মুর্শিদাবাদ: সম্পত্তি পাওয়ার পর বৃদ্ধ বাবা-মাকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করল ছেলে । বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় প্রবীণ দম্পতি। সেই মামলারই শুনানিতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা (Justice Rajasekhar Mantha)ছেলেকে বলেন, আপনি ছেলে না ইঁদুর? বাবা-মার প্রতি অত্যাচার করা কি আপনার কাজ? বৃদ্ধ বাবা-মাকে (Old Parents) কীভাবে রাখতে হয়, জানেন না? ফের অত্যাচার করলে আপনাকেই বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হবে।
প্রবীণ বিশ্বনাথ ঘোষ মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার অন্তর্গত পাকুরিয়ার বাসিন্দা। মিষ্টির দোকানে কাজ করে দোতলা বাড়ি তৈরি করেন। বিশ্বনাথের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটি বিবাহিত। বড় ছেলে অন্যত্র থাকেন। ওই বাড়ির দোতলায় থাকেন ছোট ছেলে ও তার পরিবার। একতলায় থাকতেন বিশ্বনাথ ও তাঁর স্ত্রী। ২০১৫ সালের ১৭ অগাস্ট ছোট ছেলে বিদেন্দু ঘোষের নামে জীবনসত্তা দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তির অংশ লিখে দেন বিশ্বনাথ ।
বুধবার আদালতে বিশ্বনাথের আইনজীবী মোনালি বিশ্বাস জানান, বিদেন্দুকে জীবনসত্তা দলিল দেওয়ার পর থেকেই বাবা- মায়ের উপর তিনি অত্যাচার শুরু করেন। তাঁদের বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়। ২০২২ সালে হাইকোর্টের (High Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিশ্বনাথ ও তাঁর স্ত্রী। গত বছর ১৭ অগাস্ট বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য নির্দেশ জারি করেছিলেন, বিশ্বনাথকে তাঁর বাড়িতে ঢুকতে দিতে হবে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বাড়িতে ঢুকতে পারেননি বিশ্বনাথ ও তাঁর স্ত্রী।
আরও পড়ুন : Justice Rajashekhar Mantha: বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কট মামলায় ভিডিও ফুটেজ জমা দেওয়ার নির্দেশ
হাইকোর্টের (High Court) নির্দেশে বিশ্বনাথ বাড়িতে ঢুকতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়, ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। এতে ওই বৃদ্ধ আঘাত পান। স্বামীকে বাঁচাতে গেলে বৃদ্ধাকেও মারধর করা হয়। এরপর চিকিৎসার জন্য বিশ্বনাথকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । তিনি সুস্থ হয়ে বহরমপুর থানায় অভিযোগ করেন। তাতেও ফল না হওয়ায় অবশেষে বিশ্বনাথ ও তাঁর স্ত্রী একমাত্র মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
এরপর সিনিয়র সিটিজেন আইন অনুযায়ী এসডিওর দ্বারস্থ হন বিশ্বনাথ। সেখানে তাঁর আবেদন, জীবনসত্তা দলিলটি বাতিল করা হোক। কিন্তু এসডিও সেই আবেদনে কর্ণপাত না করে বিশ্বনাথকে বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দেন।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বিদেন্দুকে সতর্ক করে বলেন, এইভাবে অত্যাচার করলে আদালত আপনার গিফট ডিড বাতিল করতে বাধ্য হবে।
বিদেন্দু ঘোষের আইনজীবী দাবি করেন, সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। বাবা-মার উপর কোনও অত্যাচার হয়নি।
এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, শুক্রবার বেলা ১১ টায় বিশ্বনাথ ও তাঁর স্ত্রী বহরমপুর থানায় যাবেন। থানার পুলিশ দম্পতিকে বাড়ির এক তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে আসবে। দোতলায় বসবাসকারী ছোট ছেলে বিদেন্দু বা তাঁর পরিবারের অন্য কেউ একতলায় প্রবেশ করতে পারবেন না। ওই দম্পতি ফের যদি ছেলের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ করে, তাহলে বহরমপুর থানার পুলিশ ছেলে ও তাঁর পরিবারকে ওই বাড়ি থেকে বার করে দেবে। সে ক্ষেত্রে গিফট ডিড কোনও ভাবেই প্রাধান্য পাবে না।
আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে আইনজীবী মহল। তাঁদের মতে, হাইকোর্টের এই ধরনের রায়ের ফলে আগামী দিনে বৃদ্ধ বাবা- মায়ের উপর সন্তানের অত্যাচার কিছুটা হলেও কমবে।