রামপুরহাট: রামপুরহাট হিংসায় আনারুল হোসেনের ১৪ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। রামপুরহাট মহ্কুমা আদালতের অতিরিক্ত মুখ্যদায়রা বিচারক সৌভিক দে শুক্রবার এই আদেশ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে ১১টি জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিস। খুন ছাড়াও বেআইনি জমায়েত, খুনের চেষ্টা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারা, লুটতরাজ, রাতের বেলায় ঘরে আগুন লাগানো ইত্যাদি ধারায় মামলা করা হয়েছে। বিকেল ৫টা নাগাদ আদালত থেকে বের করে আনারুলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিস।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী আনারুলকে গ্রেফতার করার কথা বলেন। সেই নির্দেশের আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আনারুলকে গ্রেফতার করে পুলিস। রাতে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতিকে তারাপীঠ থানায় রাখা হয়। শুক্রবার সকালেই সিটের আধিকারিকরা রামপুরহাট থানায় যান।
গ্রেফতারের পর থেকেই রাতভর জেরা করা হয় একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্লক সভাপতিকে।সকালে অন্য পুলিস আধিকারিকরাও তাকে জেরা করেন। শুক্রবার রামপুরহাট মহকুমা আদালত চত্বরে আনারুল হোসেন বলেন, ‘দিদির নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেছি। আমি নির্দোষ।’ যদিও বৃহস্পতিবার পুলিস জানিয়েছিল, তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আনারুলকে।
সাংবাদিকরা তাঁর কাছে জানতে চান, বগটুইয়ের ঘটনায় তাঁকে কি ফাঁসানো হয়েছে? পুলিস প্রায় টেনে হিঁচড়ে আনারুলকে আদালতের লকআপে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘আমি নির্দোষ।’ নিজেকে জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল কর্মী বলে এদিন আদালত চত্বরে দাবি করেন দল থেকে সদ্য বিতাড়িত ব্লক সভাপতি।
আনারুল হোসেনকে কোর্টে তোলার কথা থাকায় রামপুরহাট মহকুমা আদালত চত্বরে এদিন ছিল কঠোর পুলিসি ব্যবস্থা। এছাড়াও অত্যুৎসাহী জনতা ভিড় জমায়। আদালতে আসা অন্য বিচারপ্রার্থীর আত্মীয়স্বজন ও সাক্ষীদের সামলাতে পুলিসকে বেগ পেতে হয়। রামপুরহাট ছাড়াও অন্যান্য থানা থেকেও বাহিনী আনতে হয় জেলা পুলিসকে।
সোমবার রাতে বীরভূমের বগটুই মোড়ে খুন হন তৃণমূলের পঞ্চায়েত উপপ্রধান ভাদু সেখ৷ তাঁর মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বগটুই গ্রামে তাণ্ডব চালায় একদল যুবক৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি বাড়িতে৷ সেই আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় ৭ জনের৷ নিহতদের অধিকাংশ মহিলা ও শিশু৷ এই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই চরমে ওঠে রাজনৈতিক চাপানউতোর৷
আরও পড়ুন: Rampurhat Violence: রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে সিবিআইয়ের ফরেন্সিক দল
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে একসুরে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করছে বিরোধীরা৷ ঘটনার নিন্দায় বুধবার মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বগটুইয়ের ঘটনাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে মন্তব্য করেন৷ পাশাপাশি তদন্তে রাজ্যকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন৷ ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম থেকেই ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগে সরব তৃণমূল৷
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রামপুরহাট হিংসার তদন্ত করছিল সিট। কিন্তু শুক্রবার রামপুরহাট হত্যাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। টানা দু’দিন সওয়াল পর্ব চলার পর এদিন রামপুরহাটের বগটুইয়ে হত্যালীলার মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালত এদিন বলেছে, রামপুরহাটের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং হৃদয়গ্রাহী। জনমানসে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে এই ঘটনা। মানুষের মনে আস্থা জোগাতে উপযুক্ত তদন্তের প্রয়োজন, যাতে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হয়। তাই আদালত জনমানসে এর প্রভাবের কথা মাথায় রেখে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল।
আরও পড়ুন: Rampurhat Violence NHRC: রামপুরহাট হিংসায় রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের