নয়াদিল্লি: গঙ্গা বিলাস প্রমোদতরী উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বের দীর্ঘতম বিলাসবহুল ক্রুজ এই গঙ্গাবিলাস ৫১ দিনে প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে। শুক্রবার যাত্রা শুরু হল। ৩২ জন সুইৎজারল্যান্ডের বাসিন্দা প্রথম সফরের যাত্রী। অনেক দর্শনীয় স্থান নদীপথে ভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে বিলাসবহুল এই তরী।
ভূপেন হাজারিকার (Bhupen Hazarika) সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে আসে, গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা। আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা, যমুনা। তাঁর গানে ভারত ও বাংলাদেশের নদীর কথা অমর হয়ে আছে। এবার প্রমোদ তরীতে দুই দেশের ২৭টি নদী ভ্রমণের সুযোগ সামনে এল। ভারতের ও বাংলাদেশের প্রকৃতিকে জলপথে এভাবে উপভোগ করার সুযোগ আগে সামনে আসেনি।এটা নতুন দিগন্তের সূচনা করল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করলেন। এমভি গঙ্গা বিলাস (MV Ganga Vilas) নামে ওই প্রমোদতরীকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম পথ অতিক্রম করার ভ্রমণ তরী (worlds longest river cruise)।
বারাণসী থেকে বাংলাদেশ। গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র। উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ঢাকা। একসূত্রে পরখ করার সুবর্ণ সুযোগ। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি গঙ্গা বিলাস নামে ওই ক্রুজে চেপে বারাণসী থেকে গঙ্গা দিয়ে পাটনা, মুর্শিদাবাদ, ভাগীরথী, হুগলি নদী হয়ে ঢাকা, অসম। বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়, সারনাথ মঠ, হাজারদুয়ারি প্যালেস, কাটরা মসজিদ, বেলুড়মঠ, সুন্দরবন, ঢাকা এক যাত্রায় সব কছুই দেখার সুযোগ। জাহাজে উঠলে সুন্দরবনের বাঘের দেখা মিলতে পারে। রংবেরংয়ের পাখির ওড়া দেখা যাবে। হরেক কিসিমের মাছের দেখা মিলতে পারে। প্রতিটি জলপথের ঘাটগুলিতে সেখানকার স্থানীয়দের জীবন যাত্রা পরখ করা যাবে। ভারত নদী মাতৃক দেশ। তার মধ্য অন্যতম প্রধান গঙ্গানদী। সেই নদী দিয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে পূর্বভারতের জনজীবনকে ছুঁয়ে দেখে এর যাত্রা শুরু হবে।
এটি ছাড়াও তাঁবুর উদ্বোধন সহ একাধিক জলযানের শিলান্যাস (Foundation Stones) ও বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন হবে শুক্রবার। যার জন্যে ১০০০ কোটি টাকার (One 1000 Crore) বেশি খরচ করা হচ্ছে। বারাণসীতে (Varanasi) গঙ্গার ঘাটে এজন্য একটি তাঁবু তৈরি করা হচ্ছে। এমভি গঙ্গা ভিলা ৫১ দিনে ৩২০০ কিলোমিটার যাবে। বারাণসী থেকে যাত্রা শুরু করে ডিব্রুগড়ে শেষ হবে।
কী আছে ওই প্রমোদতরীতে?
তিনটি ডেক আছে। ১৮টি স্যুট সহ বিলাসবহুল ভ্রমণতরী। কাচ দিয়ে বাইরে ভিউয়ের ব্যবস্থা আছে। প্রাচীন সংস্কৃতিকে বজায় রাখতে সেরকমই খাবারেরও আয়োজন করা হয়েছে। ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে ভিতরটি। এটি দূষণহীন। ৬২ মিটার লম্বা ও ১২ মিটার চওড়া।
এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমাদের সাংস্কৃতিক রুটের সঙ্গে যোগ সাধনের জন্য এটি অনন্য। ভারতের বৈচিত্রের সুন্দর ক্ষেত্রগুলিকে আবিষ্কার করার সুযোগ এখানে। ভারতের নদীগুলিতে পর্যটন হোক, ব্যাবসা হোক। সেজন্য এই আধুনিক ক্রুজ তৈরি হয়েছে। যেখানে আমরা এগিয়ে চলেছি দ্রুত গতিতে। সমস্ত বিলাসবহুল ব্যবস্থা মজুত রাখা হয়েছে ওই ক্রুজে।
৫০টি টুরিস্ট স্পট ঘোরা যাবে। জাতীয় উদ্যান (National Park), হেরিটেজ সাইট (Heritage Site) দেখা যাবে। বড় শহরগুলিকে ছোঁয়া। ওই জার্নির মধ্য দিয়ে ভারতের সংস্কৃতি, ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা চাক্ষুষ করার জন্য সেরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সব মিলিয়ে এটা পর্যটনে নতুন যুগের সূচনা করল। সারনাথ (Sarnath), মায়ং (Mayong), মাজুলি (Majuli), বিহার স্কুল অফ যোগা (Vihar School of Yoga) ও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে (Vikram Shila University) ঘোরার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা।
এখনও অনেক আবিষ্কারের বাকি রয়েছে। এর মধ্যে হয়তো নতুন কিছু উঠে আসবে। নীরদচন্দ্র চৌধুরী লিখেছিলেন “অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’। “আননোন ইন্ডিয়া’তে (অজানা ভারতকে) নতুন করে আবিষ্কারের অপেক্ষায় রয়েছেন পর্যটকরা।