লিভারপুল–২ রিয়াল মাদ্রিদ–৫
(দানি নুনেজ, মহম্মদ সালাহ) (ভিনিসিয়াস জুনিয়র–২, এদের মিলিতাও, করিম বেঞ্জামা-২)
সকাল দেখে সাধারণত বাকি দিনটা কেমন যাবে বেশ ভাল বোঝা যায়। আবার যায়ও না। যেমন হল মঙ্গলবার রাতে লিভারপুলের আনফিল্ড স্টেডিয়ামে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রিকোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচে মাত্র ১৪ মিনিটের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লিভারপুল। কিন্তু সেই ম্যচেই যে শেষ পর্যন্ত গত তারা ২-৫ গোলে হেরে যাবে তা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। এমন কি বিরতির সময় যে ম্যাচের ফল ছিল ২-২ সেই ম্যাচই যে দাপটে জিতে যাবে তা আর কে ভাভতে পেরেছিল। নাকি ভাবা সম্ভব? কিন্তু রিয়াল কোচ কার্লোস আনসোলত্তি এবং তাঁর ছেলেরা ভেবেছিলেন। তাই চোদ্দ বারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা প্রথম লেগের পরেই কার্যত কোয়ার্টার ফাইনালে। গত বছর এই দুটো দলই ফাইনাল খেলেছিল প্যারিসে। রিয়াল মাদ্রিদ ১-০ গোলে জিতেছিল। গোল করেছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার সেই ভিনিসিয়াস জুনিয়য়রই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। তাঁর জোড়া গোলেই ম্যাচে সমতা ফেরাল রিয়াল মাদ্রিদ। বিরতির আগেই। আর তারপর সংহারক হয়ে দেখা দিলেন করিম বেঞ্জামা। তিনিও করলেন জোড়া গোল। তাদের মাঝে একটা গোল করলেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার এদের মিলিতাও। সব মিলিয়ে রিয়ালের পঞ্চ বানে বিদ্ধ হল লিভারপুল, যারা ছয় বারের চ্যাম্পিয়ন।
লিভারপুলের সময়টা এ বছর একদমই ভাল যাচ্ছে না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গত বারের রানার্সরা এখন আট নম্বরে। ওদিকে লা লিগায় রিয়ালও এক নম্বরে থাকা বার্সেলোনার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যেন রিয়ালের উপর কী যেন ভর করে। না হলে চার মিনিটে প্রথম গোল খাওয়ার পর ১৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা খেয়ে গেল রিয়াল। প্রথম গোলটার সময় মহম্মদ সালার পাস থেকে ডান পায়ের ব্যাক হিলে গোল করে গেলেন দানি নুনেজ। থিওবা কুর্তোয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন শুধু। আর দশ মিনিট পরে তিনি যখন আবার গোল খেলেন সেটা একেবারে নিজের দোযে। একটা ব্যাক পাস তাঁর কাছে এসেছিল। কুর্তোয়া বলটা ধরতে যাবেন। পা দিয়ে ধরলেনও। বল তাঁর পায়ের কাছে ড্রপ খাচ্ছে। কিন্তু তিনি একটু পরেও গেলেন। বলটা তাঁর কাছ থেকে একটু দূরে চলে গেল। সামনেই ছিলেন তক্কে তক্কে থাকা মহম্মদ সালাহ। আলতো পুশে ২-০ করে ফেললেন। তখন মনে হচ্ছিল লিভারপুল বুঝি গোলের মালা পরাবে রিয়ালকে।
কিন্তু টিমটার নাম তো রিয়াল। যারা ভাঙার আগে ভাঙে না। তাই সাত মিনিটের মধ্যে একটা গোল করে ফেললেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। বক্সের ঠিক ঢোকার মুখে তিনি ডান পায়ের জোরালো শট নিলেন যা এত কোণাকুণি ছিল যে আলিসন বেকার ধরতেই পারেননি। ২১ মিনিটের ওই গোলটার পর মিনিটি পনেরো যেতে না যেতেই আবার গোল খেয়ে গেলেন বেকার। এবার দোষটা তাঁর নিজের। ব্যাক পাস থেকে বল পেয়ে ক্লিয়ার করতে গিয়ে মেরে দিলেন ভিনিসিয়াসের গায়েই। বল অনেক উঁচুতে উঠৈ বাঁক খেয়ে ঢুকে গেল গোলে। ম্যাচ হয়ে গেল ২-২। এবং বিরতির পর ঝড় তুলল রিয়াল। যাতে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল লিভারপুল।
৪৭ মিনিটে বক্সের ডান দিকে গোল লাইনের কাছাকাছি ফ্রি কিক পেল রিয়াল। মারতে গেলেন লুকা মদ্রিচ। বক্সে তখন এক গাদা লোক। কিন্তু মদ্রিচের শট ঠিক খুঁজে নিল মিলিতাওকে। তাঁর আলতো হেডে এগিয়ে গেল রিয়াল। কিন্তু তখনও বেঞ্জামা ম্যাজিক বাকি। অনেক কারণে এই মরসুম তাঁর ভাল যাচ্ছে না। বিশ্ব কাপেও খেলতে পারেননি চোটের জন্য। তারপর অভিমানে ফ্রান্সের জার্সি পরে খেলা থেকেও অবসর নিয়েছেন। লা লিগাতেও তিনি নিয়মিত নন। কিন্তু ফিরে আসার জন্য এই ম্যাচটাকেই বেছে নিলেন রিয়াল অধিনায়ক। ৫৫ মিনিটে মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে খানিকটা দৌড়ে বক্সের বাইরে থেকে তিনি যে শটটি নিলেন তা লিভারপুলের একজন ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদলে গোলে ঢুকে গেল। বারো মিনিট পর বেঞ্জামা আবার গোল করলেন। এবার তিনজনকে কাটিয়ে, এমনকি গোলকিপারকে কাটিয়েও গোল করলেন গত বছরের ব্যালন দ্য ওর জয়ী ফরাসি স্ট্রাইকার। সব মিলিয়ে প্রথম লেগেই কোয়ার্টার ফাইনাল যাওয়া নিশ্চিত করল রিয়াল। ১৫ মার্চ তাদের ঘরের মাঠে ফিরতি লেগের খেলা এখন তাই শুধু নিয়ম রক্ষার।
মঙ্গলরাতে অন্য প্রিকোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে তাদেরকেই ২-০ গোলে হারাল নাপোলি। ইতালির দলটির হয়ে ৪০ মিনিটে গোল করলেন ভি ওসিমেন। ৬৫ মিনিটে ডি লোরেঞ্জো ২-০ করেন। এর আগে ৫৮ মিনিটে ফ্রাঙ্কফুর্টের কোলো মুয়ানি লাল কার্ড দেখায় নাপোলির কাজটা সহজ হয়ে যায়।