সম্ভবত এই প্রথমবার কলকাতা সেভাবে পাত্তাই দিচ্ছে না রোহিত শর্মা, বাবর আজমদের৷ প্রায় আড়াই বছর পর ডার্বি ফিরেছে তিলোত্তমায়৷ ফলে যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে৷ হুয়ান ফেরান্দো আর স্টিফেন কন্সন্ট্যান্টাইনের কাছে ম্যাচের আগেই হেরে বসে আছে কোহলি- কাদিররা, অন্তত এই শহরে৷
আর পাঁচটা রবিবারের থেকে আজকের দিনটা আলাদা৷ আজ
সন্ধে ছ’টায় যুব ভারতীতে ডার্বি শুরুর ঘন্টাখানেক পর, সাড়ে সাতটা নাগাদ পাকিস্তানকে ধুইয়ে দিতে ভারত নামবে মরুশহর দুবাইয়ে৷ এমন জোড়া ফূর্তির দিন সহজে মেলে না৷ বাঙালি আজ সাময়িক ছুটি নিয়েছে পার্থ, অনুব্রত, অর্পিতার টাকার পাহাড় থেকে৷ পাশাপাশি সেভাবে ফিরেও তাকাচ্ছে না দুবাইয়ের দিকে৷ বাঙালি আজ নিখাদ ঘটি অথবা বাঙাল৷ মরশুমের প্রথম ডার্বির উন্মাদনা আজ বাঙালির শিরায় শিরায়৷ যত কঠিনই হোক, বাঙালি আজ অবলীলায় আওড়াচ্ছে লিস্টন কোলাসো, ফ্লোরেন্তিন পোগবা, হুগো বুমোস, লালচুংনুঙ্গা, কারালাম্বোস কিরিয়াকু, লালরিনজুয়ালার নাম৷ আজ বাংলার ঘরে ঘরে কিলবিল করছে ফুটবল বিশেষজ্ঞ৷ ফেরান্দো অথবা কন্সন্ট্যান্টাইন যে আদৌ ফুটবল বোঝে না, বোদ্ধা- বাঙালি আজ তা বুঝিয়ে ছাড়বে ডার্বি শেষের পর মুহুর্তেই৷ তবে এখনও ধরা যাচ্ছে না,বাঙালি আজ ঠিক কার মাথা হাড়িকাঠে চড়াবে৷
আইএসএলের হাত ধরে ফুটবলের বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গিয়েছে ঢের আগেই৷ কলকাতার মাঠে ইস্টবেঙ্গল -মোহনবাগান খেলতে নামলেও আকাশ-বাতাস কাঁপানো বাঙালি ফুটবলার আজ দেখা যাবে না৷ ফলে কিছুটা হলেও পিছু হঠেছে বাঙালির চিরন্তন ফুটবল আবেগ৷ বড় ম্যাচের উন্মাদনা, উচ্ছ্বাস এখন অনেকটাই ফিকে। তবে যেহেতু ডার্বি, যেহেতু ইলিশ-চিংড়ি এবং যেহেতু লাল-হলুদ বনাম সবুজ- মেরুন, তাই অন্য একটা আবেগ আজ খচখচ করবেই৷ তাই আজকের সুপার- সানডে দখল করে নিয়েছে ঘটি- বাঙালরা৷ খেলার আগেই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের কাছে দশ গোলে হেরেছে ভারত- পাকিস্তান মহারণ।
ডার্বির আগের দিনের ওই আকাশভাঙ্গা বৃষ্টি বানচাল করেছে ফেরান্দো-কন্সন্ট্যান্টাইনের শেষমুহুর্তের অনুশীলন৷ মোহনবাগান শনিবার ম্যাচের আগে ফাইনাল প্র্যাকটিশের কিছুটা সুযোগ পেলেও ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তুতি ভাসিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি৷ তবে দুই কোচই ছক সাজিয়ে ফেলেছেন৷ বিশ্ব ফুটবলে এখন ‘ট্রেণ্ডি’ ক্লোজড ডোর প্র্যাকটিশ৷ ফেরান্দো-কন্সন্ট্যান্টাইন এখানেও সেই ধারা আমদানি করেছেন৷ ফলে বিদেশি দুই কোচের কৌশল এখন আর প্রকাশ্যে আসার সুযোগ নেই৷
শনিবার দুই প্রধানেরই ক্লোজড ডোর প্র্যাক্টিস ছিল। হুয়ান ফেরান্দোর দল অনুশীলন সেরে নেয়। দুপুর নাগাদ লাল-হলুদের প্র্যাক্টিস রেখেছিলেন কন্সন্ট্যান্টাইন, কিন্তু ইলিশের অনুশীলনে বাদ সাধে বৃষ্টি। বিকেলে দুই ক্লাব তাঁবুতেই দেখা যায় ঝড়, জল মাথায় করে হাজির শয়ে শয়ে ভক্ত। টিকিটের হাহাকার৷ তবুও সন্ধে পর্যন্ত ইস্ট-মোহন ক্লাবের বাইরে লোকে লোকারণ্য। আগে দেখা যেত, বড় ম্যাচের আগের বিকেলের দলের ফাইনাল প্র্যাকটিসে টাটকা ইলিশ, চিংড়ির ছড়াছড়ি৷ শোনা যেত ময়দানি ছড়া বেনজির জয়ধ্বনি৷ গোলের আকুতি৷ ফুটবল আধুনিক হয়েছে, এখন এসব অতীত।
ডুরান্ড-ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দুই প্রধানই জয়ের মুখ দেখেনি। কন্সন্ট্যান্টাইনের ইস্টবেঙ্গল দুটো ড্র করেছে, ফেরান্দোর মোহনবাগান তো এক ম্যাচে হেরেছে আর অন্যটি ড্র। তাই ডার্বিতেই দুই প্রধানই জয়ের মুখ দেখতে চাইছে৷ ডুরান্ডে এখনও তেমন খেলতেই পারেনি ইস্টবেঙ্গল। দেরিতে দল তৈরি হওয়ায় ফুটবলারদের মধ্যে তেমন বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে সামনে মোহনবাগান, তাই বাড়তি চাপ রয়েছে৷ শেষ ছ’টা ডার্বিতেও জয় পায়নি ইস্টবেঙ্গল। তাই এই ম্যাচ ঘিরে লাল-হলুদ সদস্য, সমর্থকদের উৎসাহ তুঙ্গে।
মোহনবাগান তবু প্রস্তুতি ম্যাচে মহমেডানকে হারিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল প্রস্তুতি ম্যাচেও জিততে পারেনি। যে তিনটি ম্যাচ লাল-হলুদ এখনও পর্যন্ত খেলেছে, একটিতেও গোল করতে পারেনি। ওদিকে সবুজ-মেরুন ৪ গোল খেলেও দিয়েছে ৩টি। ওদিকে প্রশ্নও উঠছে, ডার্বিতে দুই প্রধানের প্রথম একাদশ কেমন হবে? কে হতে পারেন কালো ঘোড়া? কে মারবেন এই ম্যাচ?
ময়দানের চেনা স্লোগান, ‘যতবার ডার্বি/ ততবার হারবি’৷ আর কয়েক ঘন্টা পরই জানা যাবে, কারা গলার শির ফুলিয়ে এই আওয়াজ তোলে ৷