রাঁচি ও নয়াদিল্লি: ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণনের সঙ্গে দেখা করার সময় চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। সেই সঙ্গে তাঁর পদত্যাগের সম্ভাবনার পারদ আরও চড়ল। জল্পনার আগুন উসকে দিয়ে অনেকেরই ধারণা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফাপত্র দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রায় দুদিন ধরে ‘উধাও’ থাকার পর মঙ্গলবার দুপুরে রাঁচিতে ফেরেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এই অবস্থায় ইডি তাঁকে হন্যে খুঁজে বেড়ালেও জেএমএম নেতার সোমবার থেকে পাত্তা মিলছিল না। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের বেশ কয়েকজন কর্তাব্যক্তি ও সোরেন ঘনিষ্ঠের ফোন বন্ধ ছিল। আগামিকাল, বুধবার দুপুর ১টায় সোরেন ইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দিলেও আজ, রাঁচিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসছে সরকারি জোট। সেই বৈঠকে যোগ দিতেই এসেছেন তিনি বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: চণ্ডীগড়ে মেয়র পদে ‘বিতর্কিত’ জয় বিজেপির
এর আগেই জেএমএম, আরজেডি এবং কংগ্রেস বিধায়কদের রাঁচিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সরকারি কাজ লাটে ওঠায় মঙ্গলবার দুপুরে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিশ প্রধানকে রাজ্যপাল ডেকে পাঠান। রাজ্যপালের তলব পেয়েই পুলিশ-প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্তা রাজভবনে পৌঁছে যান। ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণন এদিন বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) মতো আমরাও মুখ্যমন্ত্রীর জবাবের জন্য অপেক্ষা করছি। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। সংবিধান মেনেই আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের সকলের উচিত আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা।
এদিনের বৈঠকে জোট নেতারা উপস্থিত থাকবেন এবং পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করা হতে পারে। আলোচনার মুখ্য বিষয় হতে পারে, হেমন্ত যদি গ্রেফতার হন, তাহলে রাজদণ্ড কার হাতে থাকবে? সেক্ষেত্রে হেমন্তর স্ত্রী কল্পনা সোরেনকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়ে সরকার পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
১০ বার ইডির তলব এড়ানোয় জমি কেলেঙ্কারিতে হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারির প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরজেডি এই ইস্যুতে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার পাশে রয়েছে। বিধায়ক সংখ্যায় ‘দুর্বল’ হলেও কংগ্রেস আপাতত সমর্থন দিচ্ছে জোটকে। ফলে সরকার পতনের মতো অবস্থা তৈরি হয়নি।
দিল্লি বিমানবন্দরের এককোণে মুখ্যমন্ত্রীর চার্টার্ড বিমানটি পড়ে রয়েছে। গতকাল ইডি মুখ্যমন্ত্রী বিএমডব্লু গাড়ি, কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে। কিন্তু, ‘বেপাত্তা’ মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রাজ্য বিজেপি তাঁর খোঁজ দিতে পারলে ১১ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। বৃদ্ধ ও অসুস্থ লালুপ্রসাদ যাদব গতকাল, সোমবার পাটনায় প্রায় ১০ ঘণ্টা ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু, সোরেন লুকিয়ে বেড়ানোয় বিষয়টি হাস্যকর পর্যায়ে চলে যায়। বিশেষত মুখ্যমন্ত্রীর দৈনন্দিন কাজ অচল হয়ে পড়ে।
জেএমএমের সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র বিনোদকুমার সিং বলেন, আমরা আজই জরুরি বৈঠকে বসছি। চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে শরিকদের সঙ্গে। ভবিষ্যৎ পদক্ষেপও চূড়ান্ত করা হবে। উল্লেখ্য, সোরেনকে জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তার কারণে রাঁচিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন, রাজভবন এবং ইডি অফিসের ১০০ মিটার দূরত্বে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
জেএমএমের বিধায়করা সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত সোরেনের দিল্লিস্থিত সরকারি বাসভবনে বসেছিলেন। এদিনের মধ্যেই তাঁদের সকলকে রাঁচিতে চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। দলের তরফে ইডির তৎপরতাকে অসাংবিধানিক বলা হয়েছে।
অন্য খবর দেখুন