কলকাতা: বাংলার ১১৩৫ সালে পুজো (Pujo) শুরু হয় ভদ্রেশ্বরের বিঘাটি গ্রামের ধোপাপুকুরের চক্রবর্তীর পরিবারে। এই পরিবারে শাক্তধর্মের সাধকরা মাতৃ আরাধনা করতেন। পরবর্তীকালে তাঁরাই শিক্ষকতা ও পৌরহিত্য করেন। পুজোর পাঁচ দিন দেবীকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা। কথিত আছে, চক্রবর্তী পরিবারের দুর্গাপ্রতিমা কাঁপতে শুরু করে। তাই পুজোর ৫ দিন যাতে প্রতিমা পড়ে গিয়ে পুজোর কোনওরকম ব্যাঘাত না ঘটে সেই কারণে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় দুর্গাকে (Durga)। সেই রীতি মেনে আজও শিকল পরনো থাকে মা দুর্গাকে। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী এই পাঁচ দিন শিকল দিয়ে দেবীকে বেঁধে রাখেন পরিবারের সদস্যরা।
আনুমানিক ২৯০ বছর ধরে এখনও নিষ্ঠার সাথে পুজো হয়ে আসছে চক্রবর্তী বাড়িতে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে মাটির মন্দিরে তালপাতার ছাউনিতে পুজো হত। পরে বাঁশ ও টালির ছাউনি দেওয়া হয় মন্দিরে। বর্তমানে নতুন করে পাকা দুর্গা দালান তৈরি করে সেখানেই মায়ের পুজো হয়। এখানে সিংহ বাহিনী মা দুর্গা অসুরের সঙ্গে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিককে নিয়ে এক চালায় অধিষ্ঠিত। পুজোয় প্রতিদিন অন্য ভোগের সঙ্গে তিন দিন বলি প্রথা রয়েছে। তার মধ্যে সন্ধি পুজোয় ছাগ বলির প্রচলন রয়েছে।
আরও পড়ুন: জৌলুস নেই, তবে আজও দুর্গাপুজো চালিয়ে যাচ্ছেন হিন্দু-মুসলিম প্রজারা
পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক মন্বন্তরের সময় পুজো করতে পারছিলেন না বংশের পূর্বপুরুষেরা। পুজো প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তখনই স্বপ্নে দেবী আদেশ দেন পাশের সাঁতরা বাড়ির কলাগাছে থোর ও মান্না বাড়ি থেকে ঘি দিয়ে পুজো করতে। সেই থেকেই চলে আসছে নবমীর দিন থোরের নৈবিদ্য দিয়ে পুজো দেওয়ার রীতি। বর্তমান বংশধর পণ্ডিত নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরা পণ্ডিত ছিলেন। শিক্ষকতা ও পুজো অর্চনা করতেন। আমাদের বাড়ির দুর্গা পুজো কালিকা পুরাণ মতে হয়। আমরাই পুজো করি।সপ্তমী অষ্টমী নবমী পুজোয় অন্ন ভোগ দেওয়া হয়।অতীতে আর্থিক অভাব থাকায় পুজোয় করা যাচ্ছিল না। ফল কিনতে পারেননি আমাদের পূর্বপুরুষরা। সেই সময় পাশের বাড়ির কলা গাছের থর দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়।নবমীর দিনই দুধের পিঠা পুলি ভোগ দেওয়া হয়।”
দেখুন আরও অন্য খবর: