হুগলি: অবসরের বয়স পেরিয়ে গিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই এখন প্রবীণ নাগরিক। ৩৪ বছর বাম শাসনের পর রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের শাসন ভার তৃণমূলের হাতে। বাম আমলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও মেলেনি চাকরি। নিয়োগের আশায় দিন গুনতে গুনতে আজ তারা প্রবীণ নাগরিক। এমন বয়সে প্রাথমিক স্কুলে চাকরির (Primary Recruitment case) নিয়োগপত্র হাতে পেলেন হুগলির ৬২ জন। আরও চারজনের নামে নিয়োগ পত্র দেওয়া হলেও তাদের মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। আর এনিয়ে রীতিমত শোরগোল পরে গিয়েছে হুগলিতে। স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতির (Recruitment Corruption Case) অভিযোগে সিবিআই তদন্ত চলছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক আধিকারীক জেলবন্দি। এমন সময় হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এই নিয়োগ পত্র নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবিপিটিএ এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। বিজেপির অভিযোগ, অকর্মণ্যেদের দিয়ে কাজ চললে এমনই হয়। যদিও এ নিয়ে শিক্ষা সংসদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সম্প্রতি হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপারসন ৬৬ জনের নিয়োগ পত্র দেন। যাদের সকলেরই বয়স ষাট পেরিয়েছে। চারজনের মৃত্যুও হয়েছে।এই নিয়োগ পত্র নিয়ে অনেকেই উল্লিখিত স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। কেউ আবার সার্কেল অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করেছেন। এই বয়সে নিয়োগপত্র পেয়ে হতচকিত সব প্রবীণ নাগরিকেরা।
নিয়োগ পত্র পেয়েছেন পান্ডুয়ার দীনবন্ধু ভট্টাচার্য।তিনি এদিন পান্ডুয়া সার্কেলে চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে বলেন, সে সময় বামফ্রন্ট সরকার ছিল। আমরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছিলাম। আমারা চাকরি পাইনি। পরে প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। এখন শিক্ষা সংসদ থেকে নিয়োগ পত্র পেয়েছি। কি করে হল জানিনা। ৭১ বছরের বৃদ্ধ অচিন্ত আদক বলেন,আমরা ৮৩ সালে মামলা করেছিলাম।এখন চাকরি দিচ্ছে কি করে দিল জানিনা। ষাট বছরে তো অবসর হয় আর এই বয়সে কি করে চাকরি করব।
আরও পড়ুন: ধূপগুড়ি মহকুমার স্বীকৃতি পেল, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এবিপিটিএর কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহন পন্ডিত বলেন, সারা ভারতবর্ষে এই ধরনের ঘটনা হয়নি। অবসরের বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর চাকরির নিয়োগ পত্র দেওয়া হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে ষাট বছর বয়স হল অবসরের। সেখানে ৬৫-৭০ বছর বয়সীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। অনেকেই আমাদের ফোন করছেন। প্রধান শিক্ষকরা জয়েন করতে দেননি।১৯৮৩ সালে শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন কিন্তু চাকরি পাননি। তারা আদালতে মামলা করেছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে তারা এফেক্ট পাবেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরই চাকরি চলে যাবে। পঞ্চাশ লাখ টাকা করে পাবে। এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। আমরা তদন্ত চাই বিষয়টার সত্য উদঘাটিত হোক।
বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল বলেন, মারা গিয়েছেন এমন লোককেও নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে।বাকিদের কারোরই চাকরির বয়স নেই।এমন একটা অকর্মণ্য সরকার চলছে যদের কাছে কোনও খবরই নেই কে মারা গেলো কে জীবিত আছে। হাইকোর্টে শিক্ষা সংসদের আইনজীবী ছিলেন সেখানে কেন আপডেট তথ্য দেওয়া হয়নি। জনগনের টাকা এই ভাবে অপচয় হচ্ছে।
হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপারসন শিল্পা নন্দী এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাননি। হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, আদালত যে রায় সেটাকে কার্যকর করা দায়িত্ব। সেই রায়কে কার্যকর করেছে দফতর। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেয় প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার। সেই মত ৬৬ জনের নিয়োগ পত্র ছাড়া হয়।যারা ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে এফেক্ট পাবেন। আদালতের নির্দেশ মত এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আরও অন্য খবর দেখুন
