কণাদ দাশগুপ্ত: বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না কংগ্রেসের৷ দলের সভাপতি নির্বাচন কবে হবে দিয়ে যে বিতর্কের সূত্রপাত, তা এখন ঠেকেছে সভাপতি নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে কেন্দ্র করে৷ পাশাপাশি ভোটার তালিকার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা৷ প্রশ্ন উঠেছে, সভাপতি পদে নির্বাচনের স্বচ্ছতা কেন বজায় রাখা হচ্ছে না? প্রসঙ্গত, আগামী ১৭ অক্টোবর কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে৷ ১৯ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হবে। তার প্রস্তুতি পর্বই অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের উত্তাপে ফুটছে৷
এখানেই শেষ নয়৷ একইসঙ্গে দলের সর্বস্তরে জোর জল্পনা, কে হবেন কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি? তা নিয়েও জোরদার বিতর্ক৷ গান্ধী পরিবারের কেউই এই পদ নিতে রাজি নন৷ তবুও মল্লিকার্জুন খড়গে-সহ কংগ্রেসের একাধিক নেতা রাহুল গান্ধীকেই ফের সভাপতি পদে দেখতে চান। ওদিকে ভেসে উঠছে অন্য একাধিক নামও৷ অশোক গেহলট থেকে শশী থারুর, মণীশ তিওয়ারি থেকে কুমারী শৈলজা, সবাই-ই নাকি সভাপতি হতে চান৷ সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন মনোনয়ন দাখিলের৷ যদি শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সভাপতি পদে ভোট হয়, তাহলে তা হবে ২২ বছর পর৷ ২০০০ সালে সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে সভাপতি নির্বাচনে লড়েছিলেন জিতেন্দ্র প্রসাদ৷ সেই ভোটে সোনিয়া গান্ধী পেয়েছিলেন ৭৫৪২ ভোট, জিতেন্দ্র প্রসাদের পক্ষে যায় ৯৪টি ভোট। তার আগে ১৯৯৭ সালেও সভাপতি পদে ভোট হয়েছিল। সেবার সীতারাম কেশরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন শরদ পওয়ার এবং রাজেশ পাইলট। ওই নির্বাচনে কেশরীর বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় কারচুপি করার অভিযোগ উঠেছিল৷ এবারও স্বচ্ছ্বভাবে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কংগ্রেসের অন্দরেই।
জাতীয় কংগ্রেস সূত্রের খবর, সোনিয়া গান্ধী নাকি চাইছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট দলের সভাপতি হোন৷ তিরুবনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরও নাকি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক৷ মালায়ালাম দৈনিক ‘মাতৃভূমি’-তে তাঁর লেখা একটি প্রতিবেদন ঘিরেই এই জল্পনা ভেসে উঠেছে৷ ওই প্রতিবেদনেই থারুরের দাবি, শুধু সভাপতি নয়, ওয়ার্কিং কমিটির অন্যান্য পদের জন্য নির্বাচন ঘোষণা করা উচিত ছিল। এমন হলে কংগ্রেস নেতাদেরই গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলে মতামত তাঁর। থারুর লিখেছেন, ‘কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অন্তত ১২ টি আসনে নির্বাচন করানো দরকার ছিল।
তবে এ সংক্রান্ত সব বিতর্ককে পিছনে ফেলে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি। একাধিক টুইটে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদের নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়েই গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন৷ তিওয়ারি স্পষ্ট অভিযোগ, কংগ্রেস সভাপতি পদের নির্বাচনের ভোটার তালিকা অর্থাৎ যাঁরা সভাপতি নির্বাচিত করবেন, তাঁদের নাম ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিবরণ প্রকাশ করা হচ্ছে না৷ প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে তিওয়ারি চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেসের সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান মধুসূদন মিস্ত্রির কাছে৷ চিঠিতে তিওয়ারি লিখেছেন, কোনও ভোটে ভোটারদের তালিকা না থাকলে সেই ভোট কিছুতেই অবাধ ও স্বচ্ছ হতে পারে না৷
টুইটে তিওয়ারির দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন করতে হলে জাতীয় কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে নির্বাচকদের তালিকা সকলের সামনে আনা অত্যন্ত দরকার। কিছুদিন আগে দলত্যাগী নেতা গুলাম নবি আজাদও অভিযোগ করেছিলেন, কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের বিষয়টি পুরো লোকদেখানো। জানার উপায় নেই কারা এই নির্বাচনের ভোটার৷ তবে আজাদের অভিযোগ উড়িয়ে সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান মধুসূদন মিস্ত্রি জানিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে এই নির্বাচকদের তালিকা রয়েছে।পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিওয়ারির টুইট, কেউ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তবে তাঁর জানা দরকার কারা নির্বাচক বা ভোটার৷ এটা সাংবিধানিক রীতিও৷ ভোটার তালিকা দেখার জন্য কাউকে প্রদেশ কংগ্রেস অফিসে কেন যেতে হবে? স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোট হওয়া দরকার।
মোটের উপর, ভোটের দিন ঘোষণা হলেও, নানা জটে এখনও ফেঁসে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন৷ দলের অন্দর থেকেই উঠে আসা নানা অভিযোগের নিষ্পত্তি না করেই এআইসিসি যদি সভাপতি নির্বাচন সেরে ফেলে, সেক্ষেত্রে নতুন সভাপতিকে নিশ্চিতভাবেই কাঠগড়ায় তোলা হবে৷ আইনি ঝামেলাও বিচিত্র নয়৷ টানা রক্তক্ষরণে ক্রমশই দুর্বল হয়ে যাওয়া কংগ্রেস নতুন সভাপতির নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে, এমনই আশা যখন কর্মী-সমর্থক মহলে, তখনই ওই নির্বাচন দলকে আরও রুগ্ন করে দেবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারনা৷