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোট হলেও বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে লোকসভা ভোটে কোনও জোট হবে না বলে সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। প্রচারে এসে সিপিএমের সেলিম, সুজন কিংবা কংগ্রেসের অধীর তৃণমূল, বিজেপি দুইয়ের বিরুদ্ধেই তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। বরং শনিবার তৃণমূল নেতা অভিষেক বাম, কংগ্রেসের নামে কিছুই বলেননি। তাঁর আক্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে ধুপগুড়ির ভোটের দিকে রাজনৈতিক মহলের নজর থাকছে। জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়ার আবহে এই প্রথম কোনও উপনির্বাচন হতে চলেছে। দেশের আরও কয়েকটি কেন্দ্রে ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপনির্বাচন আছে। কৌতূহল থাকছে সেগুলি নিয়েও।