কলকাতা: ধূপগুড়ি বিধানসভা (Dhupguri By Election) কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল। আড়াই বছরের ব্যবধানে বিজেপির হাত থেকে ধূপগুড়ি আসনটি ছিনিয়ে নিল শাসকদল। বড় ধাক্কা খেল বাম-কংগ্রেস জোট। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় ১৩ হাজার ৭৫৮টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে। তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সম্প্রতি ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুচন্দ্র রায়ের মৃত্যুতে ওই আসনে উপনির্বাচন হয়। বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোট গঠনের পর এই প্রথম কোনও উপনির্বাচন হল রাজ্যে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলের দিকে নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। এই ফলে লোকসভা ভোটের আগে অনেকটাই চাঙ্গা হল তৃণমূল। শাসকদল এই জয়কে ঘৃণা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উন্নয়নের এবং মানুষের জয় বলে উল্লেখ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধূপগুড়ির মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুক পোস্টে বলেন, এই জয় উন্নয়নের। তৃণমূল প্রার্থী জিতেছেন ৪৩০৯ ভোটে। মোট বৈধ ভোট ছিল ২ লক্ষ ১০ হাজার ৯৩৫ টি। নোটায় ভোট পড়েছে ১২২০টি ।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায় পেয়েছেন ৯৭ হাজার ৬৩১ ভোট। তিনি পেয়েছেন ৪৬.২৮ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপির তাপসী রায় পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৩০৪ভোট। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৪৪.২২ শতাংশ। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় মাত্র ১৩ হাজার ৭৫৮ ভোট পেয়েছেন। তাঁর ভোট ৬.৫২ শতাংশ। এদিন গণনা মাঝপথে থাকাকালীনই তিনি দলীয় সমর্থকদের নিয়ে গণনাকেন্দ্র ছেড়ে চলে যান।
আরও পড়ুন: ভারতীয় রেলের গতিশক্তি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর এয়ারবাসের
লোকসভা ভোটের আগে ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের এই ফল বিজেপির কাছে বড় ধাক্কা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিছুদিন আগে বঙ্গ সফরে এসে দাবি করেছিলেন, লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে বিজেপি অন্তত ৩৫টি আসন পাবে। ফল প্রকাশের পর তৃণমূল নেতারা সমাজ মাধ্যমে অমিতের দাবি নিয়ে নানা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি এই রাজ্য থেকে ১৮টি আসন পেয়েছিল। উত্তরবঙ্গের প্রায় সব কটি আসনই বিজেপি দখল করেছিল। সেবার ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির লিড ছিল ১৭ হাজার ৭৬৬। বিজেপি ৪৯ শতাংশ ভোট পায়। তৃণমূলের ভোট ছিল ৪১ শতাংশ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপির লোকসভা ভোটের সময়কার লিড কমে সাড়ে চার হাজারে চলে আসে। সেই বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ভোট বেড়ে ৪৩.৭৫ শতাংশ হয়। বিজেপির ভোট কমে ৪৫.৬৫ শতাংশে নেমে যায়। এবারের উপনির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের ভোট শতাংশ বেড়ে ৪৬.২৮ হয়। বিজেপির ভোট কমে ৪৪.২২শতাংশ হয়।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, উত্তরবঙ্গে বিজেপির পায়ের তলার মাটি অনেকটাই আলগা হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ভোটেও ধূপগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকাতেই তৃণমূল হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। হাল খুব খারাপ বাম-কংগ্রেস জোটের। তাদের প্রার্থীর জামানত জব্দ তো হয়েইছে। ভোট শতাংশও অনেক কমেছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই উপনির্বাচনে একই মঞ্চ থেকে ভাষণ দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁরা দুজনেই দাবি করেন, জাতীয় স্তরে ইন্ডিয়া জোট হলেও বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই জারি থাকবে। এদিন অধীর বলেন, ধূপগুড়িতে বাম-কংগ্রেসের সংগঠন দুর্বল ছিল। আমরা কখনও জিতব বলে দাবি করিনি। মহম্মদ সেলিম বলেন, কেন এই হার, তার পর্যালোচনা হবে দলীয় বৈঠকে।