সিডনি: বলেশ ধনকরকে চেনেন? না চেনারই কথা, তিনি এদেশের বাসিন্দা নন। বলেশ অস্ট্রেলিয়ায় বিজেপির অত্যন্ত সক্রিয় কর্মী। সে দেশে ‘ওভারসিজ ফ্রেন্ডস অফ বিজেপি’ (Overseas Friends of BJP) নামে এক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। এক সময় অস্ট্রেলিয়ায় হিন্দু কাউন্সিলের (Hindu Council of Australia) সহযোগী ছিলেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) যখন ক্যাঙারুর দেশে গিয়েছিলেন, সেই সময় তাঁকে অভ্যর্থনা সহ যাবতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে অন্যতম ভূমিকা ছিল বলেশের। এহেন ব্যক্তি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১৩ দফা যৌন নির্যাতন, ১৭ দফা অনুমতি ছাড়া ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের রেকর্ডিং এবং ছয় দফা নেশার দ্রব্য ব্যবহার করে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
মোদির ২০১৪ সালের সফরের সময় তাঁর খুব কাছাকাছিই ছিলেন এই বলেশ। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বেশ গর্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে হিন্দু কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে বহু অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছেন অজিভূমের বিজেপি নেতা। তার মধ্যে ছিল সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় (Sydney University) এবং সিডনি হারবার ব্রিজে ‘পারস্পরিক ধর্মীয় বিশ্বাস’ নিয়ে সেমিনারও।
পুলিশ জানিয়েছে, চাকরির ইন্টারভিউয়ের টোপ দিয়ে পাঁচ মহিলাকে হিলটন হোটেলে ডেকে এনে ধর্ষণ করেছিলেন বলেশ। তা আবার অ্যালার্ম ঘড়ির মধ্যে লুকনো ক্যামেরায় ভিডিয়ো রেকর্ড করেছিলেন। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় কমিউনিটি র্যালি (Community Rally) করেছিলেন মোদি। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে ইয়াদু সিং নামে তাঁর সম্প্রদায়ের এক প্রবীণ ও শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওই র্যালির আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলেশ ধনকরের।
আরও পড়ুন: Privilege Motion Against Modi | মোদির বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব কংগ্রেসের, সংসদ মুলতুবি
ইয়াদু সিং নামে ওই ব্যক্তি এও বলেন, কয়েক বছর আগে একটি কমিউনিটি সংবাদপত্রে বলেশের নোংরা কীর্তিকলাপ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মানুষজন সে সময় তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ইয়াদু বলছেন, এই সব অভিযোগ অবশ্যই গুরুতর এবং অস্ট্রেলীয় আইন ব্যবস্থা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড কাগজে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, অল্পবয়সী কোরিয়ান মেয়েদের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল বলেশের। কোরিয়ান এবং ইংরেজি জানা মেয়েদের দুসলিয়ে আনতে অনুবাদকের চাকরির বিজ্ঞাপন দিতেন প্রায়ই। এরপর তাঁদের হিলটন হোটেলের পানশালায় নিয়ে যেতেন। সিডনিতে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের খুব কাছেই ছিল এই হোটেলটি। ইন্টারভিউয়ার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া এবং মিথ্যে বলে, এবং মাদক প্রয়োগ করে তরুণীদের সঙ্গে যৌনাচার করা ছিল বলেশের এক বিশেষ শখ, বলছে রিপোর্ট।
হেরাল্ডের রিপোর্ট এও বলছে, আদালতে হওয়া শুনানিতে এক তরুণী জানিয়েছেন, তিনি বলেশের সঙ্গে আইসক্রিম এবং ওয়াইন খাওয়া পর্যন্ত মনে করতে পারছেন। তারপর তাঁর হুঁশ ফেরে গভীর রাতে বয়ফ্রেন্ডের ফোনে। সে সময় ওই তরুণী আবিষ্কার করেন, তাঁর শরীরে পোশাকের লেশমাত্র নেই এবং তখনও তাঁর মধ্যে ঝিমুনি ভাব। সেই সঙ্গে শরীরে রয়েছে অস্বস্তি ও যন্ত্রণা এবং পাশে পড়ে রয়েছে কন্ডোমের প্যাকেট।
আদালতের জুরিকে শুনানিতে বলা হয়েছে, এশীয় এবং কোরিয়ান মেয়েদের অচেতন অবস্থায় ছবি তোলা ও ভিডিয়ো রেকর্ড করা বলেশের এক বিশেষ শখ। উল্লেখ্য, বলেশের আইনজীবী রেবেকা মিচেলের দাবি, তরুণীদের অনুমতিক্রমেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন তাঁর মক্কেল। বলেশ নিজেও অনুমতি ছাড়া এবং মাদক প্রয়োগ করে ছবি ও ভিডিয়ো তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এদিকে পুলিশ আধিকারিক ক্যাটরিনা গাইড আদালতে জানিয়েছেন, বলেশের ব্যাগ থেকে একটি হার্ড ড্রাইভ পাওয়া গিয়েছে, যাতে এই ধরনের ৪৭টি ভিডিয়ো রয়েছে।