ওয়েব ডেস্ক: কোনটা খুন আর কোনটা খুনের প্রচেষ্টা, এ নিয়ে গাইডলাইন (Guideline) ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। ভারতীয় ফৌজদারি আইন (IPC) অনুসরণে খুনের ক্ষেত্রে কোথায় ৩০২ এবং খুনের প্রচেষ্টার অভিযোগে ৩০৭ ধারা প্রয়োগ হবে, সেই ব্যাপারে মাইলফলক রায়ে গাইডলাইন ঘোষণা করল শীর্ষ আদালত। বিশেষত যেখানে চিকিৎসা সংক্রান্ত সংকটের জেরে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে দেরিতে।
ছত্তিশগড়ের (Chattisgarh) একটি নিম্ন আদালত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের ধারা প্রয়োগ করে। কিন্তু হাইকোর্ট (Chattisgarh High Court) তার বদলে খুনের চেষ্টার ধারা যোগ করে। প্রাথমিক আঘাতের কারণে নয়, আক্রান্ত হওয়ার নয় মাস পরে ক্ষতিগ্রস্তের মৃত্যু চিকিৎসার সংকটে হয়েছে অভিমত দিয়ে ধারা বদল করেছিল হাইকোর্ট। আক্রান্ত হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় কার্যকারণ অনুযায়ী এই ঘটনাটি খুন। হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত খারিজ করে অভিমত বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের।
আরও পড়ুন: বিধায়কের জন্য মামলার আলাদা শুনানি নয়, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
আবেদনকারী আরও তিনজনের সঙ্গে আক্রান্তের বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে। বাড়ির দোতলা থেকে তাকে ঠেলে ফেলে দেয়। পরে নীচে নেমে আহত রেখচাঁদ ভার্মাকে যথেচ্ছ মারধর করা হয়। মেরুদণ্ড-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত নিয়ে চিকিৎসাধীন আক্রান্তের শরীরে সংক্রমণের পাশাপাশি নিউমোনিয়া দেখা দেয়। পরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে চিকিৎসায় জটিলতার কারণে আক্রান্তের মৃত্যু হয় বলে অভিমত দিয়ে খুনের চেষ্টার ধারা যোগ করে হাইকোর্ট।
আঘাতের প্রকৃতি এবং আক্রান্তদের আচরণের দিকে আদালতকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। দেরিতে মৃত্যু বা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভ্রাটের দিকে নয়। কারণ প্রাথমিক আঘাতের পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তী সমস্যার সৃষ্টি। যেখানে পরবর্তীকালে দেখা দেওয়া জটিলতার কারণে দেরিতে মৃত্যু হয়েছে, সেখানে প্রাথমিক আঘাত এবং আঘাতের প্রকৃতির গুরুত্বই মুখ্য। এক্ষেত্রে দেরিতে মৃত্যুর বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে হাইকোর্ট গুরুতর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিমত-সহ হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে পাঁচ দফা গাইডলাইন ঘোষণা সুপ্রিম কোর্টের।
গাইডলাইন ১: মারাত্মক এবং বাস্তব আঘাত সমূহ- সংক্রমণের মতো জটিলতার কারণে মৃত্যু দেরিতে হলেও এমন ক্ষেত্রে বিষয়টি খুন।
গাইডলাইন ২: মেরে ফেলার মতো আঘাত- এক্ষেত্রেও মৃত্যু দেরিতে হলেও তা খুন।
গাইডলাইন ৩: চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় অপ্রাসঙ্গিক- যথাযথ চিকিৎসা হলে আক্রান্ত বেঁচে যেতে পারত, এমন যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
গাইডলাইন ৪: কার্যকারণের পরম্পরা- আঘাতের কারণে পরে জটিলতা তৈরি হলেও তার জন্য দায়ী আক্রমণকারী।
গাইডলাইন ৫: যেখানে একটি আঘাতের কারণে নয় বরং অনেকগুলি রয়েছে এবং সেগুলি খুনের উদ্দেশ্যেই, সেক্ষেত্রে অবশ্যই খুনের ধারা প্রযোজ্য।
দেখুন অন্য খবর: