নয়াদিল্লি: মহিলাদের মসজিদে গিয়ে নমাজ পড়ায় কোনও বাধা নেই বলে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) জানাল, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB) । এই সংক্রান্ত একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ল বোর্ড গত বুধবার শীর্ষ আদালতে একটি হলফনামা পেশ করেন। সেই হলফনামায় বোর্ড বলে, ইসলামিক ধর্মে মহিলাদের মসজিদে (Mosque) নামাজ (Prayer) পড়ার ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ফারহা আনোয়ার হুসেন শেখ নামে পুণের এক বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, মুসলিম মহিলাদের মসজিদে প্রবেশের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা ‘বেআইনি’ বলে ঘোষণা করা হোক। সেই মামলার সূত্রেই বোর্ড ওই কথা জানিয়ে হলফনামা দেয় শীর্ষ আদালতে।
কী সেই মামলা ?
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হুসেন শেখ দুই আইনজীবী সন্দীপ তিওয়ারি ও রামেশ্বর গয়ালের মাধ্যমে একটি পিটিশন দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, মুসলিম মহিলাদের (Muslim Women) মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১, ২৫ এবং ২৯ ধারার পরিপন্থী তাই ওই প্রথাকে বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করুক শীর্ষ আদালত। হুসেনের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করুক।
হুসেনের আবেদনে আরও বলা হয়, কোরান বা নবী মহম্মদ মহিলাদের মসজিদে প্রবেশের বিরোধিতা করেছেন, এমন কোনও নথি পাওয়া যায়নি। এছাড়া মক্কা ও মদিনাতেও লিঙ্গ বৈষম্যকে গুরত্ত দেওয়া হয় না। সেখানে মহিলা পুরুষ নির্বিশেষ সকলেই যেতে পারেন। উভয়ে মিলেই কাবাকে প্রদক্ষিণ করে উপাসনা করে। হুসেন তাঁর আবেদনে আরও দাবি করেন, মহিলা এবং পুরুষদের যেন আদালাদা না করে ‘মুসল্লায়’ উপসানা করার সুযোগ পায়।
এই প্রসঙ্গেই আবেদনে কেরলের সবরিমালা মন্দিরে সমস্ত হিন্দু পুণ্যারথির প্রবেশের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট যে রুল দিয়েছিল তারও উল্লেখ করা হয়েছে। শীর্ষ আদালত ১০-৫০ বছর বয়স্ক মহিলাদের ওই মন্দিরে প্রবেশাধিকারে যে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে তা, সংবিধানের ২৫ ধারার পরিপন্থী, তাও বলা হয়েছে আবেদনে।
আরও পড়ুন: Bihar Incident: প্রেমিকের গুলিতে মৃত্যু বিহারের মহিলা পুলিশকর্মীর, অধরা মূল অভিযুক্ত
মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড তাদের হলফনামায় বলেছে, ইসলাম ধর্মে মহিলাদের মসজিদে নমাজ পড়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই ঠিকই তবে, মহিলা এবং পুরুষদের এক সঙ্গে সেখানে ঢোকা নিষেধ। হলফনামায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, হুসেনের আবেদনে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্যও দেওয়া হয়েছে। মক্কা এবং মদিনায় মহিলারা পুরুষদের সঙ্গে হজ বা উমরাহ পালন করতে পারেন না। এর ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বোর্ডের হলফনামায় দাবি করা হয়, হাদিসে বলা হয়েছে নারী-পুরুষের একসঙ্গে নামাজ না পড়ার বিষয়টি সকলেই মন থেকে মেনে নিয়েছেন। পয়গম্বরের সময় থেকেই মক্কায় মসজিদ আল হারামের পাশে যত মসজিদ আছে, সেগুলিতে নারী-পুরুষ একসঙ্গে ঢুকতে পারত না। বোর্ড দাবি করেছে, ইদের নামাজে কখনও ইসলাম ধর্ম নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করে না। তবে একটাই শর্ত, মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বোর্ডের মতে, মুসলিম মহিলাদের পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়তে হবে, ইসলাম ধর্মে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি, প্রতি শুক্রবার নামাজ পড়ার ক্ষেত্রেও মহিলারা বাধ্য নন। বোর্ড মনে করে, এই বিষয়ে আদালতের মাথা না ঘামানোই উচিত। কারণ বিষয়টি একান্তই ধর্মীয় বিশ্বাসভিত্তিক। এ ব্যপারে আদালত হস্তক্ষেপ করলে তা ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল হবে।