কলকাতা: হিন্দু ধর্মে প্রায় সব দেব-দেবীরই একটি বাহন আছে। যেমন, নন্দী হল ভগবান (Lord) শিবের ষাঁড়। আবার গণেশের (God Ganesh) বাহন হল ইঁদুর। কার্তিকের (God Kartick) বাহন ময়ূর, লক্ষ্মীর (Godess Laxmi) বাহন পেঁচা। আর সরস্বতীর (Godess Saraswati) রাজহংস ও দেবী দুর্গার (Devi Durga) বাহন সিংহ। এই বাহন সেই দেবতার আরাধনায় বিশেষ মাহাত্ম্য যুক্ত করে। সামনেই বাঙালির বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023)। আমরা সকলেই জানি, দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করেন। আর মা দুর্গা বলতেই সিংহের উপর আসীন তাঁর মূর্তি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। কিন্তু কেন মা দুর্গার বাহন সিংহ, জানেন কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
পুরান মতে, মহিষাসুরকে বধ করতে যাওয়ার সময় দেবীকে সিংহ দান করেছিলেন ব্রহ্মা। সিংহ হল প্রচণ্ড শক্তি, প্রবল রাগ, আক্রমণাত্মক মনোভাব ও রাজকীয় আচরণের প্রতীক। মহিষাসুরকে বধ করতে দেবী চামুণ্ডা রূপ নিয়েছিলেন। তাই সিংহের শক্তি, রাগ ও আক্রমণের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল দেবীর রণহুংকার। দেবী দুর্গাকে আমরা আমাদের মনের সমস্ত পাপ ও অন্ধকার বিনাশ করার আহ্বান জানাই।
আরও পড়ুন: মহালয়ায় দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয় কেন? জানুন এই রীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য
সিংহের শক্তি, সাহস ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাই মিশে যায় ত্রিভূবনকে দেবীর রক্ষা করতে এগিয়ে আসার মধ্যে। মহিষাসুরের বিরুদ্ধে সহজে জয় পাননি দেবী। প্রচণ্ড যুদ্ধে তিনিও রক্তাক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি পিছু হটেননি। কারণ, তিনি সমগ্র বিশ্বকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই তাঁকে নিজের কাজ সম্পূর্ণ করতেই হবে। আর এই সাহস-নেতৃত্বের শক্তির কারণে সিংহই দেবী দুর্গার বাহন। সিংহের পিঠে মা দুর্গার অবস্থান তাঁর এই সাহস ও শক্তিকে পূর্ণতা দেয়।
অন্য একটি কথিতি কাহিনি অনুসারে, শিবকে (Lord Shiva) স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য দেবী পার্বতী ১০০০ বছর ধরে তপস্যা করেছিলেন। এই তপস্যার কারণে দেবী অন্ধকারে মিশে যান। বিয়ের পর একদিন শিব পার্বতীকে কালী বলে সম্বোধন করায় কৈলাস ত্যাগ করে ফের তপস্যায় মগ্ন হয়ে যান দেবী। সেই সময় দেবীকে শিকার করার ইচ্ছায় এক ক্ষুধার্ত সিংহ তাঁর দিকে এগোতে থাকে। কিন্তু দেবীকে তপস্যায় মগ্ন দেখে সেখানেই চুপ করে বসে পড়ে। সিংহ তখন ভাবতে থাকে, দেবী যখন তপস্যা থেকে উঠবেন। তখন তিনি তাঁদের জন্য খাবার বানাবেন। এরমধ্যে অনেক বছর কেটে যায়। কিন্তু সিংহ তার নিজের জায়গা থেকে নড়ে না।
এদিকে পার্বতীর তপস্যা সম্পন্ন হওয়ার পর গৌরবর্ণা দুর্গা আবির্ভূতা হন। সেই সঙ্গে তাঁর শরীরে মরা কোষ থেকে কালো রঙের দেবী কৌশিকী আবির্ভাব হয়। যে সিংহটি দেবীকে শিকার হিসেবে খেতে এসেছিল, তাকেই বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন দেবী। কারণ, দেবীর জন্য অনেক বছর অপেক্ষা করেছিল সে। সিংহের এই কর্মকাণ্ডের জন্য দেবী দুর্গার বাহনকে সিংহ বলে মনে করা হয়।