কলকাতা: ‘স্কুলে ১০০ শতাংশ উপস্থিতি’র নির্দেশের বিরোধিতা করে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলা সোমবার খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একটি বেসরকারি স্কুলের উল্লেখ করে মামলার আবেদনে বলা হয়েছিল, ১০০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছে স্কুল। আবেদনকারীর প্রশ্ন ছিল, ১৫ বছর নীচে ছাত্রছাত্রীদের কী হবে? তাদের তো এখনও ভ্যাকসিন শুরুই হয়নি। তাই সব পড়ুয়ার জন্য স্কুলে সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ সমীচীন নয়। ভার্চুয়াল ক্লাসের ব্যবস্থাও রাখা হোক। এই জনস্বার্থ মামলাটি হাইকোর্ট গ্রহণ করেছিল। আবেদনের উপর সোমবার ছিল প্রথম শুনানি। সওয়াল-জবাব শেষে মামলাটি খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। আবেদনের সঙ্গে উপযুক্ত নথি ও প্রমাণ দাখিল করতে না-পারার কারণেই মামলাটি খারিজ করা হয়েছে। তবে, আদালত এ-ও জানিয়েছে, মামলাকারী উপযুক্ত নথি দিয়ে পরবর্তীকালে ফের আবেদন জানাতে পারবে।
গৌরব পুরকায়স্থের আবেদনের প্রেক্ষিতে এদিন মামলাটি আদালতে উঠলে, রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ‘এই আবেদনের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকরা যদি কোনও প্রস্তাব দেন, সরকারের সেই দরজা সবসময় খোলা আছে। স্কুল ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। শনিবার স্কুলের সরস্বতী পুজায় ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ লক্ষ্য করা গিয়েছে।’
কেন এই মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই, তা নিয়ে সওয়াল করতে গিয়ে এজি বলেন, এখন দৈনিক করোনা আক্রান্তের হার ৩.৩৭ শতাংশে নেমে এসেছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। টিকাকরণেরও উল্লেখ করেন তিনি। জানান, ৩ জানুয়ারি থেকে ১৫ থেকে ১৮ বছরের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করে তিনি জানান, ২০২৩-এর জানুয়ারির মধ্যে উল্লিখিত বয়সসীমায় টিকাকরণ শেষ হয়ে যাবে।
মামলাকারীর আইনজীবী ঋজু ঘোষাল পালটা প্রশ্ন করেন, অনেক ছাত্র আছে যারা স্কুলে যাচ্ছে। সময়ের মাপকাঠির বাইরে থাকায় (১৫ অনূর্ধ্ব), তারা এখন ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। তাদের কী হবে? এই অবস্থার মধ্যে আবার অনেক স্কুল ১০০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছে। ফলে, ১৫ অনূর্ধ্ব পড়ুয়াদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কী হবে?
আরও পড়ুন: Calcutta HC: বিদ্যুৎ সংযোগ কাটায় বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন রায় হাইকোর্টের, দিতে হবে ক্ষতিপূরণ
মামলার আবেদনকারীর কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, এমন কত ছাত্র আছে? এই সওয়াল-জবাবের সময়েই এজি জানান, মামলাকারী কোনও অভিভাবক নন। তিনি বীরভূম জেলার মানুষ। নিউটাউনের বিশেষ একটি স্কুলের বিজ্ঞপ্তির কথা বলা হচ্ছে।
অ্যাডভোকেট জেনারেল আরও বলেন, ‘যে আবেদন করা হয়েছে, তা খুব বিপজ্জনক। ভার্চুয়াল ক্লাসের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবা জেলাগুলোতে খুব একটা ভালো নয়। সেইসঙ্গে তিনি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমেও শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। আদালতকে তিনি জানান, এখনও কোনও স্কুলের তরফে আপত্তি আসেনি। স্কুল খোলার বিরোধিতা করে তারা আদালতের দ্বারস্থও হয়নি।
আরও পড়ুন: WB Civic Polls: টিকিট দেয়নি দল, নির্দল হিসেবে লড়বেন সোনারপুরের তৃণমূল নেতা
এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, ‘একদল আবেদনকারী বলছেন, স্কুল খুলতে। পরদিন আর এক দল আবেদনকারী বলছেন, স্কুল বন্ধ করতে হবে। এই অবস্থায় সরকার কী করবে?’
এ দিকে, অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র এই মামলায় যুক্ত হতে চায় না। কারণ, কেন্দ্র স্কুল খোলার পক্ষে।
এই সওয়াল-জবাব শেষে আবেদনকারীর তরফে উপযুক্ত নথির অভাবে মামলাটি খারিজে করে দেয় হাইকোর্ট।