বেঙ্গালুরু: বিরাট কোহলিরা যখন ব্যাট করছিলেন তখনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। তবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শেষ দুটো ম্যাচ দেখার পর ভবিষ্যদ্বাণী করার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবু মনে হয়েছিল, চিন্নাস্বামীর এই পিচ একেবারেই পাটা। পেসারদের সাহায্য তো করেই না, স্পিনারদেরও না। বল পিচে পড়ে থমকে যাচ্ছে, অথবা বাউন্স অসমান এমন কিছুই নয়। এ ধরনের উইকেটে ব্যাটার ভুল না করলে তাকে আউট করা মুশকিল। এ হল বোলারদের গিলোটিন কিংবা হাঁড়িকাঠ, যেটাই বলুন, তাতে চাপানোর মঞ্চ।
এরকম পিচে ২১২ করেও নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না বলেই মনে হয়েছিল। বিশেষ করে আগের সব ম্যাচেই শেষ পাঁচ ওভারে গাদা গাদা রান দিয়েছে আরসিবি বোলাররা। তাই যে দলে কে এল রাহুল, কাইল মেয়ার্স, মার্কাস স্টয়নিস, নিকোলাস পুরানরা আছেন, সেই লখনউ সুপার জায়ান্টস সহজেই আত্মসমর্পণ করবে না তা স্পষ্ট।
ম্যাক্সওয়েলের ইনিংস দেখুন। ২৯ বলে ৫৯, তিনটে চার, ছ’টা ছয়। পিচে স্পিন থাকলে ম্যাড ম্যাক্স এই তাণ্ডব চালাতে পারতেন না। স্বয়ং বিরাট কোহলিও লেগ স্পিন এবং বাঁ হাতি অফস্পিনারদের নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন। আজ ক্রুনাল পাণ্ডিয়া, রবি বিষ্ণোইদের ধোপার বাড়ি পাঠালেন। অবশ্য ‘বুড়ো’ অমিত মিশ্রকে মাঠ পার করতে গিয়ে আউট হলেন। কিন্তু এখানে গুড লেন্থ বলকে শর্ট ভেবে পুল করার ভুল করেছিলেন কোহলি। আগেই বলেছি, এ এমন পিচ যেখানে ব্যাটার ভুল না করলে আউট হওয়া মুশকিল।
আরও পড়ুন: Steve Smith | ‘কেউ যদি দলে নেয়…!’ ফের আইপিএল খেলার ইচ্ছেপ্রকাশ স্টিভ স্মিথের
লখনউয়ের ২৩ রানে তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল। চিন্নাস্বামী তখন উল্লাসে কাঁপছে। পাল্টা মার শুরু করলেন মার্কাস স্টয়নিস। ৩০ বলে ৬৫ করলেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল ছ’টা চার পাঁচটা ছয়। একটু বেশি ঝুঁকি নিতে গিয়ে কর্ণ শর্মার বলে ডিপ কভারে ক্যাচ আউট হলেন। আরসিবি সমর্থকরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কারণ তখনও জিততে হলে ১০০ রানের মতো বাকি। কিন্তু তখন নামলেন নিকোলাস পুরান। ১৯ বলে ৬২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেললেন তিনি। গতকাল বিকেলের রিঙ্কু সিংয়ের ইনিংসের সমতুল্য হয়তো বলা যায় না। কিন্তু স্ট্রাইক রেট কত জানেন? ৩২৬.৩২! যখন আউট হলেন তখন লখনউয়ের ১৮ বলে জিততে চাই ২৪ রান।
কিন্তু শেষ দুই ওভারের এই নাটকের কথা কে ভেবেছিল? পার্নেলকে চার মারার পরের বলেই স্কুপ করে ছয় মেরেছিলেন বাদোনি। কিন্তু ফলো থ্রুতে হিট উইকেট হয়ে গেলেন তিনি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য চাই পাঁচ। ক্রিজে দুই পেস বোলার ব্যাট হাতে, জয়দেব উনাদকাট এবং মার্ক উড। চিন্নাস্বামীর দর্শক আরসিবি আরসিবি করে আকাশ ফাটিয়ে দিচ্ছে। শেষ ওভারে হর্ষল প্যাটেলের প্রথম বলে এক রান, দ্বিতীয় বলে উড বোল্ড। তৃতীয় বলে দুই রান নিলেন বিষ্ণোই। জিততে চাই দুই রান। চতুর্থ বলে এক রান, দুই দলের রান সমান হল। দুই বলে এক রান চাই জেতার জন্য। আবার নাটক। মাঠ পার করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হলেন উনাদকাট। এবার ১ বলে চাই ১ রান।
হর্ষলের মাথায় ছিল, নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা বিষ্ণোই আগেভাগে ক্রিজ ছেড়ে বেরোতে পারেন। তাই বল ডেলিভারি করার জায়গায় মাঁকড়ীয় আউট করার চেষ্টা করলেন কিন্তু ফস্কালেন। আবার বল ছুড়ে উইকেটে মারলেন। কিন্তু ওভাবে নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা ব্যাটারকে আউট করা নিয়ম বিরুদ্ধ। আবার বল করতে হল, ব্যাটে লাগাতে পারলেন না আভেশ খান, প্রাণপণ দৌড় দিলেন বিষ্ণোই, তাঁকে রান আউট করতেই পারলেই ম্যাচ সুপার ওভারে যেত। কিন্তু বল ঠিক করে ধরতেই পারলেন না উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিক। লখনউ জিতল ১ উইকেটে।
গতকাল রিঙ্কুর ফিনিশিং ছিল মহাকাব্যিক। কিন্তু এই ম্যাচের অন্তিম পর্যায় ছিল মহানাটকীয়। শেকসপিয়ার, গ্রোটস্কি থেকে বাদল সরকার, কারও পক্ষে এমন চিত্রনাট্য লেখা সম্ভব?