নয়াদিল্লি ও ইম্ফল: জ্বলন্ত মণিপুর নিয়ে নীরবতা ভঙ্গ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ, সোমবার তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্ত করার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে যেন অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গেও আলোচনা করে নেয় মণিপুরের বিজেপি সরকার। প্রসঙ্গত, রাজ্যের ৫৩ শতাংশ মানুষ হচ্ছেন মেইতিই। তাঁরা ইম্ফল উপত্যকায় বসবাস করেন। জনসংখ্যার বাকি ৪০ শতাংশ হচ্ছে নাগা এবং কুকি। যাঁরা উপত্যকাকে ঘিরে থাকা পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা।
এদিন তিনি জানান, মণিপুরের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কার্ফু জারি রয়েছে। রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান তিনি। ইন্ডিয়া টিভি এবং আজতককে এক সাক্ষাৎকারে শাহ আরও বলেন, আদালত একটি নির্দেশ দিয়েছে। এটা নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আলোচনার পরেই মণিপুর সরকার যথার্থ পদক্ষেপ নেবে। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: NSA Ajit Doval | চীনকে টাইট দিতে সৌদি, আমিরশাহি, মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে দোভাল
এদিকে, অশান্ত মণিপুর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে ইম্ফল বিমানবন্দরে ভিড় উপচে পড়েছে। ইম্ফল থেকে কলকাতা আসার বিমানের টিকিটের দাম ২২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ছুঁয়েছে। সাধারণ সময়ের ভাড়ার থেকে যা ৬ থেকে ৮ গুণ। ইম্ফল বিমানবন্দরের বাইরে কয়েক হাজার লোক কলকাতায় ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। বিমান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, তারা সব উড়ান চালু রেখেছে। বেহালার এক ব্যাঙ্ক কর্মী আতঙ্কের সুরে বললেন, আমার পরিবার আগেই ফিরে গিয়েছে। আমার নিরাপত্তা নিয়ে ওরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। আমাকে যত তাড়াতাড়ি ফিরতে বলছে। গতবছর থেকে ইম্ফলে কর্মরত ওই ব্যক্তি জানান, বিমানের ভাড়া লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কলকাতা বা গুয়াহাটি যাওয়ার সব বিমানের টিকিট শেষ। আগামী সপ্তাহে কলকাতা ফেরার টিকিট পেয়েছি।
কলকাতার বাসিন্দা আর এক বাঙালি যাত্রী বললেন, বিমানবন্দরকে দেখে মনে হবে কোনও বাস টার্মিনাস কিংবা রেল স্টেশন। মেঝেতে শুয়ে-বসে রয়েছেন যাত্রীরা। তাঁর এক সহকর্মী কোনওমতে টিকিট ম্যানেজ করে কলকাতায় ফিরে গিয়েছেন। এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া সেই সমস্ত যাত্রীর জন্য খাবার ও জলখাবারের আলাদা কাউন্টার খুলেছে। সাধারণ বাজারদরেই খাবার ও জল সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছু যাত্রীকে বিনা পয়সাতেও খাবার ও জল দেওয়া হচ্ছে। ইম্ফলের একটি হাসপাতালে কাজ করা ডাক্তার এমকে বলেন, আমাদের কেউ জানেই না মণিপুরে কী ঘটেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বিগড়ে যেতেই আমি, আমার কয়েকজন সহকর্মী ও ছাত্র চলে এসেছি। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে বলেন তিনি।
এদিকে, হিংসাদীর্ণ মণিপুর থেকে প্রায় ৬০০ মানুষ প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। উল্লেখ্য, মিজোরামে এমনিতেই মায়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে আসা প্রায় ৩০ হাজার উদ্বাস্তুতে ভরে গিয়েছে। তার উপর নতুন করে মণিপুরি ঘরছাড়াদের নিয়ে উদ্বিগ্ন মিজোরাম। এই অবস্থায় আইজল জেলার ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের জন্য আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।