কলকাতা: দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023) প্রায় এসেই গেল। হাতে গুনে আর ১২ দিন বাকি মাত্র। আর মায়ের আগমনের সেই বার্তা নিয়ে এসেছে সকালের শিউলির গন্ধ। পাড়ায় পাড়ায় সেজে উঠছে মণ্ডপ। কোথাও থিম পুজোর ভিড় তো কোথাও বারোয়ারি। তবে এই বারোয়ারি পুজোর রমরমার মধ্যেও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এমন কিছু পুজো যা মনে করিয়ে দেয় কয়েকশো বছরের ঐতিহ্যের কথা। কালের নিয়মে জৌলুস কমলেও গ্রাম বাংলার বেশ কিছু জমিদার বাড়িতে এখনও পুজো হয় শতাব্দীপ্রাচীন সব রীতিনীতি মেনে। তেমনই একটি পুজো হল বারুইপুরের রামনগরে ঘোষ বাড়ির পুজো। শতাব্দী প্রাচীন বারুইপুরের এই পুজোয় (Durga Puja) এসেছিলেন স্বয়ং লর্ড ক্যানিং। বেশ কিছুক্ষণ সময়ও কাটিয়েছিলেন এখানে।
বারুইপুরের রামনগরে ঘোষ বাড়ির পুজো ৩০০ বছরের পুরনো। কালের নিয়মে এই ঘোষ বাড়ি থেকে বেশ কিছু পরিবার রামনগর বাজার সংলগ্ন একটি জঙ্গল কেটে সাফ করে তাঁরা বসতি স্থাপন করে। ১৪১ বছর ধরে সেখানে এই পুজো হয়ে আসছে। তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং ছিলেন জমিদার নরেন ঘোষের অতি ঘনিষ্ঠ। তাই ক্যানিং যাওয়ার পথে দুর্গাপুজোয় এসেছিলেন তিনি। পুজোয় কয়েক ঘন্টা সময়ও কাটিয়েছিলেন। তবে, শুধু ক্যানিং কেন, রামনগরে ঘোষ বাড়িতে গাড়ি রাখতে আসতেন বহু সাহেবরাই।
আরও পড়ুন: হাওড়ার আমতার রসপুরের রায় পরিবারের পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে ইতিহাস
রামনগরের ঘোষ বাড়ির প্রথম জমিদার ছিলেন কৈলাস ঘোষ। তাঁর নামানুসারে বাড়ির নাম ‘কৈলাস ভবন’। কৈলাসবাবুর ছেলে নরেন ঘোষ ইংরেজ আমলে ঘোষ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিদার বাড়ির পলেস্তারা খসেছে। কমেছে জাঁকজমকও। তবে পুরনো রীতি মেনে আজও হয় বারুইপুরের রামনগরে ঘোষ বাড়ির দুর্গাপুজো। সময়ের চাহিদা মেনে বন্ধ হয়েছে ছাগ বলি। তবে এখনও জমিদারী ইতিহ্য মেনে আখ, চালকুমড়ো বলি হয়। বাড়ির দুর্গা দালানে এখন চলছে প্রতিমা তৈরির জোর প্রস্তুতি। কয়েকদিন পরেই সাজ সাজ রব পড়ে যাবে জমিদার বাড়িতে। কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন ঘোষ পরিবারের সদস্যরা। সবাই পুজোর কয়েকদিন মিলিত হন ঘোষ বাড়ির দুর্গা দালানে।
বাড়ির এক প্রবীন সদস্যের কথায়, “ইংরেজ আমলে বারুইপুর থেকে ক্যানিং যাওয়ার রাস্তা ছিল মাটির। তাই ক্যানিং যাওয়ার সময় বড়লাট লর্ড ক্যানিং তাঁর ফিয়ট গাড়িটি বাড়ির পিছনে রেখে দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে ক্যানিং যেতেন। পূর্বপুরুষ নরেন ঘোষের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দুর্গাপুজোয় তিনি বাড়িতে এসে পুজো দেখেও ছিলেন। এছাড়া প্রায় সময়েই ইংরেজ সাহেবরা তাঁদের গাড়ি রাখার জন্য প্রায় আসতেন বাড়িতে।”
দেখুন আরও অন্য খবর: