হায়দরাবাদ এফ সি–১ এটিকে মোহনবাগান–০
(ওগবেচে)
ম্যাচ শুরুর আগে হায়দরাবাদের প্লেয়ার্স লিস্টে ওগবেচের নামটা দেখলাম রিজার্ভ লিস্টে। ভাবলাম এটা হয়ত তাদের কোচ মানালো মার্কুয়েসের কোনও স্ট্রাতেজি হবে। দলের এক নম্বর স্ট্রাইকারকে বিরতির পর ব্যাবহার করা হবে। নাইজিরিয়ান ওগবেচে নামলেন ম্যাচের ৭৮ মিনিটে। আর তার ছয় মিনিট পরেই গোল করে ফেললেন। ওই গোলেই জিতে গেল তাঁর টিম। আর মাত্র সতেরো (১২ মিনিটের সঙ্গে সংযুক্ত সময়ের পাঁচ মিনিট) মিনিট মাঠে থেকেই ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়ে গেলেন ৩৮ বছর বয়সী ওগবেচে। বহু দিন ধরে খেলছেন আই এস এল-এ। আগে মুম্বই সিটিকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। গত বছর করেছেন হায়দরাবাদকে। এদিনের গোল নিয়ে আই এস এল-এ তাঁর গোল হয়ে গেল ৬১। আর এই জয়ে হায়দরাবাদের পয়েন্ট হল ১৮ ম্যাচে ৩৯। তারা আছে দু নম্বরে। ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্টেই আটকে রইল মোহনবাগান। তারা রইল চার নম্বরে। বাকি আর দুটো ম্যাচ। তার পরেই প্লে অফ। তবে মোহনবাগানের পারফরম্যান্স গ্রাফটা যেভাবে নামছে তাতে প্লে অফ-এ ভাল কিছুর আশা না করাই ভাল।
তবে মঙ্গলবার হায়দরাবাদের ঘরের মাঠে মোহনবাগান খেলল ভাঙা দল নিয়ে। নানারকম কারণে দলে ছিলেন না হুগো বুমু, কার্ল ম্যাকহিউ, শুভাশিস বসু, আশিক কুরুনিয়নরা। খানিকটা জোড়াতালি দিয়ে দল নামিয়েছিলেন জুয়ান ফেরান্দো। মরসুম শেষ হওয়ার আগেই তাঁর চাকরি যাওয়ার খবর ঘুরছে বাতাসে। সের্গেই লেবেরার নাম ভাসছে। এই অবস্থায় লিগের শেষ ল্যাপে এসে টিম নামাতেই হিমসিম খাচ্ছেন স্প্যানিশ কোচ। চার ব্যাকের বদলে তিন ব্যাকে খেলালেন দলকে। প্রীতম কোটাল, ব্রেন্ডন হামিলের সঙ্গে স্লাভকো। শেষোক্তজন এই প্রথম শুরু থেকেই। বিশাল চেহারা। বলশালী ফুটবল। কিন্তু ধংসাত্মক। কোনও ক্রিয়েটিভিটি নেই। মাঝ মাঠে গ্লেন মাটিন্স, আশিস রাই, পুয়েতিয়া এবং গালেগো। সামনে দিমিত্রি পেত্রাতোসের সঙ্গী মনবীর সিং এবং লিস্টন কোলাসো। এদিন দুজনকে একটু ভিন্নভাবে ব্যবহার করলেন ফেরান্দো। মনবীরকে বাঁ দিক দিয়ে, কোলাসোকে ডান দিক দিয়ে। তাতে যে খুব ভাল কিছু হল বলা যাবে না। আসলে মরসুমের শুরু থেকে জেনুইন স্ট্রাইকার না থাকার সমস্যা ভোগাচ্ছে ফেরান্দোকে। নিজেই দল গড়েছেন। রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামসকে বাদ দিয়েছেন। ভেবেছিলেন মাঝ মাঠের প্লেয়ারদের নিয়ে বাজিমাৎ করবেন। সেই সিদ্ধান্তটাই ব্যাকফায়ার করে গেল।
সারা ম্যাচে পেত্রাতোসরা গোলে বেশ কয়েকটা শট নিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো গোলে ঢুকতে দেননি হায়দরাবাদ গোলকিপার গুরমিত সিং চহাল। সার্কিটে এই ছেলেটা নতুন। কিন্তু তাঁর খেলা দেখে বোঝবার উপায় নেই। বেশ স্মার্ট গোলকিপিং। আউটিংটাও ভাল। এত বড় একটা টিমের গোলকিপার হওয়ার মতো মানানসই। আর হায়দরাবাদের হয়ে দুর্দান্ত খেললেন তাদের অধিনায়ক ইয়াসির। বেশ কয়েকটা শটও ভালই নিলেন। সেগুলো রখলেন বিশাল কাইথ। আসলে মোহনবাগানের খেলার মধ্যে এক্স ফ্যাক্টরটাই উধাও। টিমটা সারাক্ষণ দৌড়ল। কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়াই করল। কিন্তু গোল করার লোক কোথায়? গোল হবে কী করে?
গোল কী করে হয় তা দেখাল হায়দরাবাদ। বা আরও স্পষ্ট করে বললে ওগবেচে। ৭৮ মিনিটে নামলেন। গোল করলেন ৮৪ মিনিটে। বক্সের বাইরে একটা বল পেয়ে ডান পায়ের ভলিতে বল রাখলেন গোলে। বিশাল তাঁর শরীর ছুড়ে দিয়েও আটকাতে পারলেন না। বলটা এত কোণাকুণি ছিল যে কিছু করা গেল না। বাগানের বাকি আর দুটো ম্যাচ। কেরালা ব্লাস্টার্স এবং ইস্ট বেঙ্গল। দুটোই সল্ট লেকে। এই দুটো ম্যাচ জিততে পারলে হয়তো ফেরান্দোর চাকরি বেঁচে যাবে। নাহলে হয়তো আগামি মরসুমে নতুন কোচ পাবে মোহনবাগান।