ইস্ট বেঙ্গল–৩ নর্ধ ইস্ট ইউনাইটেড–৩
(ক্লেটন সিলভা–২, জাক জার্ভিস) (পার্থিব বড়ুয়া, জিতিন, ইমরান খান)
জেতা ম্যাচ কীভাবে মাঠে ফেলে আসতে হয় তার চমৎকার নিদর্শন রাখল ইস্ট বেঙ্গল। বুধসন্ধ্যায় সল্ট লেক স্টেডিয়ামে ৮৫ মিনিট পর্যন্ত ৩-২ গোলে এগিয়ে ছিল ইস্ট বেঙ্গল। ম্যাচ শেষ হতে তখন আর বেশিক্ষণ বাকি নেই। ইস্ট বেঙ্গল খেলছিলও ভাল। হঠাৎই ডিফেন্সের ভুলে একটা গোল খেয়ে গেল। এবারের আই এস এল-এ পর পর দুটো ম্যাচ জেতার একটা সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল লাল হলুদের সামনে। কিন্তু ফুটবলারদের দোষে সেটা হেলায় হারাল। জোড়া গোল করে লাল হলুদ অধিনায়ক এখন লিগের এক নম্বর স্কোরার। এদিনের পর তাঁর গোল সংখ্যা দাঁড়াল ১২। ম্যাচের সেরাও তিনি। কিন্তু দল জিতল না। সতেরো ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে নয় নম্বরেই থাকল ইস্ট বেঙ্গল। আর তাদের থেকে আরও দু ধাপ নীচে পড়ে রইল নর্থ ইস্ট। এই টিমটাকেই তাদের মাঠে গিয়ে হারিয়ে দিয়ে এসেছিল ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু নিজেদের মাঠে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হল।
নর্থ ইস্ট প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুটো গোল করে ফেলতে পারত যদি গোলকিপার কমলজিতের সঙ্গে করমদর্ন দূরত্বে কুলো পর পর দুটো গোলের সুযোগ নষ্ট না করতেন। চার গজের মধ্য থেকে তাঁর প্রথম শটটা বারের উপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটে তাঁর ফ্লিক পোস্টের অনেক দূর দিয়ে চলে যায়। ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্স তখন অবিন্যস্ত। কিন্তু দশ মিনিটের মধ্যে ক্লেটনের হেডে একটা গোল ম্যাচটার রং পাল্টে দেয়। বাঁ দিক থেকে সেন্টার করেছিলেন জেরি। ক্লেটনের হেড প্রথম পোস্টে থেকেও ধরতে পারলেন না অরিন্দম ভট্টাচার্য। গত বছরের ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক অরিন্দম তাঁর সেরা সময় পেরিয়ে এসেছেন অনেক দিনই। এখন যদি গ্লাভস জোড়া তুলে রাখেন তাহলে সম্মান নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবেন। আচমকা গোলটা খেয়ে গিয়ে নর্থ ইস্ট কিন্তু লড়াই করতে ছাড়েনি। লাল হলুদ মাঝ মাঠে এদিন মোবাশির আর সুহেরের বদলে নেমেছিলেন শৌভিক চক্রবর্তী এবং সুমিত পাসি। ওঁরা দুজনেই বেশ দৌড়লেন। পাসও বাড়ালেন অনেক। কিন্তু ডিফেন্সিভ ব্লকিং কিছু ছিল না। অ্যালেক্স লিমা এবং নাওরম মহেশ মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তাই নর্থ ইস্ট যখন আক্রমণ করছিল তখন মাঝ মাঠে কোনও প্রতিরোধ ছিল না ইস্ট বেঙ্গলের। উত্তর পূর্বের ফরোয়ার্ডরা তাই প্রায়ই লাল হলুদের বক্সের আশেপাশে হামলা করা শুরু করল। এবং তার পুরস্কার হিসেবে পর পর দুটো গোলও করে ফেলল দুই মিনিটের ব্যবধানে। প্রথমে বক্সের বাইরে থেকে ভলিতে গোল করলেন পার্থিব বড়ুয়া। তখন ম্যাচের বয়স তিরিশ মিনিট। দু মিনিট যেতে না যেতেই আবার গোল খেল ইস্ট বেঙ্গল। এবার একটা থ্রূ পাসে ফালাফালা হয়ে গেল ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্স। গোল করলেন জিতিন।
ম্যাচের উপর তখন নর্থ ইস্ট জাঁকিয়ে বসেছে। এই অবস্থায় ইস্ট বেঙ্গলকে ম্যাচে ফেরালেন জাক জার্ভিস। প্রায় সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার জার্ভিস থ্রো ইন থেকে উড়ে আসা একটা বলে ঘাড়ের কাছে দুজন ডিফেন্ডারকে নিয়ে ডান পায়ের ব্যাক ভলিতে দুর্দান্ত গোল করলেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় ম্যাচ। গোল প্রথম। ৪৭ মিনিটের ওই গোলে ইস্ট বেঙ্গল বিরতির আগে ২-২ করল। এবং বিরতির পর ৬৪ মিনিটে এগিয়েও গেল। ৬৪ মিনিটে ক্লেটন ছয় গজের মধ্যে ঢুকে গোল করতে গেলে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন প্রজ্ঞান। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি ক্লেটন। এই গোলেই ম্যাচটা শেষ হতে পারত। কিন্তু ৮৫ মিনিটে ইমরান আলির গোল লাল হলুদের জয়ের আশায় জল ঢেলে দিল। শেষের দিকে নর্থ ইস্টের হয়ে নেমেছিলেন হীরা মণ্ডল। গত বছরের লাল হলুদের হীরা এ বছর শুধুই পেতল। দল বদলের বাজারে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁকে। এটাই ফুটবল। দেয়ও যেমন। কেড়ে নেয়ও তেমন।