কন্যা সন্তান তাই বাবা মা অবহেলা করেন। মারধর করা হয়। পড়াশোনা থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন। বাবার অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতে বাড়ি থেকে পালিয়েছি। আর বাড়ি ফিরতে চাই না। কলকাতা হাইকোর্টে জমা পড়া ডিজির রিপোর্ট এক কিশোরীর ওই বয়ান দেখে হতবাক বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা।
কালিয়াগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা ইসপিন্দর শেখ। তার ১৪ বছরের কন্যা আমিনা খাতুন (নাম পরিবর্তিত)। ইসপিন্দরের অভিযোগ, চলতি বছরের ১৭ জুলাই আমিনা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। প্রতিবেশী রাজিবুল মুন্সি অসৎ উদ্দেশ্যে আমিনাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। নির্দিষ্ট ওই বয়ানে কালিয়াগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ইসপিন্দর। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আমিনার বাবা। তাঁর দাবি মেয়েকে পুলিশ উদ্ধার করেছে কিন্তু তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। পাশাপাশি আরও অভিযোগ ছিল মেয়ের কোনও মেডিক্যাল টেস্ট হয়নি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ আনা হয়নি। ঘুষের বিনিময় তদন্ত করছে তদন্তকারী অফিসার। ফলে সঠিকভাবে তদন্ত হচ্ছে না। তাই আদালত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।
বিচারপতি মান্থা নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিজিকে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই নির্দেশ মত মঙ্গলবার হাইকোর্টে রাজ্য পুলিশের ডিজি অমিত মালব্য আদালতে রিপোর্ট জমা দেন। সরকারি আইনজীবী শুভব্রত দত্ত আদালতে জানান, ২৫ জুলাই দেবগ্রাম থেকে আমিনাকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর মেডিক্যাল অফিসারের কাছে পরীক্ষা করাতে অস্বীকার করে আমিনা। সেই নথি আদালতে জমা করে পুলিশ। পাশাপাশি মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে আমিনার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। সেই নথিও আদালতে জমা করে পুলিশ।
আইনজীবী দত্ত আদালতকে আরও জানান, গোপন জবানবন্দিতে আমিনা জানিয়েছে কন্যা সন্তান তাই বাবা মা অবহেলা করেন। মারধর করে। পড়াশোনা থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছেন। বাবার অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতেই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। রাজিবুলের সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক। তাই বাবার অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পেতেই সে রজিবুলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
ডিজির রিপোর্ট দেখার পর ক্ষুব্ধ বিচারপতি আবেদনকারী ইসপিন্দর শেখ-এর আইনজীবীকে বলেন, আপনারা আদালতকে বিভ্রান্ত করছেন। এরপর বিচারপতির নির্দেশ পুলিশ তদন্ত করবে যদি আবেদনকারী কোনও মিথ্যা জবানবন্দি বা মিথ্যা অভিযোগ করে থাকেন তবে পুলিশ আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।