গতবারের আই এস এল চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফ সি-র সঙ্গে শুক্রবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে মুখোমুখি হবে এস সি ইস্ট বেঙ্গল। গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই এবারও খুব ভালভাবে শুরু করেছিল। কিন্তু মাঝ পথে তারা খেই হারিয়ে ফেলেছে। গত তিনটি ম্যাচে আট পয়েন্ট নষ্ট করে মুম্বই এখন লিগ টেবলে দু নম্বরে নেমে গেছে। এ রকম একটা টিমের বিরুদ্ধে নিজেরা ভাল খেলে কি এবারের লিগের প্রথম জয়ের মুখ দেখবে ইস্ট বেঙ্গল। নাকি সেই আবার পুরনো সেই গোল খাওয়া ও পয়েন্ট নষ্টের প্রদর্শনী।
নতুন কোচ রেনেডি সিংয়ের আমলে মাত্র একটাই ম্যাচ খেলেছে ইস্ট বেঙ্গল। সেই ম্যাচে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে বিরতির আগে এগিয়ে থেকেও পয়েন্ত নষ্ট করতে হয়েছে আত্মঘাতী গোল খেয়ে। রেনেডির হাতে বিদেশি ফুটবলারের সংখ্যা কম। তাঁর এক নম্বর স্ট্রাইকার আন্তোনিও পেরোসেভিচ পাঁচ ম্যাচ সাসপেন্ড। মোটে দুটো ম্যাচ গেছে তাঁর। আরও তিনটে ম্যাচ পরে তাঁকে পাওয়া যাবে। মুম্বই ম্যাচে তাঁকে পাওয়ার আশা নেই। ডুই ডিফেন্ডার টমিস্লাভ মার্সেলা এবং ফ্রানিও পার্সেরও চোট। তাঁরা কবে ফিট হয়ে মাঠে ফিরতে পারবেন তা অজানা। বাকি তিন বিদেশির মধ্যে আমির দেরভিসেভিচ কিংবা ড্যারেন ডেভলিন সিডোয়েলও চোটের কবলে। তাই বেঙ্গালুরু ম্যাচে রেনেডি মাত্র দুজন বিদেশিকে নিয়ে শুরু করেছিলেন। এদের মধ্যে টমিস্লাভ মার্সেলা চোট পেয়ে বসে যান ৬২ মিনিটে। শুধু সবেধন নীলমণি হিসেবে বিদেশি হিসেবে মাঠে ছিলেন ড্যানিয়েল চিমা।
এই পরিস্থিতিতে রেনেডির ভরসা তাঁর ভারতীয় ফুটবলাররা। এদের মধ্যে বেঙ্গালুরু ম্যাচে আদিল শেখ ম্যাচের সেরা হওয়ায় রেনেডির বুকে বল এসেছে। আগের কোচের আমলে আদিল জার্সিই পেতেন না। কিন্তু রেনেডি তাঁকে শুরু থেকেই নামিয়েছেন এবং আদিল কোচকে মর্যাদা দিয়েছেন ম্যাচের সেরা হয়ে। সেন্ট্রাল বঅক আদিলের পাশে লেফট ব্যাক হীরা মণ্ডল বেশ ভাল খেলছেন। আটটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তাঁর। এর মধ্যে একটি ম্যাচে সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন। আরেক ডিফেন্ডার অঙ্কিত মুখার্জি চোটের জন্য এ মরসুমে মাঠেই নামতে পারেননি। কিন্তু বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে মার্সৈলা চোট পাওয়ায় তাঁকে নামানো হয়। এবং তিনি বেশ ভালই খেলেন। ডান দিকে জয়নার লরেন্সো মন্দ নন। কিন্তু আসল সমস্যা তো মাঝ মাঠে। রেনেডি নিজে মাঝ মাঠৈর ফুটবলার ছিলেন। জানেন টিমকে জিততে হলে এই জায়গাটা হল আসল। কিন্তু তাঁর তো বিদেশি নেই। তাই ভারতীয়দের উপর নির্ভর করেছিলেন তিনি। এবং এ ক্ষেত্রে তাঁকে নির্ভর করতে হয় পাহাড়ি ফুটবলারদের উপরে। লুয়াং, নামতে, নাওরেম সিং এবং সেম্বই হাওকিপকে নামিয়ে তিনি প্রায় ম্যাচ জিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ডিফেন্সইভ স্ক্রিন সৌরভ দাস আত্মঘাতী গোল করে সর্বনাশ করে দেন। মুম্বই ম্যাচেই রেনেডি মাঝ মাঠে পাহাড়িদের উপর নির্ভর করবেন বলে ধরে নেওয়া যায়। সামনে সেই দ্যানিয়েল চিমা। যাঁর থাকা না থাকা সমান।
আগের তিনটি ম্যাচে আট পয়েন্ট নষ্ট করা মুম্বই কিন্তু সহজে ছাড়বে না ইস্ট বেঙ্গলকে। মোহনবাগানকে তারা ৫-১ গোলে হারিয়েছিল। সেই ফর্ম এখন তাদের নেই। কিন্তু প্লেয়ারগুলো তো আছে। ডিফেন্সে মোর্তাদা ফল, মাঝ মাঠে আহমেদ জাহু এবং কাসিনোর পাশে ফরোয়ার্ড ইগর আঙ্গুলো যে কোনও মুহুর্তে ম্যাচের রঙ বদলে দিতে পারেন। এদেরকে রুখতে ইস্ট বেঙ্গল গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে একটু বেশি ভাল খেলতে হবে। অরিন্দম খারাপ খেলছেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন ভুল করে ফেলছেন যাতে দলকে খুবই ঝামেলায় পড়তে হয়। মুম্বইয়ের বিদেশিদের পাশে স্বদেশিরাও মন্দ নন। বিপিন সিং, বিক্রমপ্রতাপ সিং, রাহুল ভেকে , বিনীত রাই, রাওলিন বর্জেশ, আসিফ খানরা বেশ ভাল। এদের বিরুদ্ধে অন্তত একটা পয়েন্ট পেতে হলে ইস্ট বেঙ্গলকে অনেক ভাল খেলতে হবে। রেনেডিদের কাজটা তাই কঠিন, খুব কঠিন।