হুগলি: পুজো আসে পুজো যায়, তবে প্রতি বছরই পুজোয় একটা নতুন গন্ধ পাওয়া যায়। পুজোর সঙ্গে জুড়ে থাকে অনেক স্মৃতি। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর ভেলা, শিউলির গন্ধ, সাদা কাশের বন জানান দেয় মা আসছে। বর্তমানে পুজো মানেই আলোর রোশনাই, জমজমাট মজলিশ। তবে, সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য। ২২৯ বছর ধরে একই কাঠামোয় পুজো হচ্ছে হুগলির পাঠক পরিবারে। নিয়ম মেনে আজও শূন্যে গুলি ছুড়ে সূচনা হয় পুজোর।
বর্ধমান মহারাজার জনার্দন মন্দিরের সেবায়েত থেকে জমিদারে রূপান্তরিত হয় পাঠক পরিবার। দশ হাজার বিঘা খাস জমি নিয়ে শুরু হয় তাঁদের জমিদারি। কৃষ্ণকান্ত পাঠক হয়ে যান তাল চিনান গ্রামের জমিদার। এখান থেকেই শুরু পাঠক পরিবারের জমিদারি। ক্রমশ জমিদারি বাড়তে থাকে। শুধু তাল চিনান নয়, চাঁদপুর, মহেশপুর, হিরন্নবাটি মৌজার মালিক হয়ে যান কৃষ্ণকান্ত পাঠক। শুরু হয় দুর্গাপুজো। এই বছর ২২৯ বছরে পড়ল হুগলির এই পাঠক বাড়ির দুর্গাপুজো। একসময় সন্ধিপুজোর আগে শূন্যে গুলি ছোড়া হত। এখনও তা হয়, তবে লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুকে।
আরও পড়ুন: বৈকুণ্ঠপুরের রাজবাড়ির পুজোয় বলি দেওয়া হয় চাল-কলার তৈরি মানবপুতুল
বর্ধমানের রাজার বাড়ি জনার্দনের সেবা করেই জমিদারি পেয়েছিলেন। তাই জনার্দন এই পাঠক পরিবারের কুলগুরু বা কুলদেবতা। জমিদারির পাশাপাশি জনার্দনের মন্দিরও তৈরি করে পাঠক পরিবার। এখনও বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। তবে, পশু বলি হয় না। ফলের বলি হয়। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন হয়নি।
পুজোর চারদিনই পাঠক বাড়িতে চলে জমিয়ে ভুরিভোজ। দশমীতে সবার জন্য খোলা থাকে পাঠক বাড়ির দুয়ার। থাকে লুচি, বোদে আর সিদ্ধির ব্যবস্থা। প্রতিমা বরণ, সিঁদুর খেলা, তার পর হয় নিরঞ্জন। গ্রামের মধ্যে প্রথম বিসর্জন হয় পাঠক বাড়ির প্রতিমা।
দেখুন আরও অন্য খবর: