সানফ্রান্সিসকো: সুরের জগতকে চিরকালের জন্য বিদায় জানিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে দিকশূন্যপুরের দিকে যাত্রা করেছেন জাকির হোসেন (Zakir Hussain) । আর কোনওদিন তবলায় বোল তুলবেন না তিনি। ৭৩ বছর বয়সে কিংবদন্তির চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তরা। গোটা দেশ আজ শোকস্তব্ধ।
শিল্পী সত্ত্বার পাশাপাশি জাকির হোসেন মানুষটাই ছিলেন অন্যরকম। বিয়ের করেছিলেন নিজের পছন্দের মানুষকে। মায়ের অমতেই বিয়ে করেছিলেন তিনি। কত্থক নৃত্যশিল্পী আন্তোনিয়া মিনেকোলাকে (Kathak Dancer Antonia Minnecola) বিয়ে করেন জাকির। মায়ের অমতেই আন্তোনিয়াকে নিজের হৃদয়ে স্থান দিয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন দুজনে। সেই সম্পর্ক আমৃত্যু বজায় রাখলেন শিল্পী।
সানফ্রান্সিসকোতে (San Francisco) ৭৩ বছর বয়সী তবলা বাদকের জীবনাবসান হয়েছে। তাঁর মৃত্যু বলা যেতে পারে এক যুগের অবসান। জাকির রেখে গেলেন তাঁর স্ত্রী আন্তোনিয়া মিনেকোলা এবং দুই কন্যা আনিসা কুরেশি ((Anisa Qureshi) এবং ইসাবেলা কুরেশিকে (Isabella Qureshi)।
শিল্পীর মৃত্যু নিয়ে গতকাল থেকেই সংবাদ মাধ্যম জুড়ে নানা ধরনের খবর আসতে শুরু করে। পরিবার থেকে জানানো হয়, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাঁর সুস্থতার জন্য সকলে প্রার্থনা করুন। তখনও সমাজ মাধ্যম জুড়ে শিল্পীর প্রতি উৎকন্ঠা। প্রার্থনায় রাত জেগেছে ভক্তরা। কিন্তু সকলের সেই প্রার্থনা ব্যর্থ করে এক অজানা দুনিয়ায় পাড়ি দিলেন জনপ্রিয়, কিংবদন্তি তবলা বাদক জাকির হুসেন। তাঁর মৃত্যুতে আজ শুধু একা হল না, আন্তোনিয়া, গোটা সুরের দুনিয়াই আজ যেন অভিভাবকহীন।
আরও পড়ুন: ইন্দ্রপতন! প্রয়াত জাকির হুসেন
শিল্পী ছাড়াও জাকির ছিলেন ভীষণভাবে একজন পরিবার কেন্দ্রীক মানুষ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি। একজন শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি জাকির ছিলেন একজন ভালো স্বামী, ও দুই মেয়ের কাছে একজন দায়িত্ববান বাবা। ১৯৭৯ সালে আন্তোনিয়া মিনেকোলাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। দুজনের প্রথম দেখা হয়েছিল আমেরিকা ক্যালিফোর্ণিয়ায়। আন্তোনিয়াকে এক ঝলক দেখেই হৃদয় দিয়ে ফেলেছিলেন জাকির। সেই সময়ে জাকির যথাক্রমে পেশাদার তবল বাদক। জাকির ও আন্তোনিয়া দুজনেই কাথাল প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমিতে নথিভুক্ত ছিলেন। জাকিরের বাড়ি থেকে আন্তোনিয়াকে যে মেনে নেওয়া হবে না, তাই জানিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও আন্তোনিয়াকে এড়িয়ে যেতে পারেননি তিনি।
প্রতিদিন ক্লাস শেষে আন্তোনিয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন, শুধু তাঁকে এক ঝলক দেখা ও একটু কথা বলার জন্য। বাড়ির প্রতিরোধ সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। দুজনে মিলে নিয়মিত দেখা করতে শুরু করেন। কিন্তু সেই সময় জাকির নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সংগ্রাম করছিলেন। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না। বাবা চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই বিয়ে সম্ভব নয়। কারণ জাকির এখনও বিয়ে জন্য উপযুক্ত নয়। উপার্জনশীল নয়। দীর্ঘ আট বছর ডেটিং করার করার পর ১৯৭৯ সালে দুজনে সাত পাকে বাঁধা পড়েন। জাকিরের বাড়ি থেকে আন্তোনিয়া মিনেকোলাকে বাড়ির বউমার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
বলি তারকার সিমি গারেওয়ালের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো’ তে এসে নিজের মুখে বিয়ের কথা জানিয়েছিলেন আন্তোনিয়া। জাকির হুসেন জানিয়েছিলেন, পরিবারের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ভালোবাসার জন্য ধর্ম, পরিবার সব কিছুর অমতে গিয়ে তিনি তাঁর পছন্দের মানুষকে নিয়ে ঘর বেঁধেছিলেন। মা তাঁদের বিয়ে মেনে নেননি, পরিবার থেকে বেশ কয়েক বছর দূরে ছিলেন তাঁরা। তবে পরে অবশ্য তাঁর বাবা তাঁদের এই বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন।
গত দু সপ্তাহ ধরে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর লড়াই চালিয়ে গেলেন জাকির। সোমবার একেবারে থেমে গেল সেই সংগ্রাম। এদিন সকালেই শিল্পীর পরিবারের তরফ থেকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিস থেকে উদ্ভূত নানান জটিলতার কারণে শিল্পীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে শেষের কটা দিন তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল।
শিল্পী জাকির হুসেনের মৃত্যু এক যুগের অবসান। তবে সৃষ্টি অবিনশ্বর, তার মৃত্যু হয় না।
দেখুন অন্য খবর: