কলকাতা: মুখ করা খামে এফআইআর কপি জমা দেওয়ার নির্দেশ আদালতের (Calcutta High Court)। শেখ শাজাহানের (Sheikh Shahjahan) বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দায়ের হওয়া এফআইআর (FIR) এবং দাখিল করা চার্জশিট তলব করল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ (Division Bench Chief Justice)। প্রধান বিচারপতির টি এস শিভগননমের (TS Shuvgyanam) ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ মুখবন্ধ খামে সমস্ত এফআইআর এবং চার্জশিট জমা দেবে রাজ্য। এদিন এই মামলার শুনানিতে সন্দেশখালির ঘটনায় নিয়ে আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে রাজ্য। এ দিন কলকাতা হাইকোর্ট জানায়,’সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। সন্দেশখালিতে যা ঘটেছে তার নৈতিক দায় বর্তায় গোটা জেলা পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দলের উপর। যদি কোন একটি অভিযোগও সত্যি হয় তাহলে পুলিশ এবং প্রশাসনকে তার দায় নিতে হবে।
শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে যত এফআইআর এবং চার্জশিট দাখিল হয়েছে সেগুলির কপি আমাদের দেওয়া হোক। আদালতের কাছে আবেদন ইডির আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদির। রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, আমাদের অবস্থান জানানোর জন্য একটু সময় দেওয়া হোক। বাকি মামলা তো আর্থিক দুর্নীতির নয়। তাহলে সেই এফআইআর এবং চার্জশিটের কপি ইডি নিয়ে কি করবে ? ইডির আইনজীবী বলেন, ওই অভিযোগগুলোর তদন্ত আমরা করতে চাইনা। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে সেগুলি দেখার প্রয়োজন আছে।
আরও পড়ুন: নাম না করে নিশীথকে হুঁশিয়ারি মমতার
আবেদনকারীর আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, সন্দেশখালির (Sandeshkhali) তদন্তে কমিশন গঠন করা হোক। মহিলারা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। একটা শাহজাহান জেলে আছে, কিন্তু ওখানে এখনো অনেক শাহজাহান আছে। সন্দেশখালির এই ঘটনার সঙ্গে প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকরা যুক্ত আছেন, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হোক। শেখ শাজাহানের আইনজীবী আদালতে জানান, আমার সঙ্গে অনেক গ্রামবাসী আছেন যারা আদালতে হলফনামা দাখিল করে বলতে পারেন যে এই গোটা ঘটনার সঙ্গে বহিরাগতদের যোগাযোগ আছে।
প্রধান বিচারপতি টি এস শিভগননম বলেন, আপনি যদি একই সঙ্গে শেখ শাজাহান এবং গ্রামবাসীদের হয়ে সওয়াল করেন তাহলে এটা ধরে নিতে হবে যে এই গ্রামবাসীদের সাজিয়ে এবং শিখিয়ে আনা হয়েছে। আগে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দেখুন, তারপর কথা বলবেন। ৪০-৪৫ দিনের অপর আইনকে এড়িয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। ধর্ষণের একটি অভিযোগও যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। জাতীয় রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য সবথেকে সুরক্ষিত। এই অবস্থায় যদি একজন মহিলার অভিযোগও সত্যি হয় তাহলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। শাহজাহানের আইনজীবী আমি বাঙালি, আমি চাই রাজ্যের সমস্ত মহিলা যেন সুরক্ষিত থাকে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৩৫)
আবেদনকারী অলোক শ্রীবাস্তবের আইনজীবী আদালতের নির্দেশে CBI তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, যখনই কোন ঘটনা ঘটে তখনই জনস্বার্থ মামলার বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু তারপর যখন আদালত থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে কোন নির্দেশ দেওয়া হয়, সেই সুবিধা গ্রহণের জন্য খুব কম ব্যক্তিকেই পাওয়া যায়। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলায় অনেক ধর্ষনের অভিযোগ করা হয়েছিল, CBI তদন্ত করছে। CBI এর থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান, দেখুন যে কটি ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের সামনে কুমিরের কান্না কাঁদা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই আদালতকে বিপথে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ করা হচ্ছে যে ওখানে মহিলারা এতই অসুরক্ষিত যে তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যেতে পারছেন না। যদি ২ জন অভিযোগ জানাতে যেতে পারেন তাহলে ২ হাজার জনও যেতে পারেন। যদি ২ জনের অভিযোগ গ্রহণ করা হয় তাহলে ২ হাজার জনের অভিযোগও গ্রহণ করা যেতে পারে। চলতি ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জনস্বার্থ মামলা যেন রাজনৈতিক স্বার্থের মামলা না হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ইডির দাবি, ছিল যে এলাকার মানুষ শেখ শাজাহানকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এই মামলায় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে এলাকার ৯৯ শতাংশ মানুষই শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। তাহলে কারা তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করল? ইডির বক্তব্য ঘটনার সময় শেখ শাহজাহান বাড়ির ভেতর থেকে ফোন করে কয়েকশ মানুষকে ডেকেছিলেন। যদি কেউ এলাকায় দুষ্কৃতী বলে পরিচিত থাকেন তাহলে কেউ তাকে সাহায্য করতে আসে? এত মানুষ ভয়ে তাকে সাহায্য করতে আসল? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? শেখ শাজাহানকে রক্ষা করার জন্য আমি কোন সওয়াল করছি না।
দেখুন ভিডিও