পুরুলিয়া: ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ (Mayurbhanj) থেকে পায়ে হেঁটে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির (Belpahari) কাঁকড়াঝোড়-ময়ূরঝর্ণার জঙ্গল থেকে বান্দোয়ানের পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘিনি। পাঁচদিন পার, পাঁচ পাঁচটা ফাঁদ পাতা হলেও নাগালে পাওয়া যাচ্ছে না জিনাতকে। অবশেষে গ্রামবাসী ও হুলা পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে বনবিভাগের কর্মীরা বাঘিনীকে খাঁচা বন্দি করে জঙ্গলে প্রবেশ করল তাঁরা। জঙ্গলে টোপ হিসেবে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় দুটো মহিষ, একটি ছাগল। খাঁচা যুক্ত গাড়িতে গায়ে লতাপাতা জড়িয়ে ক্যামোফ্লাজ হয়ে ঘুমপাড়ানি গুলি করা দুই শুটার। বনদফতরের রেডিও কলারের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড় এলাকায় ঝাড় ডুঙরিতে অবস্থান করছে বাঘিনী জিনাত (Tigress Zeenat)।
বনদফতরের স্পেশ্যাল টিমের পাশাপাশি বাঘিনিকে ‘অ্যারেস্ট’ করতে আনা হয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের দক্ষ অফিসারদের। আনা হয়েছে অত্যাধুনিক ড্রোন ক্যামেরাও। তবু সবাইকে যেন নাকে দড়ি গিয়ে ঘোরাচ্ছে বাঘিনি! মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে নিয়ে আসা এই বাঘিনির গলায় লাগানো রয়েছে উচ্চ ক্ষমতার রেডিওকলার। তবু কেন তাকে ধরা যাচ্ছে না? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বুধবার সেই বেলা ১১টায় শুরু হওয়া বাঘবন্দি অভিযান দুপুর থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও খাঁচায় বন্দি হয়নি বাঘিনী। জঙ্গলে খাঁচা পেতে শুকর, ছাগল মহিষের টোপ দিয়েও এখনও বন্দি করা যায়নি জিনাতকে। বাঘিনীর অবস্থান পরিবর্তন জেনে ৩টি খাঁচার পাশাপাশি আরও দুটি অতিরিক্ত খাঁচা কালকে পাতা হয়েছে। তবে ৫ দিন পরেও খাঁচা বন্দি না হওয়ায় বাঘিনীকে ধরতে এবার এই নতুন কৌশল নেওয়া হল। বুধবারের পর বৃহস্পতিবার রেডিও কলার মেশিন সঙ্গে নিয়ে হাতে মশাল, জাল সহ বাঘধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে জঙ্গলে ঢোকে বনদফতররের কর্মীরা।
বুধবার ভোর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রিয়েল টাইম মনিটরিং ব্যবস্থাপনায় ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষের হেডকোয়ার্টার থেকে জানা গিয়েছে, জিনাত গুহায় বিশ্রাম নিচ্ছে। যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ওই ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের। এই রাইকা পাহাড় যে তার বসতির আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে। খাবার, জল কোনও কিছুরই অভাব নেই। এই বাসস্থানেরও যোগ্য। এই জঙ্গলে লুকিয়া থাকার আর্দশস্থান। তাছাড়া ২৮ নভেম্বর সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে বের হওয়ার পর নেয়নি কোনও ইউটার্ন। এখানেই ডেরা বাঁধবে একেবারে নিজের মুডে চলা জিনাত? বৃহস্পতিবার বাঘধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে জঙ্গলে ঢোকে বনদফতররের কর্মীরা। কিন্তু এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে প্রতিকূলতার মুখে পড়ে সিমলিপাল ও সুন্দরবন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: ফের শিলিগুড়ি শহরে বন্ধ হতে চলেছে পানীয় জল পরিষেবা
এদিকে বাঘিনীর ভয়ে আতঙ্কিত রাহামদা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাদের প্রচুর ছাগল বাঘিনী পেটে গিয়েছে। তাই আর জঙ্গলে ছাগল গরু চরাতে যেতে পারছেন না । যদিও স্থানীয় বিধায়ক রাজীব সরেন এসে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। এর পরেই বাঘিনী আতঙ্কএর কারণে তারা আর বনদফতরের উপর ভরসা করতে পারছেন না। বনদফতর তাদেরকে ছেড়ে দিক তারা তাদের মত করে বাঘিনীকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করবে। গতকাল রাহামদা গ্রাম লাগোয়া সবরপাড়া এলাকাই বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে বলে খবর রটে যায়। তারপর থেকে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। যদিও বনদফতর থেকে গুজবে কান না দিয়ে সচেতন থাকতে বলেন এবং জঙ্গলে না যাওয়ার জন্য আবেদন করেন।
অন্য খবর দেখুন